Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Babul Supriyo

BJP: হতাশায় ভুগছিলেন মুকুল, শুভেন্দুর যোগ্য নেতৃত্বই বিজেপি-কে ফেরাবে, বাবুল উবাচ

বিধানসভা নির্বাচনের পর্বে দলে মুকুল রায়ের মধ্যে হতাশা কাজ করছিল বলেও দাবি করেছেন বাবুল। জানিয়েছেন, দলের বৈঠকে চুপ থাকতেন মুকুল।

রাজনীতি থেকে দূরেই থাকতে চান বাবুল সুপ্রিয়।

রাজনীতি থেকে দূরেই থাকতে চান বাবুল সুপ্রিয়। ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০২১ ১৭:৫২
Share: Save:

বিধানসভা নির্বাচন পর্বে তাঁর কথা তো নয়ই, জেলা নেতৃত্বের কথাও শোনেননি বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতারা।তারই পরিণাম দেখা গিয়েছে ভোটের ফলে। এমনই মনে করছেন আপাতত সক্রিয় রাজনীতি থেকে দূরের বাসিন্দা বিজেপি-র সাংসদ তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়।

বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতা শিবপ্রকাশ রাজ্যে এসে দলের সাংগঠনিক জেলার নেতৃত্বের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন। বিজেপি সূত্রের খবর, সেই বৈঠকগুলিতে কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) শিবপ্রকাশ বলেছেন, ভোট পর্বে রাজ্য নেতাদের একাংশ যখন বলতেন, ‘উত্তরপ্রদেশ মডেলে’ পশ্চিমবঙ্গে ভোট জেতা যাবে না, তখন তাঁরা তা মানতে চাননি। কিন্তু ভোটের ফলাফলের পরে তাঁরা এটা বুঝতে পেরেছেন যে, উত্তরপ্রদেশ আর পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি এক নয়। এ রাজ্যের ভোটে জিততে হলে এখানকার উপযোগী রণকৌশল তৈরি করা দরকার।

বুধবার এই প্রসঙ্গে দলের সাংসদ বাবুলকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘কেন হঠাৎ উত্তরপ্রদেশ মডেল বলে উনি দলকে ছোট করলেন জানি না। তার চেয়ে যদি বিনম্র ভাবে মেনে নিতেন যে, বাংলায় যাঁরা মনপ্রাণ দিয়ে বিজেপি করেন, তাঁদের উপর নিজেদের মত চালিয়ে দেওয়ার মডেল ভুল ছিল, তা হলে সেটা অনেক যুক্তিপূর্ণ হত।’’ উত্তরপ্রদেশ নিয়ে বাবুলের আরও বক্তব্য, ‘‘গেরুয়াধারী হলেও যোগীজি (উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ) ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’ করে চলেছেন এবং উনি আবার আগামী নির্বাচনে সকলের বিশ্বাস অর্জন করবেন। এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। কাজেই এটা বলা মানে ওঁকে অপমান করা। আমি এটা মোটেই মানছি না। আসলে যা বললাম, আসল ঘটনা ছিল একেবারেই অন্য জায়গায়। এঁরা আমাদের বা জেলা নেতৃত্বের কোনও কথা শোনেননি।’’

শোনেননি তো বটেই, বাবুল আরও বলছেন, ‘‘ওঁরা কাউকে বলার সুযোগও দেননি। নিজেরাই বৈঠকে বক্তৃতা করতেন। জেলার নেতারা তো দূর অস্ত, যে আসানসোলকে আমি হাতের তালুর মতো চিনি, সেই আসানসোলেও তিনটি কেন্দ্র ছাড়া অন্য কোথাও আমার কথা শোনেননি ওঁরা।’’ একই সঙ্গে বাবুল দাবি করেন, জেলার যে তিনটি আসনে তাঁর সঙ্গে কথা বলে প্রার্থী বাছা হয়, তার মধ্যেই দু’টিতে বিজেপি জিতেছে। তৃণমূল থেকে জিতেন্দ্র তিওয়ারিকে বিজেপি-তে নেওয়ার প্রসঙ্গও আবার টেনে এনেছেন বাবুল। বলেছেন, ‘‘ওঁর বিজেপি-তে আসার ব্যাপারে আমি প্রথমে বাধা দিয়েছিলাম। সেটা আসানসোলের লড়াই এবং নীচুতলার কর্মীদের কথা ভেবে। কিন্তু এলাকার এত বড় নেতা যখন আমাদের সঙ্গে এলেন, তখন তিনি নিজে যেখানে লড়তে চেয়েছিলেন, সেটাই মানা উচিত ছিল। আমিও ওঁর সঙ্গে ভীষণ ভাবে একমত ছিলাম। কিন্তু আমাদের দু’জনের মতামতকেই অগ্রাহ্য করা হয়েছিল। বড় বৈঠকগুলিতে জেলার নেতারা চুপচাপ বসে থাকতেন। তাঁদেরও গুরুত্বপূর্ণ সব মতামত ছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতাদের মুখের উপর কিছু বলার সাহস ছিল না। তাঁরা চাপা অসন্তোষ নিয়ে বাড়ি ফিরতেন। তার ফল ভাল হওয়ার কথা নয়। হয়ওনি।’’

শিবপ্রকাশের সঙ্গে বৈঠকে জেলার নেতাদের একাংশ যা বলেছেন, সেগুলি কি সত্যি? বাবুলের জবাব, ‘‘ওটাই ধ্রুব সত্য। আরও একটা কথা বলি। যখন বিজেপি কর্মীদের উপরে সন্ত্রাস হচ্ছে, তখন মুকুলদার (মুকুল রায়) তৃণমূলে যোগ দেওয়াটা খুবই নিষ্ঠুর একটা সিদ্ধান্ত।উনি কোন দলে যাবেন, সেটা ওঁর নিজস্ব ব্যাপার। কিন্তু আরও কয়েকদিন পরে গেলে মনে হয় না ওঁর কোনও বিরাট ক্ষতি হত। তবে এটাও ধ্রুব সত্য যে, কেন্দ্রীয় নেতারা এত অভিজ্ঞ একজন নেতাকে ঠিক ভাবে ব্যবহার করেননি। আর তাই কেউ কিছু শুনছে না আর শুনবেও না— এই হতাশা থেকে মুকুলদা একদম চুপ করে দিয়েছিলেন। বিভিন্ন বৈঠকে যোগ দিলেও প্রায় কোনও কথাই বলতেন না।’’

তিনি নিজেও কিছু বলে লাভ যে পাননি, সে কথাও খোলাখুলি বলেছেন বাবুল। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কথায়, ‘‘আমি প্যাশনেটলি, হৃদয় দিয়ে দলটা করেছি ২০১৪ সাল থেকে। আমার চরম বিরোধীরাও আমার আন্তরিকতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন নিশ্চয়ই তুলবে না। অন্য সকলের মতো আমারও একটা মতামত আছে। কিন্তু যখনই দলের বৃহত্তর স্বার্থে আমি সেটা প্রকাশ করেছি, তখনই অপ্রিয় হয়েছি। কারণ, আমি অপ্রিয় সত্যি কথা বলেছি এবং সেটা পিছনে না বলে দলের বৈঠকগুলোতে স্পষ্ট করে বলেছি।’’

বাবুল-মুকুল-কৈলাস।

বাবুল-মুকুল-কৈলাস। ফাইল চিত্র

কৈলাস বিজয়বর্গীয়, শিবপ্রকাশ এবং দিলীপ ঘোষকে ‘অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী’ (ওভার কনফিডেন্ট) বলেও আখ্যা দিয়েছেন বাবুল। তাঁর কথায়, ‘‘ওভার কনফিডেন্ট কৈলাসজি, শিবপ্রকাশজি, দিলীপদা কারও কথা তো শোনেনইনি। আমরা কয়েকজন (বাবুল যদিও কারও নাম করতে চাননি। জানিয়েছেন, তাঁরা কারা তা সহজেই অনুমেয়), যারা পার্টি-পলিটিক্স না করে যখন দলের স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছি, তখন হয় তা হেসে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। নয়তো চূড়ান্ত ঔদ্ধত্যের সঙ্গে অগ্রাহ্য করা হয়েছে।’’ এর পরেই অবশ্য বাবুল আশা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘‘আশা করব, আগামী দিনে দলবদলু নেতা আর দুষ্কৃতীদের কথার থেকে যে বিজেপি-অন্তপ্রাণ এবং প্রচুর সুযোগ্য কর্মী বা নেতা আছেন, তাঁদের প্রকৃত সম্মান আর গুরুত্ব দেওয়া হবে।’’

বিজেপি-র সাংসদ থাকলেও বাবুলকে দলের কোনও বৈঠকে দেখা যাছে না। তা নিয়ে বিভ্রান্তিও ছড়াচ্ছে। বাবুল অবশ্য এ বিষয়ে সপাট। তিনি জানিয়েছেন, রাজনীতি বা দলের কোনও মঞ্চে তিনি থাকবেন না। তাঁর কথায়, ‘‘রাজনীতির কোনও মঞ্চে এখন যেমন আমাকে দেখা যাচ্ছে না, তেমনই আগামিদিনেও দেখতে পাওয়া যাবে না। বিধানসভা ভোটের আগে থেকেই আমার সঙ্গে বঙ্গ বিজেপি-র শীর্ষ কিছু নেতা বা বাংলার দায়িত্বে-থাকা কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে মতের অমিল হচ্ছিল। তাঁদের অনেকের বক্তব্যের সঙ্গে নিজেকে একেবারেই মেলাতে পারছিলাম না। তাই প্রকাশ্যে তাঁদের বক্তব্য সমর্থনও করতে পারছিলাম না। এতে মনোমালিন্য বাড়ছিল। মন্ত্রিত্ব কেড়ে নেওয়ায় এটাও জলের মতো পরিষ্কার হয়ে গেল যে, আদর্শের এই ‘অমিল’টা দল ভাল ভাবে নিচ্ছে না। তাই বর্তমান নেতৃত্বের সঙ্গে দ্বন্দ্বে না গিয়ে পাকাপাকি ভাবে সরে গেলাম। তবে আসানসোলের দলীয় কর্মীদের জন্য আমার দরজা সবসময় খোলা। সাংসদের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করার সময় আমি তাদের পাশেই চাইব। যদি না রাজ্য বিজেপি-র বড় নেতারা আমার সরকারি কর্মসূচিগুলিতেও দলীয় কর্মীদের না থাকার নির্দেশ দেন!’’

কিন্তু রাজ্যের একজন সাংসদ হিসেবে নির্বাচন-পরবর্তী ‘সন্ত্রাস এবং হিংসা’ নিয়ে তাঁর বক্তব্য কী? বাবুলের জবাব, ‘‘এটা অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই যে, আমাদের কর্মীদের আমরা রক্ষা করতে পারিনি। কিন্তু এটা সম্পূর্ণ রাজ্য সরকার এবং তাদের দলদাস পুলিশের কারণ ঘটেছে। তারা প্রতিহিংসার রাজনীতি করেছে। সন্ত্রাস বন্ধ করার কোনও রাজনৈতিক সদিচ্ছা তাদের ছিল না।’’ বাবুলের আরও দাবি, ‘‘২ মে ভোটের ফলাফল প্রকাশের পর ২৮ মে পর্যন্ত আমি মাটি কামড়ে বাংলায় পড়েছিলাম। বারবার টালিগঞ্জ এবং আসানসোল গিয়েছি। আসানসোলে যাওয়ার পথে লোকে ঘিরে ধরে ৩৫৬ ধারা জারির কথা বলেছেন। কিন্তু ভোটের পরেই এ ভাবে কোনও নির্বাচিত সরকারের উপরে ৩৫৬ ধারা চাপিয়ে দেওয়া যায় না। সেটা কংগ্রেসের সংস্কৃতি হতে পারে। বিজেপি-র সংস্কৃতি সেটা নয়। অমিত শাহ-জে পি নড্ডা বাংলার জন্য প্রচুর সময় দিয়েছিলেন। বারবার এসেছিলেন। কিন্তু তা বলে সদ্য নির্বাচিত সরকারের উপর ৩৫৬ ধারা জারি করা যায় না!’’

অতঃপর বাংলায় বিজেপি-র ভবিষ্যৎ কী? বাবুলের মতে, ‘ভবিষ্যৎ’ শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর কথায়, ‘‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, শুভেন্দু অধিকারীর সুযোগ্য নেতৃত্বে দল ঘুরে দাঁড়াবে। আর যেহেতু অন্য দল থেকে-আসা নেতাদের নিয়ে বললাম, তাই এটা বলতেই হবে যে, মুড়ি-মিছরি একদর করলে অন্যায় হবে। শুভেন্দুর সঙ্গে আরও অনেক সুযোগসন্ধানী নেতা তৃণমূল থেকে বিজেপি-তে এসেছিলেন। যাঁরা ভোটের পরেই নিজেদের মানসিকতা লজ্জাজনক ভাবে মানুষের সামনে প্রকট করে দিয়েছেন। তাঁদের থেকে শুভেন্দু শুধু আলাদাই নন, উনি একজন প্রকৃত জননেতা। উনি তা প্রমাণ করে দিয়েছেন। উনি বিজেপি-র সম্পদ। আশা করি, সকলের সব রকমের সহযোগিতা উনি পাবেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Babul Supriyo BJP Suvendu Adhikari mukul roy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy