Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
TMC

দল বদল কেন, নানা দাবি নানা জনের

প্রায় সব ক্ষেত্রেই বিভিন্ন দলের জেলা-নেতারা দাবি করেছেন, যাঁরা দল বদলালেন, তাঁদের জার্সি বদলে সমস্যা হবে না।

শনিবার অমিত শাহের সঙ্গে মেদিনীপুরের মঞ্চে শুভেন্দু অধিকারী এবং রাজ্য বিজেপির নেতৃত্ব। ছবি: পিটিআই।

শনিবার অমিত শাহের সঙ্গে মেদিনীপুরের মঞ্চে শুভেন্দু অধিকারী এবং রাজ্য বিজেপির নেতৃত্ব। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব প্রতিবেদন 
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২০ ০৩:৪১
Share: Save:

শুভেন্দু (অধিকারী)-সমীকরণ খাটে অনেকের ক্ষেত্রেই। তবে সেটাই দল বদলের এক মাত্র কারণ নয়, দাবি শনিবার বিজেপিতে যাওয়া সাংসদ, বিধায়ক, পরিচিত নেতাদের। কারও ক্ষেত্রে লোকসভা ভোটে বিজেপির ভাল ফল ‘অনুঘটক’ হয়েছে বলে দাবি। তৃণমূল থেকে যাঁরা গিয়েছেন, দলের অন্দরে ভোট-কুশলী প্রশান্ত কিশোরের (পিকে) দলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, তাঁদের অনেকে। কেউ সরব ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব’ নিয়ে। তবে অভিযোগ উড়িয়ে প্রায় সব ক্ষেত্রেই বিভিন্ন দলের জেলা-নেতারা দাবি করেছেন, যাঁরা দল বদলালেন, তাঁদের জার্সি বদলে সমস্যা হবে না।

মেদিনীপুরে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সভায় গিয়ে এ দিন বিজেপিতে যোগ দেন বর্ধমান পূর্বের তৃণমূল সাংসদ সুনীল মণ্ডল। বুধবারই সুনীলবাবুর কাঁকসার বাড়িতে বৈঠক করেন শুভেন্দু। সুনীলবাবুর দাবি ছিল, ‘‘পিকে-র দলের ভাড়াটে সৈন্য দিয়ে যুদ্ধ জয় সম্ভব নয়।’’ এ দিন অভিযোগ করেন, তাঁকে ভোটে হারাতে চেয়েছিলেন জেলা নেতৃত্বের একাংশ। পিকে-র দল এবং তৃণমূল নিয়ে ঠিক একই রকম অভিযোগ ব্যারাকপুরের বিধায়ক শীলভদ্র দত্তের। সে কথা দলীয় নেতৃত্বকে একাধিক বার জানিয়েছেন বলে দাবি তাঁর। অভিযোগ, সমস্যা মেটেনি।

কালনার তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডুকে সম্প্রতি দলের শহর সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে এলাকায় তাঁর বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা হিসেবে পরিচিত দেবপ্রসাদ বাগকে ওই পদে বসানো হয়। তার পর থেকে বিশ্বজিৎবাবুকে দলের কর্মসূচিতে দেখা যাচ্ছিল না। বৃহস্পতিবার কলকাতায় তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। এ দিন বিশ্বজিৎবাবুর দাবি, ওই বৈঠকে দলের স্থানীয় নেতৃত্বে কিছু রদবদলের দাবি জানিয়েছিলেন। তা বিবেচনার আশ্বাসে দলত্যাগের সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখেন। কিন্তু শুক্রবার রাতে জানতে পারেন, সে ‘বিবেচনা’ ফলপ্রসূ হওয়ার আগেই তিনি দলে থাকছেন বলে এক তৃণমূল সাংসদ দাবি করেছেন। তাতেই বিরক্ত হয়ে তিনি শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। একই জেলার মন্তেশ্বরের বিধায়ক সৈকত পাঁজা আগে দলের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ক্ষোভ জানাননি। বিজেপিতে গিয়ে আঙুল তুলেছেন তৃণমূলের গোষ্ঠী রাজনীতির সমস্যার দিকে।

আরও যাঁরা বিজেপিতে

পুরসভা এবং জেলা পরিষদের সদস্য

• দেবাশিস জানা, মেয়র পারিষদ, বিধাননগর পুরসভা, উত্তর ২৪ পরগনা

• চন্দ্রশেখর বন্দ্যোপাধ্যায়, বুরো চেয়ারম্যান, দুর্গাপুর পুরসভা

• প্রসূন বসু, প্রাক্তন চেয়ারম্যান,

মেদিনীপুর পুরসভা
• অমূল্য মাইতি, জেলা পরিষদের সদস্য,

পশ্চিম মেদিনীপুর

• রমাপ্রসাদ গিরি, জেলা পরিষদের সদস্য,

পশ্চিম মেদিনীপুর

• কাবেরী চট্টোপাধ্যায়, সহকারী অধ্যক্ষ,

মেদিনীপুর জেলা পরিষদ

• আকাশদীপ সিংহ, গড়বেতা-৩ পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারম্যান

• রঞ্জন বৈদ্য, সোনারপুর জেলা পরিষদের সদস্য, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা

• দেব মহাপাত্র , কাকদ্বীপ জেলা পরিষদের সদস্য

• ইন্দ্রজিৎ দত্ত, চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল, চুঁচুড়া, হুগলি

• মৃণ্ময় মুখোপাধ্যায়, চেয়ারম্যান (লিগ্যাল সেল), হুগলি জেলা তৃণমূল

•সমীরণ মিত্র, অধ্যক্ষ, হুগলি জেলা পরিষদ

• দেবাশিস মুখোপাধ্যায়, ভাইস চেয়ারম্যান, ডানকুনি পুরসভা, হুগলি

শুভেন্দু ছাড়া, পূর্ব মেদিনীপুরের তিন বিধায়ক এ দিন বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। তাঁরা হলেন— উত্তর কাঁথির তৃণমূল বিধায়ক বনশ্রী মাইতি, হলদিয়ার সিপিএম বিধায়ক তাপসী মণ্ডল ও তমলুকের সিপিআই বিধায়ক অশোক দিন্দা। বনশ্রীর বক্তব্য, ‘‘শুভেন্দুকে দেখেই রাজনীতিতে এসেছি। তাঁর পথেই চলব।’’ বাম-বিধায়ক তাপসীর দাবি, ‘‘দলে থেকে কাজ করতে পারছিলাম না।’’ আর সবংয়ের নেতা অমূল্য মাইতির দাবি তাঁর দলত্যাগের প্রধান কারণ, মানস ভুঁইয়ার সঙ্গে ‘বিরোধ’।

২০১৬-র বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে সিপিএমের টিকিটে জেতেন গাজলের বিধায়ক দীপালি বিশ্বাস। সে বছরই শুভেন্দুর হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দেন তিনি ও তাঁর স্বামী রঞ্জিত। এ দিন দম্পতি বিজেপিতে গেলেন।

গত লোকসভা ভোটে ডুয়ার্সের আদিবাসী প্রধান এলাকা এবং চা-বলয়ে বিজেপির প্রভাব বাড়তে দেখে নাগরাকাটার তৃণমূল বিধায়ক শুক্রা মুন্ডা এবং আলিপুরদুয়ারের প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ দশরথ তিরকে দল বদলেছেন বলে স্থানীয় সূত্রের দাবি। তবে এই দুই নেতা দলে আসছেন জেনে এ দিন ডুয়ার্সের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ দেখান বিজেপি কর্মীরা। লোকসভা ভোটের ফলের নিরিখে পুরুলিয়া পুরসভা-সহ জেলার অধিকাংশ এলাকায় এগিয়ে বিজেপি। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা, ফের বিধায়ক হওয়ার আশা থেকেই দল বদলালেন সুদীপ মুখোপাধ্যায়, তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে গিয়ে বিধায়ক হওয়া নেতা। শুভেন্দু-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত সুদীপ বলেছেন, ‘‘মানুষ এখন বিজেপিকে চাইছে।’’

তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে দলে থাকা পুরশুড়ার প্রাক্তন বিধায়ক পারভেজ রহমান গত বিধানসভা ভোটে টিকিট না-পাওয়ায় ক্ষুব্ধ ছিলেন। বিজেপিতে গিয়ে তাঁর দাবি, ‘‘শুভেন্দুর সঙ্গে মেলামেশা করি বলে তৃণমূল ডাকে না। মানুষের জন্য কাজ করতে মঞ্চ দরকার। তাই বিজেপিতে যোগ দিলাম।’’

রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের প্রাক্তন পুরপ্রধান শ্যাম মুখোপাধ্যায় সম্প্রতি পুরপ্রশাসকের পদ হারান। শ্যামবাবুর দাবি, মানুষের কাজ করার সুযোগ না পেয়েই তৃণমূল ছেড়েছেন।

পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা তৃণমূল থেকে সদ্য বহিষ্কৃত কণিষ্ক পন্ডা, ধীরেন্দ্রনাথ পাত্র এ দিন বিজেপিতে গিয়েছেন। পশ্চিম থেকে দল বদলেছেন জেলা পরিষদ সদস্য অমূল্য মাইতি, রমাপ্রসাদ গিরি, তপন দত্ত, কাবেরী চট্টোপাধ্যায়, মেদিনীপুরের প্রাক্তন পুরপ্রধান প্রণব বসু, তৃণমূলের কিষান সেলের নেতা দুলাল মণ্ডলের মতো শুভেন্দু-ঘনিষ্ঠেরা।

পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা তৃণমূল সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, “কারও মনে হয়েছে এখানে যা নেওয়ার তা পূরণ হয়েছে, এ বার ওখানে যাব। এতে দলের ক্ষতি হবে না।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy