Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

কাল বামেদের অস্তিত্ব রক্ষার ব্রিগেড

সাম্প্রতিক কালে সিঙ্গুর থেকে রাজভবন পর্যন্ত কৃষক ও ক্ষেতমজুর সংগঠনে পদযাত্রা হোক বা জেলায় জেলায় ব্রিগেডের প্রচারের মিছিল— বামেদের কর্মসূচিতে লোক হয়েছে ভালই।

ব্রিগেডের মাঠে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।—নিজস্ব চিত্র।

ব্রিগেডের মাঠে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৬:০৩
Share: Save:

সারা দেশের ২৩ জন বিরোধী নেতাকে এক মঞ্চে হাজির করে জৌলুস দেখিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ব্রিগেড সমাবেশের পরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত বাতিল করলেও স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ এবং উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের মতো নেতাদের আগে-পরে রাজ্যে নিয়ে এসে চাপ তৈরি করেছে বিজেপি। এই জোড়া চাপের মাঝেই রবিবার ব্রিগেড ময়দানে অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে নামছে বামেরা।

বাংলায় ধারাবাহিক নানা নির্বাচনে অবিরাম রক্তক্ষরণ চলেছে বামেদের ভোটব্যাঙ্কে। শিয়রে লোকসভা নির্বাচন। কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের আসন সমঝোতা হবে কি না, এখনও স্পষ্ট নয়। আবার সমঝোতা না হলে রাজ্যের যে দু’টি আসন সিপিএমের হাতে আছে তা-ও রক্ষা করা যাবে কি না ঠিক নেই! দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া এই বামপন্থী শক্তিই ব্রিগেড সমাবেশ থেকে মরিয়া লড়াইয়ের বার্তা দিতে চায়। বিজেপি এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে লোকসভা ভোটে কর্মী-সমর্থকেরা যাতে বিনা যুদ্ধে মাটি না ছা়ড়েন, সেই লক্ষ্যেই তাঁদের চাঙ্গা করার বার্তা দেবেন বাম নেতৃত্ব।

সাম্প্রতিক কালে সিঙ্গুর থেকে রাজভবন পর্যন্ত কৃষক ও ক্ষেতমজুর সংগঠনে পদযাত্রা হোক বা জেলায় জেলায় ব্রিগেডের প্রচারের মিছিল— বামেদের কর্মসূচিতে লোক হয়েছে ভালই। জানুয়ারিতে দু’দিনের সাধারণ ধর্মঘটে এ রাজ্যে পুলিশ-প্রশাসন এবং শাসক দলের সাঁড়াশি ‘আক্রমণে’র মুখেও রাস্তায় থেকেছেন বাম কর্মী-সমর্থকেরা। যা দেখে প্রদেশ কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতা বলছেন, ‘‘বামেদের নিবেদিত কর্মী ভিতটা এখনও আছে। তবে ভোটটা নেই।’’ সংগঠন সচল থাকলে তবেই ভোটে বুথে বুথে লড়াই দেওয়া সম্ভব, এই আপ্তবাক্য মনে রেখেই দুর্দিনের বাজারে কষ্ট করে বাম ব্রিগেডের আয়োজন। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের কথায়, ‘‘এলাকায় এলাকায় ব্রিগেড করে সারা রাজ্যের মানুষ আসবেন ব্রিগেড ময়দানে। আবার এই ব্রিগেড থেকে শক্তি নিয়ে ফিরে যেতে হবে পাড়ায় পাড়ায় লড়াই করতে।’’

শনিবার শিয়ালদহে।—নিজস্ব চিত্র।

আরও পড়ুন: হিংসার আশ্রয়ে দিদি: ঠাকুরনগর থেকে আক্রমণে মোদী, বাংলা থেকেই বাজিয়ে দিলেন ভোটের দামামা​

জ্যোতি বসুর প্রয়াণের পরে এ রাজ্যে বামেদের পক্ষে জনাকর্ষণের প্রধান মুখ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এ বার হয়তো সশরীর থাকছেন না ব্রিগেডে। সম্ভবত তাঁর বার্তা পৌঁছে দেওয়া হবে জনতার কাছে। তবে তাঁকে ব্রিগেডে নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে বলে দলীয় সূত্রে খবর। সমাবেশের আগে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য আবেদন করেছেন, বিজেপির হাতে দেশ বিপন্ন এবং তৃণমূলের হাত ধরে রাজ্য ধ্বংসের পথে যাচ্ছে। এই অবস্থা পরিবর্তনের লড়াইয়ে শক্তি জোগাবে ব্রিগেড। তিনি বলেছেন, ‘‘তৃণমূলের প্রকৃত বিকল্প বামপন্থীরা। ধর্মীয় ফ্যাসিবাদী বিজেপি নয়। হিন্দুত্বের আড়ালে দেশ জুড়ে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার পরিকল্পনা বামপন্থীরাই রুখতে পারে।’’ কলকাতায় সিপিএমের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক প্লেনাম উপলক্ষে ২০১৫ সলের ২৭ ডিসেম্বর ব্রিগেড সমাবেশে ‘বিজেপি হঠাও, দেশ বাঁচাও’ এবং ‘তৃণমূল হঠাও, রাজ্য বাঁচাও’ স্লোগানই দিয়েছিলেন বুদ্ধবাবু।

তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে সংযোগগড়তে এ বারের ব্রিগেডে থাকবেন সিপিআইয়ের ছাত্র নেতা কানহাইয়া কুমার। রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে গত ডিসেম্বরে সিপিআইয়ের প্রতিষ্ঠা দিবসের সমাবেশে কানহাইয়াকে নিয়ে হুড়োহুড়ি ছিল চোখে পড়ার মতো। তাঁর টানেই ব্রিগেডমুখী হবেন নতুন প্রজন্মের অনেকে, আশা করছেন বাম নেতৃত্ব। জঙ্গলমহলে জনজাতিদের মধ্যে ক্ষোভ আবার মাথাচাড়া দিচ্ছে। তৃণমূলের অস্বস্তির সুযোগ নিয়ে সেখানে পা রাখছে বিজেপি। পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলেই সেই ইঙ্গিত স্পষ্ট। জনজাতিদের দাবিদাওয়া তুলে ধরার জন্যই এ বার প্রথম ব্রিগেডে বক্তা রাখা হয়েছে সিপিএমের জনজাতি নেত্রী ও প্রাক্তন মন্ত্রী দেবলীনা হেমব্রমকে। আবার সংখ্যালঘুদের কাছে পৌঁছনোর লক্ষ্যে বক্তা সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য ও সাংসদ মহম্মদ সেলিম।

সিপিএম, সিপিআই, ফরওয়ার্ড ব্লক এবং আরএসপি-র চার সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, সুধাকর রেড্ডি, দেবব্রত বিশ্বাস ও ক্ষিতি গোস্বামীর বক্তৃতা করার কথা ব্রিগেডে। বিজেপির মোকাবিলায় বাম ঐক্যের বার্তা দিতে এ বার বক্তা হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্যকেও।

আরও পড়ুন: লাইভ: এই সরকার নির্দয়, এক মুহূর্ত থাকার অধিকার নেই, মমতাকে আক্রমণ মোদীর​

সরকারি দাক্ষিণ্যের এখন আর সুযোগ নেই। নিজেদের উদ্যোগে, নিজেদের আয়োজনে এবং আবেগে ভর করে রবিবারের ব্রিগেডে ভিড় করবেন বহু মানুষ। আগের দিন থেকেই শহরে পৌঁছতে শুরু করা কর্মী-সমর্থকদের দেখে যার আগাম ইঙ্গিত মিলছে। মাঠ ভরলেও ভোটের বাক্স কতটা ভরবে, সেই চিন্তা নিয়েই অস্তিত্ব রক্ষার ব্রিগেডে মোদী-মমতাকে জবাব দিতে উঠবেন ইয়েচুরি-সূর্যবাবুরা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE