সুপ্রিম কোর্টে পরবর্তী শুনানি অস্বস্তি বৃদ্ধি করতে পারে বোসের? গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
সার্চ কমিটির সুপারিশ মুখ্যমন্ত্রীর হাত ঘুরে গত বছরই পৌঁছে গিয়েছে রাজভবনে। কিন্তু রাজ্যের ১৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নামে রাজভবনের সিলমোহর পড়ছে না। গত ৮ জানুয়ারির শুনানিতে তিন সপ্তাহ সময় বেঁধে দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। শুক্রবার সেই সময়সীমা শেষ হচ্ছে। কিন্তু সন্ধ্যা পর্যন্ত সিলমোহর পড়েনি উপাচার্য-তালিকায়। তা হলে আদালত অবমাননার দায়ে পড়তে চলেছেন রাজ্যপাল তথা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য সিভি আনন্দ বোস? আইনজ্ঞেরা বলছেন, পরবর্তী শুনানিতে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে তেমন সওয়াল করা হলে ‘অস্বস্তিতে’ পড়তে হতে পারে বোসকে। রাজভবনের তরফে অবশ্য শুক্রবারেও দাবি করা হয়েছে, আদালতের নির্দেশ কোথাও অমান্য করা হচ্ছে না।
উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে রাজ্যপাল এবং মুখ্যমন্ত্রীর মতবিরোধের জের সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে গত বছরে। দেশের সর্বোচ্চ আদালত ২০২৪-এর জুলাই মাসে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি উদয় উমেশ ললিতের নেতৃত্বে ‘সার্চ-কাম-সিলেকশন কমিটি’ গড়ে দেয়। আদালতের নির্দেশ ছিল, ওই কমিটি উপাচার্যদের নামের বাছাই তালিকা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠাবে। মুখ্যমন্ত্রী সেই তালিকার ভিত্তিতে নিজের পছন্দ অনুযায়ী নাম রাজ্যপালের কাছে পাঠাবেন। রাজ্যপাল সিলমোহর দেবেন। মতান্তর হলে সুপ্রিম কোর্ট হস্তক্ষেপ করবে।
মোট ৩৬ টির মধ্যে দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে নামের সুপারিশ এখনও পাঠাতে পারেনি সার্চ কমিটি। সেগুলি হল রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় এবং পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়। বাকি ৩৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেই সার্চ কমিটির সুপারিশ মুখ্যমন্ত্রীর দফতর হয়ে আচার্যের টেবিলে পৌঁছে গিয়েছে। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত দফায় দফায় ১৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নামে আচার্য সিলমোহর দিয়েছেন। বাকি অর্ধেক, অর্থাৎ ১৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ এখনও ঝুলে। তার মধ্যে কলকাতা এবং যাদবপুরের মতো প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলিও রয়েছে।
উপাচার্য নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করার জন্য এর আগে সুপ্রিম কোর্ট যে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল, তা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে শেষ হয়। তাই দ্বিতীয় সপ্তাহের প্রথম দিনেই আবার শুনানি হয়। রাজ্যপালের তরফে সওয়াল করেন দেশের অ্যাটর্নি জেনারেল। সুপ্রিম কোর্টকে সে দিন জানানো হয়েছিল, উপাচার্যদের নামের তালিকা নিয়ে রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে কিছু ‘মতান্তর’ রয়েছে বলে নিয়োগ করা যাচ্ছে না। মতান্তর মিটিয়ে নিয়োগ চূড়ান্ত করার জন্য আরও ছ’সপ্তাহ সময়ও চাওয়া হয়। কিন্তু সর্বোচ্চ আদালত ছ’সপ্তাহ সময় দিতে রাজি হয়নি। তিন সপ্তাহ সময় দেওয়া হয় এবং তার মধ্যেই মতান্তর মেটাতে বলা হয়।
আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি এই মামলা আবার ওঠার কথা সুপ্রিম কোর্টে। সে দিন কি আদালত অবমাননার অভিযোগ উঠতে পারে আচার্য বোসের বিরুদ্ধে?
রাজ্যের প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল তথা সংবিধান বিশেষজ্ঞ সৌমেন্দ্রনাথ (গোপাল) মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের ঊর্ধ্বে কেউ নন। সুপ্রিম কোর্ট যদি সময়সীমা বেঁধে দিয়ে থাকে, আর তা যদি না মানা হয়ে থাক, তা হলে অবশ্যই আদালত অবমাননার অভিযোগ উঠতে পারে।’’ প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেলের কথায়, ‘‘কেউ বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলে রাজ্যপাল তথা আচার্যকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হতে পারে।’’ কিন্তু রাজ্যপালের মতো রাজ্যের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদাধিকারীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে কোনও বড় পদক্ষেপ করা কি সহজ হবে? সৌমেন্দ্রনাথ বলছেন, ‘‘সিভি আনন্দ বোস এ ক্ষেত্রে রাজ্যপাল হিসেবে রক্ষাকবচ পাবেন না। কারণ, সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশ আচার্যের উদ্দেশে। রাজ্যপালের উদ্দেশে নয়। সর্বোচ্চ আদালত আচার্যকে নির্দেশ দিয়েছিল নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে উপাচার্য নিয়োগ করতে। আচার্য সে সময়সীমা না মেনে থাকলে সুপ্রিম কোর্ট তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতেই পারে। কারণ, আচার্য হিসেবে তিনি কোনও সাংবিধানিক রক্ষাকবচের অধিকারী নন।’’
সুপ্রিম কোর্টে ৩ ফেব্রুয়ারির শুনানি কি রাজভবনের ‘অস্বস্তি’ বাড়াতে পারে? সংবিধান বিশেষজ্ঞ সৌমেন্দ্রনাথের কথায়, ‘‘এ ক্ষেত্রে শুরুতেই কোনও কঠোর পদক্ষেপ করা হবে না। ওঁকে সুযোগ দেওয়া হবে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ কেন মানা সম্ভব হল না জানতে চাওয়া হবে। জানতে চাওয়া হবে এই ঘটনা ইচ্ছাকৃত না অনিচ্ছাকৃত। অনিচ্ছাকৃত হয়ে থাকলে কী কারণে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ রূপায়ণ করা গেল না, সেই ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। ব্যাখ্যা সন্তোষজনক হলে অসুবিধা নেই। নচেৎ সুপ্রিম কোর্ট পদক্ষেপ করতেই পারে।’’
রাজভবনের তরফে অবশ্য দাবি করা হচ্ছে যে, আদালত অবমাননার প্রশ্নই উঠছে না! সুপ্রিম কোর্টের বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যে উপাচার্য নিয়োগ না হওয়া ‘আদালত অবমাননা’ করা কি না, সে প্রশ্নের বিশদ ব্যাখ্যা রাজভবনের আধিকারিকেরা দিচ্ছেন না। ইঙ্গিতপূর্ণ ভাবে বলছেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অগ্রাহ্য করার প্রশ্নই ওঠে না। সুপ্রিম কোর্ট যে ভাবে নির্দেশ দিয়েছে, তা মেনেই কাজ হচ্ছে।’’ যে জবাবের মধ্যে আইনজ্ঞেরা এই সম্ভাবনা দেখছেন যে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ খতিয়ে দেখে রাজভবন ‘বিকল্প’ পথ খুঁজে নিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy