Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Accident

দুই হাত ছাড়াই জীবন নৌকার দাঁড় বাইছেন চপল

পাঁশকুড়ার জানাবাড় গ্রামের বাসিন্দা চপল সাঁতরা তাঁর এলাকায় যথেষ্ট জনপ্রিয় বিদ্যুতের মিস্ত্রি বলে পরিচিত। অথচ চপলের দুই হাতের কনুইয়ের নীচের অংশটি দুর্ঘটনার ফলে বাদ দিতে হয়েছে। 

দোকানে কাজে ব্যস্ত চপল।

দোকানে কাজে ব্যস্ত চপল। নিজস্ব চিত্র

দিগন্ত মান্না
পাঁশকুড়া শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২১ ০৮:২৬
Share: Save:

বিদ্যুতের কাজ করতে গিয়ে দু’টি হাতই খুঁইয়েছিলেন। সেই বিদ্যুতের কাজ করেই জীবন যুদ্ধে লড়ে যাচ্ছেন পাঁশকুড়ার চপল। প্রতিবন্ধকতা জয় করে তিনি একজন সফল ‘ইলেক্ট্রিশিয়ান’। যা অনুপ্রেরণা দিয়ে চলছে অন্যদেরও।

পাঁশকুড়ার জানাবাড় গ্রামের বাসিন্দা চপল সাঁতরা তাঁর এলাকায় যথেষ্ট জনপ্রিয় বিদ্যুতের মিস্ত্রি বলে পরিচিত। অথচ চপলের দুই হাতের কনুইয়ের নীচের অংশটি দুর্ঘটনার ফলে বাদ দিতে হয়েছে। ১৯৯৮ সালে চপল পাঁশকুড়ায় বিদ্যুৎ দফতরের অফিসে এক ঠিকাদারের অধীনে কাজ করতেন। তিনি জানান, ওই বছর ১১ হাজার ভোল্টের একটি খুঁটিতে উঠে তিনি কাজ করছিলেন। সে সময় বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীরা ভুল করে ওই লাইনে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করে দেন। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন চপল। হাসপাতালে কয়েকদিন যমে মানুষে টানাটানি চলে তাঁর। দুই হাতে পচন ধরে যাওয়ায় কনুইয়ের নীচ থেকে তা কেটে বাদ দিতে হয়।

সে দিন চপল চিকিৎসকদের জানিয়েছিলেন, বেঁচে থাকলে যেকোনও ভাবে তিনি জীবনের মূলস্রোতে ফিরবেন। সাড়ে চার মাস পর দু’টি হাত খুইয়ে বাড়ি এসে মূলস্রোতে ফেরার লড়াই শুরু হয় চপলের। ঠিক করেন, নিজের পুরনো কাজকেই হাতিয়ার করেই জীবনে এগিয়ে যাবেন। চপলের অবস্থা দেখে অনেক নেতা-মন্ত্রীই তাঁকে কাজের ব্যবস্থা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। চপলের কথায়,"কেউ কথা রাখেনি।"২৩ বছর পরে বর্তমানে পাঁশকুড়া বাজারে একটি বৈদ্যুতিন সরঞ্জামের দোকান রয়েছে চপলের। দোকানের পাশাপাশি, বাড়ির ওয়্যারিং, বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম মেরামতির কাজ করেন তিনি। কাটা হাতে দিয়েই কলম ধরে লিখতে পারেন চপল। পারেন সাইকেল চালাতেও। নিজের আয়ের পাশাপাশি তাঁর অধীনে কাজ করা তিন যুবকের আয়েরও উৎস চপল।

একান্নবর্তী সংসারে চপলের উপরে সদয় পরিবারের প্রত্যেকটি সদস্য। চপলের বছর ষোলোর ছেলে মানসিক প্রতিবন্ধী। বছর ছ'য়েকের একটি মেয়েও রয়েছে চপলের। নিজের এবং পরিবারের ভরণপোষণ চালানোর পাশাপাশি নিয়মিত সমাজ সেবামূলক কাজে ব্যস্ত থাকেন চপল। তিনি ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ভোলান্টারি ব্লাড ডোনার্স অ্যাসোসিয়েশনে’র পাঁশকুড়া শাখার সদস্য। এলাকার মানুষজনকে রক্তদানের গুরুত্ব বোঝান। নিজেও রক্তদান করেন।

এখানেই শেষ নয়, পাঁশকুড়া এলাকার কারও প্রতিবন্ধী শংসাপত্র পেতে সমস্যা হলে এগিয়ে আসেন চপল। তাঁর দুই ‘হাত’ ধরেই পাঁশকুড়ার বহু মানুষ পেয়েছেন প্রতিবন্ধী শংসাপত্র। পাঁশকুড়া প্রতিবন্ধী সহায়ক সমিতির ডিরেক্টর মহেন্দ্র মাইতি বলেন, ‘‘চপলের এক ছেলে মানসিক প্রতিবন্ধী। ওঁর নিজের দুটি হাতই নেই। তা সত্ত্বেও উনি যেভাবে নিজেকে তুলে ধরেছেন তা প্রশংসার যোগ্য। রক্তদানের বিষয়েও উনি পাঁশকুড়া এলাকায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। অন্য প্রতিবন্ধীদের কাছে চপল দৃষ্টান্ত।’’

গত বছর লকডাউনের সময় দোকান বন্ধ হয়ে যায় চপলের। সংসার চালাতে অন্যের জমিতে ভাগচাষি হিসেবে ফুলের চাষ করেন চপল। ফুল বিক্রি না হওয়ায় চরম ক্ষতির মুখে পড়তে হয় তাঁকে। আনলক সময় থেকে ফের দোকান খুলেছেন চপল। তবে আগের মতো এখন আর কাজ নেই। তবুও দাঁতে দাঁত চিপে জারি চপলের লড়াই। তাঁর কথায়,‘‘ঈশ্বর বাঁচিয়ে রেখেছেন, এটাই যথেষ্ট। বাকিটা তো আমাদেরই চেষ্টা করে এগিয়ে যেতে হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Accident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy