Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Baikunthapur Forest

বৈকুণ্ঠপুরের জঙ্গলে বুলডোজ়ার, ভাঙা হচ্ছে অবৈধ নির্মাণ, আনন্দবাজার অনলাইনের খবরের জের

বৈকুণ্ঠপুর জঙ্গলে বেআইনি দখলদারি নিয়ে গত বছর একটি খবর প্রকাশিত হয়েছিল। শিরোনাম ছিল— ‘রয়েল বেঙ্গল রহস্যের চেয়েও বড় রহস্য, ফেলু কাহিনির বৈকুণ্ঠপুরের জঙ্গল গিলছে মাফিয়ারা’।

বুলডোজ়ার চালিয়ে জঙ্গলে শুরু হল বেআইনি নির্মাণ ভাঙার কাজ। নিজস্ব চিত্র।

বুলডোজ়ার চালিয়ে জঙ্গলে শুরু হল বেআইনি নির্মাণ ভাঙার কাজ। নিজস্ব চিত্র।

পার্থপ্রতিম দাস
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২৩ ১৯:২৫
Share: Save:

জমি মাফিয়াদের দাপাদাপিতে প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছিতে এসে ঠেকেছে শিলিগুড়ির বৈকুণ্ঠপুর জঙ্গল! অনেকটাই বদলে গিয়েছে অরণ্যের মানচিত্র। সেই খবর সবিস্তার প্রকাশিত হয়েছিল আনন্দবাজার অনলাইনে। তার ঠিক ৬ মাস পর জঙ্গলে নামল বন বিভাগ। বুলডোজ়ার চালিয়ে জঙ্গলে শুরু হল বেআইনি নির্মাণ ভাঙার কাজ।

‘রয়েল বেঙ্গল রহস্যের চেয়েও বড় রহস্য, ফেলু কাহিনির বৈকুণ্ঠপুরের জঙ্গল গিলছে মাফিয়ারা’— এই শিরোনামে ২০২২ সালের ১৫ জুলাই খবরটি প্রকাশিত হয়েছিল। সেই খবরে দেখানো হয়, কী ভাবে রাতারাতি জঙ্গলের জমি সরকারি ‘বিক্রয়যোগ্য জমি’তে পরিণত হয়েছে। কী ভাবে হাত বদলে গভীর জঙ্গলের জমিতে ব্যাঙের ছাতার মতো বহুতল গজিয়ে উঠেছে, বিঘার পর বিঘা জঙ্গল কেটে তৈরি হয়েছে বসত। সেই সময় বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছিল, কাগজে-কলমে যে বৈকুণ্ঠপুর জঙ্গলের আয়তন প্রায় ২৭২ বর্গ কিলোমিটার, জমি মাফিয়াদের অবাধ দৌরাত্ম্যে সেই বনভূমি এখন ১৬২ বর্গ কিলোমিটারে এসে দাঁড়িয়েছে!

জমি মাফিয়াদের দাপাদাপিতে প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছিতে এসে ঠেকেছে শিলিগুড়ির বৈকুণ্ঠপুর জঙ্গল!

জমি মাফিয়াদের দাপাদাপিতে প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছিতে এসে ঠেকেছে শিলিগুড়ির বৈকুণ্ঠপুর জঙ্গল! গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

শ’য়ে শ’য়ে ঘরদোর আর বড় দেওয়াল দিয়ে ঘিরে কারখানা গড়ে তোলার অভিযোগ উঠেছিল জঙ্গলের ভিতর নরেশ্বর মোড় আর নেপালি বস্তির মতো এলাকাগুলিতে। বন দফতর সূত্রে খবর, শুক্রবার সেখান থেকেই জমি দখলমুক্ত করার কাজ শুরু হয়েছে। প্রধান সড়কের পাশে বুলডোজ়ার চালিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বেশ কয়েকটি বাড়ি। বৈকুণ্ঠপুর ডিভিশনের ডাবগ্রাম রেঞ্জ অফিসার শ্যামাপ্রসাদ চাকলাদার বলেন, ‘‘জঙ্গলের জমি কংক্রিট মুক্ত করতে সংশ্লিষ্ট সব দফতরের সহযোগিতা প্রয়োজন। বন বিভাগ তো রয়েইছে। পুলিশ, ভূমি রাজস্ব দফতরও সহযোগিতা করছে বলেই এই কাজ করা সম্ভব হচ্ছে।’’

এ বিষয়ে রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘ফাইল চেয়ে পাঠিয়েছি। যত দূর মনে হয়, মাসখানেক আগে সুপ্রিম কোর্ট এবং ন্যাশনাল গ্রিন বেঞ্চ যৌথ উদ্যোগে একটি রায় দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, যাঁরা জঙ্গলের আদি বাসিন্দা, তাদের বাদ দিয়ে দখল হওয়া জমির উপর নির্মাণ ভেঙে ফেলা হবে। সেখানে গাছ লাগানো হবে। বিশ্ব উষ্ণায়ন রুখতে আমাদের এই কাজ করতে হবে।’’

বন দফতর সূত্রে খবর, বেআইনি ভাবে দখল হওয়া জমির মালিকদের মাসখানেক আগে নোটিসও পাঠানো হয়। তার পর শুক্রবার প্রায় ৫ বিঘা জমি খালি করে এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘিরে সেই সব বেআইনি নির্মাণ ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে। ওই সূত্রেরই দাবি, জঙ্গলের জমি থেকে বেআইনি নির্মাণ সাফ করতে একাধিক বাধা অতিক্রম করতে হয়েছে বন বিভাগকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বন আধিকারিক বলেন, ‘‘বাড়ি যাতে ভাঙা না হয়, সেই আর্জি জানিয়ে সম্প্রতি বেশ কয়েক স্থানীয় নেতার ফোন এসেছে বন দফতরের কাছে। কিন্তু জঙ্গলের জমি দখলমুক্ত করতে আমরা বদ্ধপরিকর।’’

শুক্রবার প্রায় ৫ বিঘা জমি খালি করে এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘিরে সেই সব বেআইনি নির্মাণ ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে।

শুক্রবার প্রায় ৫ বিঘা জমি খালি করে এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘিরে সেই সব বেআইনি নির্মাণ ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে। নিজস্ব চিত্র।

জঙ্গলের যে এলাকা থেকে বেআইনি নির্মাণের নিধনযজ্ঞ শুরু হয়েছে, সেই নেপালি বস্তিতে দোতলা বাড়ি ছিল অমিত ছেত্রীর। শুক্রবার সেই বাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে বন দফতর। অমিত বলেন, ‘‘শিলিগুড়ির এক ব্যক্তির কাছ থেকে জমি কিনেছিলাম। বহু বছর ধরেই এখানে থাকি আমরা। এই রেঞ্জ অফিসার এসেই আমাদের বাড়ি ভেঙে দিল। বলছে, এটা ফরেস্টের জমি। এখানে তো সবই ফরেস্টের জমি! তা হলে সবই ভাঙা হোক।’’

রেঞ্জ অফিসার শ্যামাপ্রসাদ অবশ্য জানান, ‘ডিজিপিএস’ মানচিত্র দিয়ে সমীক্ষা করে আগে দেখে নেওয়া হয়েছে, কোনটা জঙ্গলের এলাকা আর কোন জঙ্গলের বাইরে। আর শুধু ডাবগাম রেঞ্জেই নয়, তারঘের, শালুগড়া রেঞ্জ-সহ পুলিশ এবং ভূমি রাজস্ব দফতরকে সঙ্গে নিয়েই বেআইনি নির্মাণ ভাঙা হচ্ছে। শ্যামাপ্রসাদের কথায়, ‘‘আজ (শুক্রবার) যেখান থেকে কাজ শুরু হয়েছে, সেটা শিলিগুড়ি শহরের খুব কাছে। এখানে একটা ঘর বানাতে পারলে, অনেক লাভ হয় ওঁদের। জঙ্গলের জমিতে এ সব করা যাবে না। জমি খালি করে সেখানে বৃক্ষরোপণ করা হবে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE