Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

হাওড়ায় নিজের ফ্ল্যাটে ব্যবসায়ীর ক্ষতবিক্ষত দেহ

অনেক বার ডাকাডাকিতেও ঘরের দরজা খুলছিলেন না। বন্ধ ঘরের ভিতরেই ক্রমাগত বেজে যাচ্ছিল মোবাইল। কিন্তু ফ্ল্যাটের নীচে মোটরবাইকটি নেই। এমন ঘটনা দেখে সন্দেহ হয়েছিল ব্যবসায়ী সঞ্জয় অগ্রবালের প্রতিবেশীদের। তাঁরাই থানায় খবর দেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৪ ০১:২৬
Share: Save:

অনেক বার ডাকাডাকিতেও ঘরের দরজা খুলছিলেন না। বন্ধ ঘরের ভিতরেই ক্রমাগত বেজে যাচ্ছিল মোবাইল। কিন্তু ফ্ল্যাটের নীচে মোটরবাইকটি নেই। এমন ঘটনা দেখে সন্দেহ হয়েছিল ব্যবসায়ী সঞ্জয় অগ্রবালের প্রতিবেশীদের। তাঁরাই থানায় খবর দেন। বন্ধ ঘরের দরজা ভেঙে দেখা যায় সারা ঘর ভেসে যাচ্ছে রক্তে। সোফার পাশে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন ওই যুবক।

শুক্রবার হাওড়ার শালিমার এলাকার একটি ফ্ল্যাটে এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ায়। পুলিশের অনুমান, একাধিক দুষ্কৃতী মিলে বছর আটত্রিশের ওই যুবককে খুন করেছে। হাওড়া সিটি পুলিশের কমিশনার অজেয় রানাডে বলেন, “সমস্ত সম্ভাব্য দিকই খতিয়ে দেখে তদন্ত করা হচ্ছে।”

পুলিশ সূত্রের খবর, একটি সোফার পাশে হাফ প্যান্ট ও স্যান্ডো গেঞ্জি পরা অবস্থায় পড়েছিল সঞ্জয়ের দেহ। গলায়, বুকে ও পেটে আঘাতের দাগ। এক পাশে পড়ে রয়েছে তাঁর মোবাইল। ঘরের দু’টি আলমারিও খোলা। রান্নাঘরে গ্যাস ওভেনে বসানো রুটি পুড়ে গিয়েছে। দুধভর্তি পাত্রও বসানো রয়েছে ওভেনের উপর। সোফার নীচ থেকে একটি স্ক্রু-ড্রাইভার উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ছাড়াও মিলেছে তিন জোড়া চটি। সারা ঘরে রক্তমাখা পায়ের একাধিক ছাপ ও বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করেছেন ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। খুনের পরে দুষ্কৃতীরা শৌচাগারে গিয়ে হাত-পাও ধুয়েছে বলে তদন্তে নেমে জেনেছে পুলিশ। যাওয়ার সময়ে দেওয়ালে ঝোলানো মোটরবাইকটির চাবিটি তারা নিয়ে চলে যায়।

পুলিশ সূত্রের খবর, শালিমার স্টেশনের পাশে একটি চারতলা ফ্ল্যাটের দোতলায় থাকতেন সঞ্জয়। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে তাঁর একটি সংস্থা রয়েছে। সেই সংস্থা রেল-বিমানের টিকিট কাটা ও ব্যাঙ্ক থেকে ঋ

ণ পাইয়ে দেওয়ার কাজ করে। ১৫ দিন আগে ওই যুবকের বাবা হরিপ্রসাদবাবু ও মা পুষ্পাদেবী ইনদওরে বড় মেয়ের বাড়ি গিয়েছেন।

পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার সঞ্জয় সাতটা নাগাদই অফিস থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। সঞ্জয়ের প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, সে দিন রাত সওয়া ৮টা নাগাদ ওই ব্যবসায়ীর ঘর থেকে এক বার চেঁচামেচির আওয়াজ শোনা গিয়েছিল। তবে ওই দিন রাত সাড়ে ৮টার পরে আর কেউ সঞ্জয়কে ফোনে পাননি। বারবারই ফোন বেজে গিয়েছে বলে পুলিশকে জানিয়েছেন তাঁর আত্মীয়েরা। পুলিশ জানায়, ওই রাতে ওই যুবকের দিদি, বাবা প্রত্যেকেই বারবার ফোন করেছেন, পাননি। এ দিন সকালেও ফোনে না পেয়ে তাঁরা অন্য আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের বিষয়টি জানান। ওই ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা জানান, সকালে দুধওয়ালা এসে বহুক্ষণ ধরে কলিং বেল বাজালেও সঞ্জয় দরজা খোলেননি। পরে কাজের লোক এলেও একই অবস্থা হয়। তখন এক প্রতিবেশী স্থানীয় থানায় খবর দেন।

বেলা ১২টা নাগাদ পুলিশ যায় ওই ফ্ল্যাটে। সেই সময়েই সেখানে পৌঁছন সঞ্জয়ের এক বোন রাধা সংহাই ও জামাইবাবু ওমপ্রকাশ সংহাই। ওমপ্রকাশবাবু বলেন, “সঞ্জয়ের ছোট বোন ফোন করে আমাদের বিষয়টি জানায়। কী হয়েছে তা জানতে এসে দেখি পুলিশ পৌঁছে গিয়েছে।”

প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, দুষ্কৃতীরা সঞ্জয়ের পূর্বপরিচিত। ব্যবসা সংক্রান্ত শত্রুতা কিংবা পুরনো কোনও ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরেই তাঁকে খুন করা হয়েছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE