কলকাতা বইমেলায় সিপিএমের যুব সংগঠনের মুখপত্রের স্টলের থিম: আরজি-কাণ্ড। ছাত্র সংগঠনের স্টলের অর্ধেকটা জুড়ে রয়েছে আরজি কর। দলের যুব সংগঠনের কলকাতা জেলা সম্মেলনের জায়গা হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছে আরজি কর হাসপাতালের পিছনের এলাকা পাইকপাড়াকে। সম্মেলনের জন্য মোহিত মৈত্র মঞ্চের নামকরণ করা হয়েছে ‘তিলোত্তমা মঞ্চ’। এসএফআই-ডিওয়াইএফআই যখন শুধু আরজি করেই ‘আটকে যাচ্ছে’ তখন সার্বিক ভাবে স্বাস্থ্যক্ষেত্র নিয়ে আন্দোলনের ‘মাঠ’ তেরি করতে চাইছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। আনুষ্ঠানিক ভাবে সে কথা না-বললেও একান্ত আলোচনায় সে কথা মানছেন সিপিএমের রাজ্য নেতারা।
শনিবার সাংবাদিক বৈঠক করে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম জানিয়েছেন, রবিবার থেকে রাজ্য জুড়ে দলের ছাত্র, যুব-সহ গণসংগঠনগুলি স্যালাইন-কাণ্ড নিয়ে রাস্তায় নামবে। সেলিমের কথায়, ‘‘স্যালাইনের সঙ্কট তৈরি হয়েছে সরকারি হাসপাতালগুলিতে। এ নিয়ে আমাদের ছাত্র-যুবরা কাল থেকেই আন্দোলনে নামবে।’’ কোভিডের সময়ে সিপিএমের ‘রেড ভলান্টিয়ার’-রা রাজ্য জুড়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে প্রশংসনীয় ভূমিকা নিয়েছিলেন। সেই সময়ে রেড ভলান্টিয়ারদের ভূমিকা সাড়াও ফেলেছিল। স্যালাইন-কাণ্ডের ক্ষেত্রেও সেই বাহিনীকে সক্রিয় করতে চাইছে সিপিএম। যেখানে রোগীরা স্যালাইন পাচ্ছেন না, সেখানে কী বন্দোবস্ত করা যায়, তা দেখতে বলা হয়েছে দলের তরফে।
আরও পড়ুন:
আরজি করের বিকল্প কেন খোঁজা হচ্ছে? প্রথম সারির এক সিপিএম নেতার বক্তব্য, ‘‘আরজি করের ঘটনা সকলকে নাড়া দিয়েছিল ঠিক কথা। কিন্তু এটাও বুঝতে হবে যে সেই মেজাজ আর নেই। সার্বিক ভাবে স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়ে যদি আন্দোলন না-করা যায়, তা হলে শুধু আরজি করে আটকে থেকে কোনও অগ্রগতি হবে না।’’
সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা নেন মূলত নিম্নবিত্ত মানুষ। স্যালাইন-কাণ্ড নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলে সেই অংশকেও ছুঁতে চাইছে সিপিএম। কারণ, দল যে ‘শ্রেণিবিচ্ছিন্ন’ হয়ে পড়েছে, তা সম্মেলনের মরসুমে প্রায় প্রতিটি জেলাতেই দলীয় নথিতে উল্লেখ করা হচ্ছে।
আরজি কর-পর্বে নাগরিক আন্দোলনে বামেরা কৌশলে মিশে থেকেছিল। জুড়ে থাকার ক্ষেত্রে অন্য বিরোধী দলগুলির তুলনায় সিপিএমের ছাত্র-যুবদের ধারাবাহিকতাও বেশি ছিল। কিন্তু সিপিএমও জানে, তাতে নির্বাচনী রাজনীতিতে বিশেষ কিছু বদল হয়নি। হবেও না। সিপিএম নেতৃত্বের অনেকেই একান্ত আলোচনায় বলছেন, এই পরিস্থিতে গণ্ডি ছোট না-করে রেখে মাঠ বড় করতে হবে।
যদিও সিপিএমের আন্দোলনকে আমল দিতে চায়নি তৃণমূল। স্যালাইনের সঙ্কটের কথাও মানতে চাননি শাসকদলের প্রথম সারির নেত্রী তথা রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘ওদের রাস্তায় নামার ইচ্ছে হয়েছে নামুক। তাতে আমাদের বয়ে গেল!’’