গত ২২ জানুয়ারি তিনি ৭৫ পূর্ণ করে ৭৬ বছরে পা দিয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী সরে যাওয়ার কথা। তিনি নিজে সরে যেতেই চেয়েছিলেন। কিন্তু সরতে দিল না ত্রিপুরা সিপিএম। রাজ্য কমিটিতে রেখে দেওয়া হল প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা দলের পলিটব্যুরো সদস্য মানিক সরকারকে।
ত্রিপুরায় সিপিএমের তিন দিনের রাজ্য সম্মেলন শেষ হল শুক্রবার। সেখানে আবার রাজ্য সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্রাক্তন সাংসদ তথা ত্রিপুরার বিরোধী দলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরীকে। নতুন যে রাজ্য কমিটির তালিকা সিপিএম সূত্রে পাওয়া গিয়েছে, তার প্রথম নাম মানিকেরই। সিপিএম নিয়ম করেছে, ৭৫ বছরের ঊর্ধ্বে কেউ দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকতে পারবেন না। রাজ্য কমিটিগুলির ক্ষেত্রে সেই বয়স আরও কম। কোথাও তা ৭২, কোথাও ৭৩। সেই নিয়মে আগামী পার্টি কংগ্রেস থেকে মানিক-সহ সাত পলিটব্যুরো সদস্যের নেতৃত্ব থেকে সরে যাওয়ার কথা। কিন্তু মানিককে রাজ্য কমিটিতে রেখে দেওয়ায় জল্পনা তৈরি হয়েছে, কেন্দ্রীয় কমিটি এবং পলিটব্যুরোতেও তাঁকে ফের রেখে দেওয়া হবে কি না তা নিয়ে।
গত পার্টি কংগ্রেসে বয়স পেরিয়ে যাওয়ার পরেও ‘ব্যতিক্রম’ হিসাবে পলিটব্যুরোয় রেখে দেওয়া হয়েছিল কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নকে। এ বার যাঁদের বাদ যাওয়ার কথা সেই তালিকায় বিজয়ন এবং মানিক ছাড়াও রয়েছেন প্রকাশ কারাট, বৃন্দা কারাট, সুহাসিনী আলি, সূর্যকান্ত মিশ্র ও জি রামকৃষ্ণন। যা কার্যকর হলে সিপিএমের পলিটব্যুরোয় প্রজন্ম বদলে যাবে। কিন্তু দল এত ঝুঁকি নেবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আরও বাড়তে শুরু করেছে মানিককে রাজ্য কমিটিতে রেখে দেওয়ার পর।
আরও পড়ুন:
কেন বিধি ভেঙে মানিককে রাখা হল? রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র বললেন, ‘‘উনি সরে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমরা বলেছি, তাঁর মতো অভিজ্ঞ নেতাকে আরও প্রয়োজন রয়েছে পার্টির। বিশেষ ব্যতিক্রম হিসাবে তাঁকে রাজ্য কমিটিতে রাখা হয়েছে।’’ জিতেন্দ্র জানিয়েছেন, প্রকাশ, বৃন্দা, অশোক ধাওয়ালের মতো যে পলিটব্যুরো সদস্যেরা উপস্থিত ছিলেন আগরতলার সম্মেলনে, তাঁরাও মানিককে রাখার বিষয়ে অনুমতি দিয়েছেন। নতুন রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতেও রয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক। মানিকের পাশাপাশি আর এক প্রবীণ নেতা অঘোর দেববর্মাকেও রাজ্য কমিটিতে ‘ব্যতিক্রমী’ হিসাবে রেখে দিল সিপিএম।
গত কয়েক মাস ধরেই ত্রিপুরা সিপিএমে আলোচনা ছিল রাজ্য সম্পাদক কে হবেন তা নিয়ে। কারণ, জিতেন্দ্র দ্বৈত দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। এক দিকে রাজ্য সম্পাদক, অন্য দিকে বিরোধী দলনেতা। দলের একাংশ চেয়েছিলেন, জিতেন্দ্র বিরোধী দলনেতা থাকুন। রাজ্য সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হোক মানিক দে-কে। ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ তত্ত্বও চাউর হয়েছিল দলের অন্দরে। কিন্তু তা খুব একটা ধোপে টেকেনি। জিতেন্দ্রকেই ফের রাজ্য সম্পাদক বেছেছে সম্মেলন।