রাজ্য বিজেপি-তে বাবুল-দিলীপ সঙ্ঘাতের কথা সকলের জানা। ফাইল চিত্র
বাবুল সুপ্রিয় ‘সক্রিয় রাজনীতি’ ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু তাঁর সঙ্গে দিলীপ ঘোষের ‘যুদ্ধ’ থামেনি। সরাসরি না হলেও এখন তা জারি আছে ‘ছায়াযুদ্ধ’ হিসেবে। বুধবার আনন্দবাজার অনলাইনে বাবুলের বক্তব্য যা আরও একবার উস্কে দিয়েছে। বৃহস্পতিবার দিলীপ নিজে ওই বিষয়ে মন্তব্য এড়িয়ে গিয়েছেন। কিন্তু ময়দানে নেমেছেন তাঁর ঘনিষ্ঠেরা। যাঁরা বলছেন, বিজেপি-র ভবিষ্যৎ নিয়ে ‘রাজনৈতিক জ্ঞান’ বাবুলের মুখে মানায় না। তাঁদের কথায়, ‘‘উনি কবে রাজনীতি করেছেন যে এখন রাজনীতি আর করবেন না বলছেন?’’
বুধবার আনন্দবাজার অনলাইনে বাবুল চোখা ভাষায় বিজেপি নেতাদের একাংশের সমালোচনা করেছিলেন। সেই নেতাদের মধ্যে ছিলেন দিলীপও। দিলীপ নিজেও বাবুলের ওই আক্রমণ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। কিন্তু তিনি নিজে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। বাবুলের বুধবারের বক্তব্য প্রসঙ্গে দিলীপবৃহস্পতিবার আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘কী কী বলেছেন আমি পড়েছি। সে সব নিয়ে আমার কিছুই বলার নেই।’’
তবে দিলীপ নিজে কিছু না বলতে চাইলেও বাবুলের অধিকাংশ সমালোচনারই জবাব দিয়েছে দিলীপের ঘনিষ্ঠ মহল। বিধানসভা নির্বাচনে বাবুলকে বিজেপি প্রার্থী করেছিল তাঁর লোকসভা আসন আসানসোল থেকে অনেক দূরের টালিগঞ্জে। বাবুল সেখানে হেরে গিয়েছেন। সেই সঙ্গে তাঁর লোকসভা এলাকার অন্তর্গত সাতটি বিধানসভা আসনের মধ্যে বিজেপি জিতেছে শুধু কুলটি আর আসানসোল দক্ষিণে। বাবুলের দাবি, তাঁর কথা শুনে প্রার্থী ঠিক হয়েছিল মাত্র তিনটি আসনে। তার মধ্যেই দু’টিতে জয় পেয়েছে দল। যা নিয়ে দিলীপ শিবিরের বক্তব্য, ‘‘প্রার্থী মনোনয়নটাই শেষ কথা নয়। উনি তো ভাল প্রার্থী। তা হলে টালিগঞ্জে হারলেন কেন? নিজের লোকসভা এলাকায় তিনি কি সঠিক দায়িত্ব পালন করেছেন? করলে দলের এমন পরিণতি হত না। মানুষের সঙ্গে মিশেছেন মন্ত্রী হিসেবে।নেতা হতে পারেননি কর্মীদের কাছেও। মণ্ডল স্তরের কমিটি ঠিক করতে চেয়েও ওঁর কাছে তালিকা চেয়ে পাওয়া যায়নি।’’দিলীপের ঘনিষ্ঠ এক রাজ্যনেতার বক্তব্য, ‘‘বাবুলদা চিরকাল টুইট-রাজনীতি করেছেন। মাঠে নেমে রাজনীতি কাকে বলে উনি জানেন না। ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসের সময় তো ওঁকে কর্মীদের পাশে দেখা যায়নি। কেউ একটা ছবিও দেখাতে পারবে না! উনি আমাদের দলের একমাত্র সাংসদ, যাঁর নামে লোকসভা এলাকায় কর্মীরাই নিরুদ্দেশের পোস্টার লাগিয়েছে। যিনি রাজনীতিটাই করেননি, তাঁর মুখে রাজনীতি ছাড়ার কথা শুনলে ঘোড়াও হাসবে।’’
বাবুল আগামিদিনে বিজেপি-র ‘রক্ষাকর্তা’ হিসেবে শুভেন্দু অধিকারীর নাম উল্লেখ করেছেন।যা নিয়ে প্রত্যাশিত ভাবেই দিলীপ শিবির ক্ষুব্ধ। এক নেতার প্রশ্ন, ‘‘রাজনীতি ছেড়ে কি উনি এ বার রাজনৈতিক জ্যোতিষী হতে চাইছেন। উনি গান গাইতে পারেন ভাল। ভবিষ্যৎ বক্তা হিসেবে তো কোনও পরিচয় শোনা যায়নি। কে বিজেপি-কে যোগ্য নেতৃত্ব দেবেন, সেটা বিজেপি-ই ঠিক করে নেবে। ওঁকে ভাবতে হবে না!’’
তবে বাবুলের একটি অভিযোগ ‘অনেকাংশে সত্যি’ বলে মেনে নিয়েছে দিলীপ-শিবির। জেলার নেতাদের পাশাপাশি বিভিন্ন বৈঠকে তাঁর কথাও যে শোনা হয়নি, তা উল্লেখ করে বাবুল বুধবার বলেছিলেন, ‘‘আমি প্যাশনেটলি, হৃদয় দিয়ে দলটা করেছি ২০১৪ সাল থেকে। আমার চরম বিরোধীরাও আমার আন্তরিকতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন নিশ্চয়ই তুলবে না। অন্য সকলের মতো আমারও একটা মতামত আছে। কিন্তু যখনই দলের বৃহত্তর স্বার্থে আমি সেটা প্রকাশ করেছি, তখনই অপ্রিয় হয়েছি। কারণ, আমি অপ্রিয় সত্যি কথা বলেছি এবং সেটা পিছনে না বলে দলের বৈঠকগুলোতে স্পষ্ট করে বলেছি।’’ বাবুলের এই বক্তব্যের আংশিক সমর্থন মিলেছে দিলীপ শিবির থেকে। ওই শিবিরের এক নেতার কথায়, ‘‘দলের বৈঠকে জেলা নেতৃত্বের পাশাপাশি রাজ্য নেতাদের অনেকের কথাই শোনা হয়নি বলে যে অভিযোগ, তা অনেকাংশে সত্যি। কিন্তু সেটা বাবুলদা করতে পারেন না। এটা হাস্যকর অভিযোগ। কারণ, উনি তো কোনও বৈঠকেই থাকতেন না! মোদী হাওয়ায় ভোটে জিতেই মন্ত্রী হয়েছেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে সুবিধা ভোগ করা, দামি হোটেলে থাকা ছাড়া দলের কোনও কাজেই তাঁকে কোনও দিন পাওয়া যায়নি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy