Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Cyclone Remal

ঘূর্ণিঝড় রেমাল: নদীবাঁধ নিয়ে ফের আতঙ্কে সুন্দরবন

২০২১-এ ইয়াস এসেছিল ২৬ মে। ঘটনাচক্রে, আজ, রবিবার একই দিনে রেমালেরও আছড়ে পড়ার কথা এই জেলার সাগরদ্বীপ বা সন্নিহিত অঞ্চলে।

—প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০২৪ ০৬:৫৮
Share: Save:

মাঝের দু’বছর স্বস্তি মিলেছিল। আবার এক ঘূর্ণিঝড়ের আতঙ্কে ঘুম ছুটেছে সুন্দরবন-সহ দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপকূলবর্তী এলাকার মানুষের।

২০২১-এ ইয়াস এসেছিল ২৬ মে। ঘটনাচক্রে, আজ, রবিবার একই দিনে রেমালেরও আছড়ে পড়ার কথা এই জেলার সাগরদ্বীপ বা সন্নিহিত অঞ্চলে। সুন্দরবনের বুক জুড়ে ইয়াসের ক্ষত এখনও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। এ বার রেমাল কী করবে, তা নিয়েই উদ্বেগ বাড়ছে। কারণ, দুই জেলায় (উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা) ছড়ানো সুন্দরবনের বেশিরভাগ জায়গাতেই নদীবাঁধ এখনও মাটির। অনেক জায়গাতে ভেঙেও গিয়েছে। ফলে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বাঁধ ভাঙার আশঙ্কা করছেন গ্রামবাসী।

সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা বলেন, “দুর্যোগের সময় কটাল থাকায় চিন্তা হচ্ছে। প্রশাসন সমস্ত বিষয়ের উপর নজর রাখছে। বিশেষ করে সুন্দরবন এলাকার সমস্ত ব্লকের নদীবাঁধগুলির উপর বিশেষ নজর দিচ্ছে সেচ দফতর। ঝড় মোকাবিলার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি।”
সম্প্রতি মুড়িগঙ্গার বাঁধে আচমকা ধসের জেরে একাধিক জায়গায় বড় ফাটল দেখা দিয়েছিল। যার ফলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন কাকদ্বীপের সাতেরঘেরি এবং সাগরদ্বীপের চকফুলডুবি এলাকার বাসিন্দারা। এ ছাড়া ঘোড়ামারা, মৌসুনি, সাগরের সুমতিনগর, বঙ্কিমনগর, নামখানার নারায়ণপুর, গোবর্ধনপুর এলাকার নদীবাঁধও বেহাল। গোসাবার কালীদাসপুর, চণ্ডীপুর, জটিরামপুর, পাখিরালায়-সহ বেশ কিছু জায়গাতেও বাঁধে ধস নেমেছিল। সোনাগাঁ, দুলকি, ছোট মোল্লাখালি, কুমিরমারি-সহ বহু জায়গাতে বাঁধের অবস্থা যথেষ্ট খারাপ। তবে, সবচেয়ে বেশি আতঙ্কিত ঘোড়ামারা দ্বীপের বাসিন্দারা।

ভাঙা নদীবাঁধের পাশে দাঁড়িয়ে ঘোড়ামারার বাসিন্দা, বছর পঞ্চাশের ভগবতী রুইদাস দূরে সমুদ্রের দিকে দেখিয়ে বলেন, “এক সময়ে খাসিমারা গ্রামে থাকতাম। কিন্তু সমুদ্র গিলে খেয়েছে খাসিমারার অর্ধেকের বেশি অংশ। ইয়াসে ঘরবাড়ি নদীগর্ভে চলে গিয়েছে। উদ্বাস্তু হয়ে দিনের পর দিন কাটিয়েছি। এখন দ্বীপের উঁচু জায়গায় কোনও রকম মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে। এ বার কী হবে কে জানে!”

ঘোড়ামারার একটি অংশ লোহাচরা, তলিয়ে গিয়েছে আগেই। খাসিমারাও অনেকটা ছোট হয়ে গিয়েছে। স্রোতের আঘাতে ক্রমশ ছোট হয়ে যাচ্ছে পাত্রপাড়া, গিরিপাড়া, মাইতিপাড়া, চুনপুরীর মতো গ্রামগুলি। একই অবস্থা পাথরপ্রতিমা ব্লকের জি প্লট গ্রাম পঞ্চায়েতের বহু জায়গার।

গোসাবা ব্লকের পাখিরালয়, কালীদাসপুর, কুমিরমারি এলাকাতেও নদী ভাঙনের ফলে একের পর এক গ্রাম তলিয়ে গিয়েছে। দুর্বল নদীবাঁধ অমাবস্যা বা পূর্ণিমার বড় কটালেই ভেঙে যায়। আমপান, ইয়াসেও বিস্তীর্ণ এলাকার নদীবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছিল গ্রাম। কার্যত আয়লার স্মৃতিকে ফিরিয়ে দিয়েছিল প্রকৃতি। আর এ বার রেমালের আতঙ্ক।

যদিও ইতিমধ্যেই গোসাবার দুর্বল নদীবাঁধ মেরামতির কাজ তৎপরতার সঙ্গে করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ব্লক প্রশাসন। সেচ দফতরের কর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ব্লকের সেচ দফতরের আধিকারিক শুভদীপ দালাল বলেন, “যে যে এলাকার নদীবাঁধ দুর্বল ছিল, সেগুলিকে দ্রুততার সঙ্গে মেরামত করা হয়েছে। আমাদের কর্মীরা সতর্ক রয়েছেন। দুর্যোগে নদীবাঁধের ক্ষতি হলে দ্রুত যাতে সারাই করা যায়, সেই প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।”
উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের দুলদুলি পঞ্চায়েত এলাকাতেও নদীবাঁধের অবস্থা খারাপ। প্রধান তাপসকুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘যদি বিপর্যয়ের জেরে নদীর জলস্তর বাড়ে, তবে নদীবাঁধ চিন্তার কারণ বৈকি!’’ সন্দেশখালি ২ ব্লকের মণিপুর পঞ্চায়েতের তালতলা চত্বরে নদীবাঁধ নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন স্থানীয়েরা। প্রতি বছর প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলেই এই অংশে বাঁধ বসে যাওয়া, বাঁধে গর্ত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এ বারও রেমালের জেরে নদীর জলস্তর বাড়লে বিপত্তি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সন্দেশখালি ১ ব্লকের ন্যাজাট ১, ন্যাজাট ২ পঞ্চায়েত এলাকার নদীবাঁধ নিয়েও চিন্তায় আছেন গ্রামবাসী।

অন্য বিষয়গুলি:

Sundarbans
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy