Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Cyclone Amphan

প্রবল হামলার পিছনে কি দায়ী উষ্ণ সাগরই?

বঙ্গোপসাগরে ২০১৭ সালে ৩টি, ২০১৮ সালে ৪টি এবং ২০১৯ সালে ৩টি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছিল।

ছবি: এএফপি।

ছবি: এএফপি।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২১ মে ২০২০ ০২:৫৫
Share: Save:

চলতি মাসের প্রথম দু’সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরের কিছু অংশের তাপমাত্রা দেখে চমকে উঠেছিলেন পুণের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল মেটিরিয়োলজির বিজ্ঞানী। সাগরের জলের তাপমাত্রা ২৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে উঠলেই ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করে। পুণের আবহবিজ্ঞান গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানী রক্সি ম্যাথু কোলের বক্তব্য, চলতি মাসের প্রথম দু’সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরের একাধিক জায়গায় জলের উষ্ণতা ৩২ থেকে ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ঘোরাফেরা করছিল! ‘‘এমন তাপমাত্রা এর আগে দেখা যায়নি,’’ বলছেন তিনি।

আমপানের ক্ষেত্রে যে তথ্য মৌসম ভবন প্রকাশ করেছে তাতে দেখা গিয়েছে, সোমবার গভীর রাতে সুপার সাইক্লোন থাকা অবস্থায় তার বায়ুর সর্বোচ্চ বেগ ঘণ্টায় ২৭৫ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠেছিল। মঙ্গলবার দুপুরের পর সে কিছুটা শক্তি খোয়ায় এবং বায়ুর গতিবেগও তাতে কমে। কিন্তু তা সত্ত্বেও যে শক্তি নিয়ে সে বঙ্গে আছড়ে পড়েছে তা-ও কম নয়।

বিশ্ব উষ্ণায়নের জেরে সাগরের জলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং তার প্রভাবে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়ার কথা রাষ্ট্রপুঞ্জের সংস্থা

‘ইন্টার-গভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ’ (আইপিসিসি)-এর রিপোর্টে বারবার বলা হয়েছে। আমপান যে ভাবে বঙ্গোপসাগরের উপরে সাধারণ ঘূর্ণিঝড় থেকে অতি কম সময়ে সুপার সাইক্লোনের চেহারা নিয়েছিল তার পিছনেও সাগরের উষ্ণতাকেই দায়ী করছেন আবহবিদদের অনেকে।

রক্সি বলছেন, ‘‘সাগরের জলের তাপমাত্রা বেশি থাকলে তা ঘূর্ণিঝড়কে প্রচুর শক্তি জোগায়। কারণ, তাপমাত্রা বেশি থাকলে বাষ্পীভবন বেশি হবে এবং ঘূর্ণিঝড়ের ওই জলীয় বাষ্প শুষেই শক্তি বাড়ায়।’’ বস্তুত, দিন কয়েক আগেই আমেরিকার ন্যাশনাল সায়েন্স অ্যাকাডেমির পত্রিকায় চার জন আবহবিজ্ঞানীর একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। ওই মার্কিন বিজ্ঞানীরা ১৯৭৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন, সাগরের জলের উষ্ণতা বৃদ্ধির সঙ্গে সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের শক্তিবৃদ্ধির সম্পর্ক রয়েছে এবং উষ্ণায়ন ঘূর্ণিঝড়কে প্রভাবিত করছে।

বস্তুত, মৌসম ভবনের তথ্য দেখলেও একই ইঙ্গিত মিলবে। তাদের তথ্যে দেখা গিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে ২০১৭ সালে ৩টি, ২০১৮ সালে ৪টি এবং ২০১৯ সালে ৩টি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছিল এবং তার মধ্যে যথাক্রমে ২টি, ৩টি এবং ২টি ঘূর্ণিঝড় প্রবল আকার নিয়েছিল। এর মধ্যে ২০১৭ সালে অক্ষি, ২০১৮ সালে তিতলি এবং গজ এবং ২০১৯ সালে ফণী ও বুলবুল অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ের চেহারা নিয়েছিল। আমেরিকার ইউটা স্টেট ইউনিভার্সিটির পরিবেশবিজ্ঞানী সাইমন ওয়াংয়ের মন্তব্য, ‘‘ফণীর ক্ষেত্রে আমরা গবেষণা করে দেখেছিলাম, উষ্ণতার ফলেই ফণী বিধ্বংসী চেহারা নিয়েছিল। সেই অস্বাভাবিক উষ্ণতা কিন্তু আমপানের ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে।’’

এবং এই উষ্ণতার ভিত্তিতেই সতর্কবাণী শোনাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। এক সমুদ্রবিজ্ঞানীর কথায়, ‘‘বিশ্ব উষ্ণায়নকে কব্জা করতে না-পারলে সাগরের জলের উষ্ণতা বাড়বে।

সাগর উষ্ণ হলে আগামী দিনে এমন মারাত্মক ঘূর্ণিঝড় আরও বেশি সংখ্যায় তৈরি হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Amphan Cyclone Global Warming
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy