ভাঙড় বালিকা বিদ্যালয়ে ঢুকে তৃণমূল নেতা সাবিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে হম্বিতম্বির অভিযোগ উঠেছে। ছবি: সামসুল হুদা
মেদিনীপুর, নবদ্বীপ, ডায়মন্ড হারবারের মতো কিছু জায়গায় বিচ্ছিন্ন ভাবে ডিএ আন্দোলন প্রতিরোধে নেমেছিল শাসক দল। মঙ্গলবার, কর্মবিরতির দ্বিতীয় দিনে প্রতিরোধের তীব্রতা টের পেলেন ডিএ বা মহার্ঘ ভাতার দাবিতে আন্দোলনরত সরকারি কর্মীরা। শহরে না-হলেও সেই প্রতিরোধে বিভিন্ন জেলায় বেশ কয়েক জনকে মারধরও খেতে হয়েছে বলে অভিযোগ। হয়েছে হাতাহাতিও। এই পরিস্থিতিতে জরুরি পরিষেবা ক্ষেত্র বাদ দিয়ে ৯ মার্চ যৌথ ভাবে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বিভিন্ন কর্মী সংগঠন। কো-অর্ডিনেশন কমিটিও তাতে শামিল হবে বলে জানিয়েছে।
যেমন হুগলির চণ্ডীতলায় স্কুল পরিদর্শকের কাছে স্মারকলিপি দিতে গিয়ে শেখ ওয়াসিম আলি নামে এক শিক্ষককে মারধরের ঘটনায় অভিযোগের আঙুল উঠেছে চণ্ডীতলা ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, তৃণমূলের মলয় খান ও কর্মাধ্যক্ষ শেখ মোশারফ হোসেনের দিকে। অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মলয়। স্থানীয় এবিটিএ নেতা হিমাদ্রিপ্রসাদ আদকের অভিযোগ, ‘‘সরকার হকের টাকা দিচ্ছে না। আবার তা নিয়ে প্রতিবাদ করলে মার খেতে হচ্ছে!’’
দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড় বালিকা বিদ্যালয়ে শিক্ষিকারা কেন ক্লাস নিচ্ছেন না, সেই প্রশ্ন তুলে স্থানীয় তৃণমূল নেতা সাবিরুল ইসলাম হম্বিতম্বি করেন বলে অভিযোগ। প্রধান শিক্ষিকা সন্ধ্যা মণ্ডল অবশ্য বলেন, ‘‘কর্মবিরতি নয়, ভাষা দিবসের আয়োজনের ফাঁকে কিছু যুবক অনুমতি না-নিয়ে ঢুকে বিভিন্ন মন্তব্য করতে থাকে।’’ আর সাবিরুলের দাবি, ‘‘অভিভাবক হিসেবে স্কুলে গিয়ে জানতে চেয়েছি, কেন ক্লাস হচ্ছে না।’’
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন শিলিগুড়ির সভায় বলেন, ‘‘আজ টাকা নেই, পয়সা নেই। তা-ও বলুন তো, কারও চাকরির টাকা বন্ধ হয়েছে? শিক্ষকেরা বামফ্রন্ট সরকারের আমলে এক তারিখে মাইনে পেতেন? পেনশন দেয় একমাত্র এই সরকারই। বছর বছর তিন শতাংশ ডিএ দিই। এই কয়েক বছরে এক লক্ষ ৬১ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে।’’
রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী মুর্শিদাবাদে বলেন, ‘‘দু’দিনের বন্ধে কিছু হবে না। জরুরি পরিষেবা ছাড়া সব বন্ধ করে দিতে হবে। কেন্দ্রীয় হারে ডিএ নিয়ে বাড়ি যাবেন কর্মীরা।’’
এ দিকে, একসঙ্গে ডিএ আন্দোলন চালানো হবে কি না, সেই বিষয়ে মঙ্গলবার সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের সঙ্গে কো-অর্ডিনেশন কমিটির প্রাথমিক বৈঠক হয়েছে। মঞ্চের আহ্বায়ক বিশ্বজিৎ মিত্র রাতে জানান, সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ ও সরকারি বেতনভুক কর্মচারীদের যৌথ মঞ্চ ঐক্যবদ্ধ ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ৯ মার্চ পশ্চিমবঙ্গের সব প্রশাসনিক দফতরে, স্কুল-কলেজে ধর্মঘট পালিত হবে। তবে ধর্মঘটের আওতা থেকে বাদ থাকছে সমস্ত জরুরি পরিষেবা। এই কর্মসূচিতে সঙ্গে থাকছে রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটিও। এর আগে কর্মবিরতির মাধ্যমে আন্দোলনের পথে নেমেছিল যৌথ মঞ্চ। তাতে সরকারি কার্যালয় ছাড়াও যোগ দেন স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরা। এ নিয়ে রাজ্য সরকার পৃথক ভাবে নির্দেশিকা প্রকাশ করলেও সংগঠনগুলি কর্মসূচি থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দেয়নি। কো-অর্ডিনেশন কমিটির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ গুপ্ত চৌধুরী জানান, সরকারি আদাশনামার পরেও কর্মীরা যে-স্বতঃস্ফূর্ততার সঙ্গে মঙ্গলবারের কর্মবিরতিতে যোগ দিয়েছেন, তাতে আগামী দিনে বৃহত্তর আন্দোলন হবে। তাই ৯ মার্চ সব ধরনের কর্মক্ষেত্রে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে।
যৌথ মঞ্চের দাবি, কর্মবিরতির দ্বিতীয় দিনে রাজ্য জুড়ে ব্যাপক সাড়া মিলেছে। বিভিন্ন জেলার স্কুল ও সরকারি কর্মীরা কালো ব্যাজ পরে কর্মবিরতি পালন করেন। মঙ্গলবার, অনশনের দ্বাদশ দিনে আরও দু’জন যোগ দেন। মঞ্চের সদস্য কিঙ্কর অধিকারী বলেন, ‘‘বিভিন্ন জেলা থেকে গণছুটি নিয়ে শিক্ষকেরা এসে সমর্থন জানাচ্ছেন।’’ বিভিন্ন স্কুলে কর্মবিরতির মধ্যে ভাষা দিবস পালিত হয়েছে। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা ডিএ-র দাবিতে অবস্থান করেন। কলকাতা হাই কোর্টেও কর্মবিরতির প্রভাব পড়েছে। তার জেরে এ দিন বেশ কয়েকটি মামলা হয়নি বলেও হাই কোর্ট সূত্রের খবর। জাদুঘর-চত্বরে গুলি চালানোর মামলায় ব্যাঙ্কশাল আদালতে এ দিন চার্জ গঠন হয়নি একই কারণে।
সোমবার টিএমসিপি-র ঘেরাওয়ের পরে এ দিন কর্মবিরতি থেকে সরে আসেন নদিয়ার নবদ্বীপের বিদ্যাসাগর কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা। তবে নদিয়ার অনেক স্কুলশিক্ষক কলকাতার অবস্থান মঞ্চে যোগ দেন। অভিযোগ, পশ্চিম মেদিনীপুরে পিংলার একটি স্কুলে কর্মবিরতি চলাকালীন তৃণমূলের লোকেরা তালা ঝুলিয়ে দেন। দুর্গাপুরের নডিহা হাইস্কুল ও বহরমপুর গোরাবাজার শিল্পমন্দির স্কুলে কর্মবিরতি চলায় নিচু ক্লাসে পড়ানোর দায়িত্ব নেয় উঁচু ক্লাসের পড়ুয়ারা। সোমবার বাঁকুড়ার ইঁদপুরের শালডিহা হাইস্কুলের ৩২ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতিতে গণ-পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন। এ দিন স্কুলে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়।
এ দিন কর্মবিরতির প্রভাব পড়ে সরকারি অফিস, আদালতেও। হাজিরা প্রায় একশো শতাংশ থাকলেও কর্মীদের একাংশকে কাজের জায়গায় পাওয়া যায়নি। মেদিনীপুর শহরে মিছিল চলাকালীন তৃণমূল ও বাম কর্মীদের মধ্যে হাতাহাতি বাধে। অভিযুক্ত তৃণমূল ফেডারেশনের নেতা সুব্রত সরকারের দাবি, ‘‘আমাদের মহিলা কর্মীরা আক্রান্ত হওয়ায় প্রতিরোধ করেছি।’’ শিলিগুড়িতে কর্মবিরতিতে তেমন সাড়া মেলেনি। এ দিন ওই শহরে মুখ্যমন্ত্রীর সভায় সরকারি সুবিধা প্রদানে কয়েকটি স্কুলের পড়ুয়াদের নিয়ে যাওয়ায় ক্লাস সে-ভাবে হয়নি বলে অভিযোগ। কোচবিহারের দিনহাটায় আদালতের সামনে কর্মীদের অবস্থান-বিক্ষোভ নিয়ে সোমবার প্রশ্ন তুলেছিল তৃণমূল। এ দিন সেখানে আর কোনও রকম অবস্থান-বিক্ষোভে দেখা যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy