নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ডেঙ্গির প্রকোপ কমে যাবে বলে যাঁরা আশাবাদী ছিলেন, তাঁদের আশায় জল ঢালল অসময়ের বৃষ্টি। শুক্রবার থেকে টানা দু’দিন দফায় দফায় বৃষ্টিতে ফের মশাদের বংশবৃদ্ধি ঘটবে। আর এর জেরে ডেঙ্গির প্রকোপও জাঁকিয়ে বসতে পারে আরও কিছু দিন। বিশেষজ্ঞদের মতে, জোরে বৃষ্টি হলে তাঁরা এতটা আতঙ্কিত হতেন না। কিন্তু যেহেতু বৃষ্টি হচ্ছে সারাদিনই ঝিরঝির করে, ভয়টা তাতেই। কারণ এতেই জল জমার ভয় থাকে।
পতঙ্গবিদ হিরণ্ময় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বৃষ্টির সঙ্গে ডেঙ্গির পরোক্ষ যোগাযোগ আছেই। জোরে বৃষ্টি হলে ডেঙ্গি-মশার লার্ভা ধুয়ে যাবে। স্রোতে সেই লার্ভা বেরিয়ে গেলে রক্ষা। কিন্তু সেই জল কোথাও আটকে গেলে সেখানে ফের মশার জন্ম হয়। ফলে সেখানে ডেঙ্গি হবে। যদি একই তাপমাত্রায় ঘ্যানঘ্যানে বৃষ্টিতে জল জমে, তাতেও ডেঙ্গির মশার বংশবৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে। ঠান্ডা যত বাড়বে ডেঙ্গির প্রকোপ তত কমবে।’’ তাঁর পরামর্শ, মশারি টাঙিয়ে, পা-ঢাকা
জামাকাপড় পরা বাঞ্ছনীয়। কারণ ডেঙ্গি-মশা কামড়ায় হাঁটুর নীচ থেকে।
মেডিসিন-এর চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার বলেন, ‘‘কম বৃষ্টিতে ডেঙ্গি মশার প্রকোপ বাড়বে। যেখানে জল জমবে সেখানেই মশার আঁতুড়ঘর তৈরি হবে। বর্ষার শেষটা সব সময়ই এ ক্ষেত্রে বিপজ্জনক। জমিয়ে ঠান্ডা পড়লে তবেই ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্ত কমবে। জল যাতে না জমে তা খেয়াল রাখতে হবে। কোথাও এতটুকুও জল জমিয়ে রাখা চলবে না।’’
রবিবারের পর বৃষ্টি কমলে কি এই ভয় খানিকটা কমবে? চিকিৎসক বসুমিত্র ভট্টাচার্যের মতে, ‘‘বৃষ্টি বন্ধ হলেও ১৫-২১ দিন ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গির প্রকোপ বৃদ্ধির ভয় থেকে যায়।’’ শনিবারও শহরের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে একাধিক ডেঙ্গি রোগী ভর্তি হন। বহু জায়গায় শয্যা কুলিয়ে ওঠা যাচ্ছে না। বিভিন্ন হাসপাতালের কর্তারা জানান, ডেঙ্গি রোগীদের ঠাঁই দিতে অন্য রোগীদের ফেরাতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা।
ডেঙ্গির প্রকোপ অব্যাহত বিভিন্ন জেলায়ও। বিশেষত উত্তরবঙ্গে। এখনও শিলিগুড়ি শহরে আক্রান্তের সংখ্যা ১০৫ জন। দার্জিলিং জেলায় ১৩৯ জন আক্রান্ত। শহরের খালপাড়া, সেবক রোড, মাটিগাড়া, বর্ধমান রোডের কিছু নার্সিংহোমে ডেঙ্গি সংক্রমণ নিয়ে বহু রোগী ভর্তি। যদিও উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডেঙ্গি রোগীর পরিসংখ্যান দেওয়া হয়নি। চিকিৎসকদের একাংশের অনুমান, সরকারি হিসেবে দার্জিলিঙে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা যা বলা হচ্ছে, বাস্তবে তা কয়েকগুণ বেশি। পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন মেয়র অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আজ, রবিবার ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে বৈঠক রয়েছে। যে ভাবেই হোক, পরিস্থিতি মোকাবিলা করতেই হবে।’’
চিকিৎসকদের মত, পরিস্থিতি মোকাবিলার দায়িত্ব প্রশাসনের পাশাপাশি মানুষেরও। বাড়ির চারপাশ পরিচ্ছন্ন রাখতে বলেন তাঁরা। তাঁদের বক্তব্য, শিশুদের প্রতি বাড়তি খেয়াল রাখা দরকার। ডাক্তারদের পরামর্শ, বাচ্চাকে হাত-পা ঢাকা জামা পরিয়ে স্কুলে পাঠান। জ্বর এলে যোগাযোগ করুন চিকিৎসকের সঙ্গে। ঘন ঘন জল খাওয়ান। খোলা জায়গায় খেলাধুলো করতে কিছু দিন পাঠাবেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy