অতিমারিতে বিসর্জন: জীবাণুনাশক গাড়ির সামনে ভাসানের প্রতিমা। হাওড়ার একটি ঘাটে। ছবি: সুমন বল্লভ
সতর্কতার আগল ভেঙেছিল অষ্টমীতেই। নবমী নিশি পেরিয়ে দশমীতেও জন-অসচেতনতার ছবিই দেখল রাজ্য। হাইকোর্টের নির্দেশিকা, প্রশাসনের আর্জি, কোনও কিছুরই তোয়াক্কা না-করে উৎসবে শামিল হলেন বহু বঙ্গবাসী। করোনা সংক্রমণের আবহে এই উন্মাদনা কোন বিপদের দিকে রাজ্যবাসীকে নিয়ে যায়, সেই আশঙ্কা নিয়েই সোমবার এ বছরের শারদোৎসবের যবনিকা পতন হল। যদিও কলকাতার বিভিন্ন পুজো কমিটির দাবি, লোকাল ট্রেন বন্ধ থাকায় ভিড় অনেক কম হয়েছে। সমাজের একাংশ সতর্কতা মাথায় রেখে ঘরে বসেই পুজো কাটিয়েছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও শেষ দু’ দিনে যা ভিড় হয়েছে, তা যথেষ্ট আশঙ্কাজনক বলেই মনে করছেন চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা।
নবমীর রাতে কলকাতা-সহ রাজ্যের প্রায় সর্বত্রই জনস্রোত দেখা গিয়েছিল। বহু পুজো আদালতের বিধি উপেক্ষা করেই মণ্ডপের আগল খুলে দিয়েছিল। দক্ষিণ কলকাতার বহু মণ্ডপে ‘নো-এন্ট্রি জ়োন’-এর বাইরে ভিড়ের চেনা ছবি দেখা গিয়েছে। গড়িয়াহাট এলাকায় ক্রমাগত পথ হেঁটেছেন মানুষজন। দশমীর কলকাতায় পুলিশ শোভাযাত্রার অনুমতি দেয়নি। ফলে বিসর্জনের শোভাযাত্রা ছিল না। তবে কলকাতা-সহ বিভিন্ন জেলায় বিসর্জন ঘাটে ভিড় দেখা গিয়েছে। মণ্ডপের ভিতরে সিঁদুর খেলা নিষিদ্ধ করেছিল আদালত। কিন্তু বাইরে সেই খেলা বন্ধ থাকবে কি না, তা মানুষের সদিচ্ছার উপরে নির্ভরশীল ছিল।
সচেতনতাকে উপেক্ষা করেই ‘নো-এন্ট্রি জ়োন’-এর বাইরে সিঁদুর খেলা হয়েছে। অনেকেই বলছেন, উৎসবের শেষ বেলায় প্রশাসনের তোয়াক্কা করেনি বহু পুজো কমিটি। প্রথমে গুটিয়ে থাকলেও অষ্টমী থেকেই বেপরোয়া হয়েছেন অনেকে। বড় শহরের পাশাপাশি শহরতলিতেও অষ্টমী থেকে ভিড় নজরে এসেছিল।
আরও পড়ুন: ফেরত সাত বাংলাদেশিকে
লালবাজার জানিয়েছিল, দশমীতে গঙ্গার ঘাটে বিসর্জনে ভিড় করা যাবে না। দূরত্ববিধি মেনে পুলিশ-প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে বিসর্জন হয়েছে। তবুও কয়েকটি ঘাটে ভিড় চোখে পড়েছে। মূলত ছোট ঘাটগুলিতে বাড়ির প্রতিমা বিসর্জনে তুলনায় বেশি লোক এসেছিলেন বলে পুলিশ সূত্রের দাবি। ভিড় হটানোর চেষ্টাও করতে দেখা গিয়েছে পুলিশকে। লেকটাউন ও দমদম পার্কে দুটি জলাশয় বিসর্জনের জন্য নির্দিষ্ট করেছে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। সেখানেও দূরত্ববিধি মেনে বিসর্জন হয়েছে। দক্ষিণ কলকাতার ত্রিধারা সম্মিলনী মণ্ডপে হোস পাইপ দিয়ে প্রতিমা গলিয়ে দিয়েছে। যাদবপুর থানা লায়েলকা পুকুরে বিধি মেনে বিসর্জন করিয়েছে। সেখানে ভিড় না-হলেও নেতাজিনগরের রানিদিঘিতে জমায়েত নজরে এসেছে। বিসর্জনের পর এ বারও নিয়মমাফিক গঙ্গার দূষণ মাপা হবে বলে পর্ষদ জানিয়েছে।
আরও পড়ুন: ডুবে মৃত চার ভাসান-যাত্রী, বেলডাঙায় নিখোঁজ ১
উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় নবমীর রাতে পথে উপচে পড়া ভিড় হয়েছে। দশমীর সকালে শিলিগুড়ির একাধিক মণ্ডপে ভিড় করে মাস্ক ছাড়াই সিঁদুর খেলায় মাততে দেখা গিয়েছে। কোচবিহারে বড়দেবীর বিসর্জনে বিধি উড়িয়ে যথেষ্ট ভিড় হয়েছে। মুর্শিদাবাদের বহরমপুর কিংবা ডোমকল-কান্দি-বেলডাঙা-জঙ্গিপুরের মণ্ডপে উদ্যোক্তারা ব্যারিকেড টপকাতে না-দিলেও ব্যারিকেডের এপারে সিঁদুর খেলা চলেছে। কৃষ্ণনগর রাজবাড়িতে দেবীবরণে বহিরাগতদের প্রবেশ বন্ধ থাকার কথা বলা হলেও এ দিন সকালে অনেকে হাজির হয়েছিলেন। পুলিশ এসে তাঁদের সরিয়ে দেয়। পুলিশ চলে গেলে ফের ভিড় জমে। কল্যাণী পুরসভা চত্বরে অবশ্য পরিচিত জনসমাগম হয়নি।
নবমীর রাতে ভিড় দেখা গিয়েছে দুই বর্ধমানের নানা শহরের পথে। বর্ধমানে সন্ধ্যার পরে যানজটও হয়। দশমীর সকালে দুর্গাপুরের কয়েকটি পুজোয় মাস্ক পরেই সিঁদুর খেলেন মহিলারা। কালনার কলেজ ছাত্রী জয়িতা পালের মন্তব্য, ‘‘মণ্ডপে মাস্ক পরেই এসেছিলাম। কিন্তু মাস্ক পরে তো সিঁদুরখেলা যায় না। তাই ওইটুকু সময় মাস্ক খুলেছি।’’ নবমীর রাতে উপচে পড়া ভিড় দেখা গিয়েছে পুরুলিয়া, আদ্রা, নিতুড়িয়া এবং হুগলি শিল্পাঞ্চল ও আরামবাগেও। তবে এ দিন হুগলির গঙ্গাঘাটগুলিতে অবশ্য পুরসভার কর্মী, পুলিশ এবং মুটের দল ছাড়া কাউকে ঘাটে যেতে দেওয়া হয়নি। শোভাযাত্রাও হয়নি।
পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদা, দাঁতন, কেশিয়াড়ি, নারায়ণগড়ে নবমীর রাতে ভিড় সামলাতে পুলিশকে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়। মেদিনীপুর শহরেও বড় মণ্ডপগুলিতে কিছুটা ভিড় হয়। পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি থেকে কোলাঘাট, এগরা, দিঘা থেকে তমলুক—সর্বত্রই নবমীতে দর্শনার্থীরা বহু মণ্ডপে ঢুকে প্রতিমা দর্শন করেন। খড়্গপুরে দশেরা পালিত হয়েছে কম ভিড়েই। দর্শনার্থীদের অনলাইনে দেখানো হয় দশেরা উৎসব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy