জ়াহরুর শেখ। ছবি: সংগৃহীত।
মোটা মাইনের চাকরি পাওয়ার আশায় বিদেশে পাড়ি দিয়েছিলেন উত্তর কাশ্মীরের কর্ণার বাসিন্দা জ়াহরুর শেখ (২৭)। তবে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পরিবারকে ফোন করে জানান, চাকরি জোটেনি, রাশিয়ার সামরিক বাহিনীতে যোগ দিতে হচ্ছে তাঁকে। তিন মাসের প্রশিক্ষণ চলবে। ওই শেষ কথা পরিবারের সঙ্গে। তার পর থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও খোঁজ নেই জ়াহরুরের। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানিয়েছেন, জ়াহরুরের মতোই সন্ধান নেই রাশিয়ায় ‘চাকরির’ খোঁজে যাওয়া আরও অন্তত ১৬ জন ভারতীয়ের। একটি সূত্রের দাবি, ভারতীয় কর্তাদের একাংশ মনে করছেন, এই নিখোঁজদের প্রায় সকলেই বেশি মাইনের চাকরির লোভে রাশিয়ায় গিয়েছিলেন। আবার নিছক বেড়াতে গিয়েও অনেকে ‘এজেন্ট’দের ফাঁদে পড়ে রুশ বাহিনীতে যোগ দিতে বাধ্য হয়েছেন, এমন অভিযোগও রয়েছে।
বিদেশ মন্ত্রক আজ একটি সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে রুশ সেনায় ১২৬ জন ভারতীয়ের যোগ দেওয়ার কথা জানা গিয়েছে। এর মধ্যে ৯৬ জন ভারতীয় দেশে ফিরে এসেছেন। এখনও পর্যন্ত যুদ্ধে ১২ জনের নিহত হওয়ার খবরও মিলেছে। যুদ্ধ ক্ষেত্রে থেকে যাওয়া ১৮ জনের মধ্যে দু’জন এখনও বেঁচে আছেন বলে আশা করছে বিদেশ মন্ত্রক। তবে একেবারেই খোঁজ মিলছে না ১৬ জনের। প্রসঙ্গত, ইউক্রেনে যুদ্ধ চলাকালীন কেরলের বাসিন্দা বিনিল বাবুর নিহত হওয়ার খবর পাওয়ার পর থেকেই রুশ দূতাবাসের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে বিদেশ মন্ত্রক। নিখোঁজদের যাতে দ্রুত খুঁজে বার করে দ্রুত ভারতে ফেরানো হয়, তা নিয়েও বিদেশ মন্ত্রকে তৎপরতা তুঙ্গে।
এই অবস্থায় আশঙ্কায় দিন কাটছে জ়াহরুরদের মতো রাশিয়ায় যুদ্ধে যোগ দিতে যাওয়া ভারতীয়দের পরিবারগুলির। জ়াহরুরের বাবা আমিন শেখ যেমন জানিয়েছেন, চণ্ডীগড় থেকে স্নাতক স্তরে পড়াশোনা করে একটি সংস্থায় কাজে যোগ দিয়েছিলেন তাঁর ছেলে। প্রতি মাসে মাইনে ছিল ত্রিশ হাজার টাকা। তবে আমিনের দাবি, ২০২৩-এ এক মহিলা-সহ কয়েক জন ‘এজেন্ট’ জ়াহরুরকে মোটা মাইনের চাকরির প্রলোভন দেখান। দাবি করেন, ভারতে চাকরি করে এক বছরে যা মাইনে পাওয়ার কথা, সেই টাকাই এক মাসে মিলবে তাদের সঙ্গে বিদেশে পাড়ি দিলে। এক উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশায় রাশিয়ায় পৌঁছে অবশ্য জ়াহরুর জানতে পারেন, তাঁকে রুশ সেনায় নিয়োগ করা হয়েছে! এর বাইরে আর কোনও খবরই মেলেনি তাঁর। জ়াহরুরের পরিবার একাধিক বার বিদেশ মন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। দিল্লি গিয়ে মন্ত্রকের আধিকারিকদের সঙ্গে দেখাও করেছে। মস্কোয় থাকা ভারতীয় দূতাবাসেও তাঁদের ছেলের খোঁজ নিয়েছে। তবে কোথাও কোনও ‘সুখবর’ মেলেনি।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ভারত ছাড়াও নেপাল, ঘানা, ইয়েমেনের মতো বহু দেশ থেকেই রাশিয়ার সামরিক বাহিনীতে লোকজন নিয়োগ করার কথা প্রকাশ্যে এসেছে সম্প্রতি। ভারতীয়দের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে যে রাশিয়ায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, এ নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে নানা মহল। ভারত বিষয়টি নিয়ে একাধিক বার মস্কোর কাছে আবেদন করেছে, যাতে ভারতীয়দের সে দেশের সেনাবাহিনী থেকে ‘মুক্তি’ দিয়ে দেশে ফেরানো হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy