Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

বেশ কিছু প্রার্থী বুথমুখো হননি, ক্ষুব্ধ আলিমুদ্দিন

এক দিকে আলোর রেখা। অন্য দিকে নিকষ অন্ধকার! পুরভোটের ফলের প্রাথমিক ময়না তদন্তে হাত দিয়ে এমনই বৈপরীত্যের ছবি খুঁজে পাচ্ছে সিপিএম। পঞ্চায়েত এবং লোকসভা ভোটের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে দলের বহু কর্মী-সমর্থক এ বারের পুরভোটে মরিয়া ল়ড়াই দিয়েছেন। সামনে দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব দিয়ে বা মাটি কামড়ে পড়ে থেকে যাঁরা লড়াই করতে পেরেছেন, শাসক দলের তাণ্ডবের মধ্যেও তাঁরা আগের তুলনায় ভাল ফল করেছেন।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৫ ০৪:১৬
Share: Save:

এক দিকে আলোর রেখা। অন্য দিকে নিকষ অন্ধকার!

পুরভোটের ফলের প্রাথমিক ময়না তদন্তে হাত দিয়ে এমনই বৈপরীত্যের ছবি খুঁজে পাচ্ছে সিপিএম। পঞ্চায়েত এবং লোকসভা ভোটের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে দলের বহু কর্মী-সমর্থক এ বারের পুরভোটে মরিয়া ল়ড়াই দিয়েছেন। সামনে দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব দিয়ে বা মাটি কামড়ে পড়ে থেকে যাঁরা লড়াই করতে পেরেছেন, শাসক দলের তাণ্ডবের মধ্যেও তাঁরা আগের তুলনায় ভাল ফল করেছেন। কিন্তু দলের অন্য একাংশ আবার লড়াইয়েই যাননি! হয় যুদ্ধক্ষেত্র থেকে দূরে থেকেছেন। নয়তো থেকেও প্রতিরোধের পথে যাননি। সিপিএমের আগামী রাজ্য কমিটির বৈঠকের আগে কিছু জেলা কমিটির কাছ থেকে এমন অসহায় আত্মসমর্পণের তথ্য পেয়ে রীতিমতো ক্ষুব্ধ আলিমুদ্দিন।

বৈপরীত্যের সব চেয়ে প্রকৃষ্ট উদাহরণ পাওয়া যাচ্ছে কলকাতার কাছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা থেকেই। পঞ্চায়েত ভোটে এই জেলার কিছু অংশে ভাল ফল করেছিল বামেরা। লোকসভা ভোটে তারা অবশ্য জেলায় একটি আসনও জেতেনি। কিন্তু পুরভোটে তাদের ফল হয়েছে শোচনীয়! জেলার যে ২৩টি পুরসভায় ভোট হয়েছে, তার মধ্যে ২২টিরই দখল নিয়েছে তৃণমূল। একমাত্র টাকি পুরসভা ত্রিশঙ্কু। হেরে যাওয়া পুরসভাগুলির মধ্যে কোথাও শূন্য, কোথাও নামমাত্র আসন পেয়েছে বামেরা। তবে এই একতরফা পরাজয়ের চেয়েও দলের একাংশের মনোভাব সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বকে বিস্মিত করেছে! মধ্যমগ্রাম পুরসভার একটি বুথে ভোট লুঠ হতে দেবেন না বলে বন্দুকধারী হামলাবাজদের হুমকির মুখেও ইভিএম আঁকড়ে শুয়ে পড়েছিলেন সিপিএম প্রার্থী সনত্কুমার বিশ্বাস। ওই ওয়ার্ডে শেষ পর্যন্ত জয়ীও হয়েছেন তিনি। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সনত্‌বাবুকে দেখতে গিয়ে তাঁর লড়াই থেকে শিক্ষা নেওয়ার কথা বলে এসেছেন সিপিএমের স্বয়ং সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি ও রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। অথচ সনৎবাবুরা যখন মরণপণ লড়াই চালাচ্ছেন, তখন বুথমুখোই হননি ওই জেলার বেশ কয়েকটি পুরসভার বেশ কিছু প্রার্থী! সিপিএম রাজ্য নেতৃত্বের মতে যা অত্যন্ত ‘লজ্জাজনক দৃষ্টান্ত’!

দলের রাজ্য কমিটির এক বর্ষীয়ান নেতার কথায়, ‘‘কাঁচরাপাড়ার বেশ কিছু বুথে বামফ্রন্ট কোনও ভোটই পায়নি। বোঝাই যাচ্ছে, সেখানে ভোট করতে দেওয়া হয়নি। কিন্তু ভোটের পর দিন বিভিন্ন সংবাদপত্রে ছবি বেরিয়েছে, কাঁচরাপাড়ায় আমাদের এক প্রার্থী মুকুল-পুত্র শুভ্রাংশু রায়ের সঙ্গে সহাস্য বসে আছেন! নির্বাচনী যুদ্ধের মাঝে এই ছবি কি আদৌ দলের কর্মীদের উত্সাহের বার্তা দেয়?’’ উত্তর ২৪ পরগনা-সহ আরও কয়েকটি জেলার কিছু প্রার্থী ভোটের দিন এলাকাতেই ছিলেন না। কেউ কেউ আবার ভোটের দিন এলাকায় থেকেও বাড়ির বাইরে যাননি। বেলঘরিয়ার এক স্থানীয় নেতা প্রচার চলাকালীন তৃণমূলের হাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে সিপিএমের অভিযোগ ছিল। অথচ ভোটের দিন তাঁকে দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে ভোট দিতে যেতে দেখা যায়নি! দলের এক রাজ্য নেতার কথায়, ‘‘প্রার্থী এবং স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সামনে রেখেই তো আমাদের লড়াই। তাঁরাই যদি এগিয়ে না আসেন, স্থানীয় মানুষ কোন ভরসায় বেরোবেন?’’

ভোটের দিন এলাকায় না-থাকা এক সিপিএম প্রার্থী অবশ্য পাল্টা যুক্তি দিচ্ছেন, ‘‘আমাকে তো বটেই, বাড়ির লোকজনকেও শাসক দল হুমকি দিচ্ছিল। জীবন বাঁচাতেই এই কৌশল নিতে হয়েছে। মেরে দিলে কে বাঁচাত?’’ এমন প্রশ্নের জবাবে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, বিমান বসু, সুর্যবাবুরা অবশ্য সনত্‌বাবুর দৃষ্টান্তই বেছে নিচ্ছেন। আগামী ১৫-১৬ মে দলের নতুন পলিটব্যুরো এবং তার পরে ২০-২১ মে রাজ্য কমিটির বৈঠক। পুরভোটের ফল বিশ্লেষণ হবে সেখানে। তার আগে হাতে প্রাথমিক তথ্য পেয়ে সোমবারই আলিমুদ্দিনে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীকে ডেকে পাঠানো হয়েছে। লক্ষ বিধাননগর ও রাজারহাট-গোপালপুরে পুরভোট। গৌতম দেবের অসুস্থতার জন্য জেলা সম্পাদকের ভারপ্রাপ্ত নেতা নেপালদেব ভট্টাচার্য অবশ্য বলছেন, ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল-সহ উত্তর ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ অংশে যে যথাযথ ভোটই হয়নি, বুথওয়াড়ি ফল দেখলেই বোঝা যাবে। কিন্তু রাজ্য নেতৃত্বের প্রশ্ন, এমন বিনা প্রতিরোধে ময়দান ছেড়ে দিলে দু’মাসের মধ্যে বাকি দু’টি পুরসভার ভোটেও তো ভরাডুবি হবে!

পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক পুরসভার কয়েকটি ওয়ার্ডে সিপিএমের প্রাপ্ত ভোট একশোও ছোঁয়নি! লোকসভা ভোটে রাজ্যের সব জেলার মধ্যে পূর্ব মেদিনীপুরের বাম প্রার্থীরাই সব চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছিলেন শতাংশের বিচারে। নেতৃত্ব বদলেও এক বছরের মধ্যে সেখানে এমন করুণ হাল কেন, প্রশ্ন উঠিছে দলের অন্দরে। কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্য বলছেন, ‘‘বহু জায়গায় জনমতের সঠিক প্রতিফলন হয়নি, এটা ঠিক। কিন্তু তার মধ্যেও কোথায় কোথায় আমরা প্রতিরোধই করতে পারিনি, এখন থেকে চিহ্নিত করতে হবে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE