যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে তিনি ‘বাম-বিরোধী’ বলেই পরিচিত। বিভিন্ন সময়ে সমাজমাধ্যমে বামেদের ছাত্র সংগঠন এসএফআইয়ের বিরুদ্ধে ‘বিষোদ্গার’ করতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। ফেব্রুয়ারি মাসে যাদবপুরে অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটি (আইসিসি)-র বৈঠক ঘিরে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল, সেখানেও অতি বাম নেতা ইন্দ্রানুজ রায়কে এসএফআইয়ের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে শোনা গিয়েছিল। সেই ইন্দ্রানুজ শনিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার পরে আহত হয়ে যখন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তখন রবিবার তাঁকে দেখতে গেলেন মহম্মদ সেলিম-সহ সিপিএম নেতারা। তাঁদের দাবি, রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর গাড়ির ধাক্কায় আহত হয়েছেন ইন্দ্রানুজ। এই প্রসঙ্গে সেলিম জানান, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী হিসাবে ‘শাসকের দ্বারা আক্রান্ত’ ইন্দ্রানুজের পাশে দাঁড়ানো তাঁর কর্তব্য। তৃণমূল-বিজেপি বিরোধী সব শক্তিকে এক করতে বৃহত্তর বাম ঐক্য প্রয়োজন।
শনিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃণমূলপন্থী অধ্যাপকদের সংগঠন ওয়েবকুপার বার্ষিক সম্মেলন ছিল। সেই সম্মেলন ঘিরে উত্তেজনা তৈরি হয়। বিক্ষোভ দেখান বাম এবং অতিবাম সংগঠনের সদস্যেরা। অভিযোগ, রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্যের গাড়ির ধাক্কায় আহত হয়েছেন অতিবামপন্থী সংগঠন আরএসএফের সদস্য ইন্দ্রানুজ। তাঁকে যাদবপুরের এক হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। যদিও তৃণমূলের তরফে ভিডিয়ো প্রকাশ করে দাবি করা হয়েছে, মন্ত্রীর গাড়ি কাউকে ধাক্কা দেয়নি। রবিবার সেই ইন্দ্রানুজকে হাসপাতালে দেখতে যান সেলিম-সহ সিপিএমের কয়েক জন নেতা। সেলিম বলেন, ‘‘আমি যাদবপুরের প্রাক্তনী। ওই ছাত্রটি আক্রান্ত হয়েছেন শাসকের দ্বারা। আমার কর্তব্য তাঁর পাশে গিয়ে দাঁড়ানো।’’
আরও পড়ুন:
অতীতে বার বার সিপিএম এবং তাদের ছাত্র সংগঠন এসএফআইয়ের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন ইন্দ্রানুজ। সমাজমাধ্যমে বাম-বিরোধী পোস্ট দিয়েছেন। একটি পোস্টে তিনি লিখেছিলেন, ‘‘না মেকি বাম, না গেরুয়া রাম, নকশালবাড়ি লাল সেলাম।’’ রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বামনেতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রয়াণের দিনেও ইন্দ্রানুজ সমাজমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে তাঁর সমালোচনা করেছিলেন। তাঁর অতীতে সরকার চালানোর বিষয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেছিলেন। এমনকি, যাদবপুরে আইসিসি-র বৈঠক ঘিরে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল, সেখানেও এসএফআইয়ের বিরোধিতা করেছিলেন তিনি। ছাত্রভোটের দিন ঘোষণার দাবিতে ডিনকে ঘেরাও করেছিল এসএফআই। পাল্টা তাঁদের বিরোধিতা করে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন ইন্দ্রানুজেরা। সেই ইন্দ্রানুজকেই রবিবার সন্ধ্যায় হাসপাতালে গিয়ে দেখে এলেন সেলিম-সহ সিপিএম নেতৃত্ব। যাদবপুরের ঘটনার প্রতিবাদে সুলেখা থেকে যাদবপুর পর্যন্ত মিছিল করে বামেরা। তার পরে সেলিম হাসপাতালে দেখতে যান ইন্দ্রানুজকে। অতীতে বাম-বিরোধী বলে পরিচিত ছাত্রনেতাকে কেন হাসপাতালে দেখতে গেলেন তিনি? সেই প্রশ্নের জবাবে সেলিম বলেন, ‘‘আমরা তো এই কথা বলছি, তৃণমূল-বিজেপি বিরোধী সব শক্তিকে এক করতে বৃহত্তর বাম ঐক্য প্রয়োজন। আমরা অতীতের খাঁচাবন্দি হয়ে থাকতে চাই না। যাঁরা অতীতের খাঁচাবন্দি হয়ে আছেন, তাঁদের বলব বেরিয়ে আসুন।’’
প্রসঙ্গত, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আইসিসির বৈঠক ঘিরে বাম এবং অতি বাম সংগঠনগুলির মধ্যে বিরোধ বৃদ্ধি পেয়েছিল। ফাটল তৈরি হয়েছিল। কিন্তু শনিবারের ঘটনার পরে সেই দূরত্ব কমতে শুরু করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাম এবং অতিবামপন্থী সংগঠনগুলি ক্রমেই ঐক্যবদ্ধ হতে শুরু করেছে বলে সূত্রের খবর।