তদন্তের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রথম থেকেই প্রশ্ন তুলেছে নির্যাতিতার পরিবার। পাড়ুইয়ের বধূকে পুলিশি নির্যাতনের সেই মামলায় সিআইডি-র চার্জশিটের ফাঁকফোঁকর নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিচারক তা গ্রহণ করেননি। সিআইডি-র কাছে কৈফিয়ত চেয়েছিলেন। তাতেও শেষরক্ষা হল না। মঙ্গলবার মামলার দ্বিতীয় শুনানিতেও সিআইডি তদন্তে অসন্তোষ প্রকাশ করল সিউড়ি আদালত।
সিআইডি-র জমা দেওয়া চার্জশিট এ দিন ফের গ্রহণযোগ্য হয়নি বীরভূমের মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট ইন্দ্রনীল চট্টোপাধ্যায়ের আদালতে। তদন্তকারী অফিসার তো বটেই, সিআইডি-র হয়ে সওয়াল করতে আসা পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট পাবলিক প্রসিকিউটরের (এপিপি) বক্তব্যও সন্তুষ্ট করতে পারেনি বিচারককে। দিনের শেষে সিআইডি-কে নতুন করে ঘটনার তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন সিজেএম। এ দিন শুনানির শেষে আদালতের পর্যবেক্ষণ, এই মামলায় যে সতর্কতা নেওয়া উচিত ছিল এবং যে-সব বিষয়কে আরও গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত ছিল, তা করতে পারেননি তদন্তকারী অফিসার। শেষমেশ সিজেএম ঘটনার দুই এফআইআর, নির্যাতিতা এবং তাঁর নিকট আত্মীদের জবানবন্দি এই সব কিছু বিবেচনায় রেখে ফের পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে সিআইডি-কে ‘ফাইনাল’ রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন।
পিপি রণজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নিজেই পরে বলেন, “বিচারক সিআইডি-র জমা করা চার্জশিটের কিছু অংশ নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। তিনি সিআইডি-কে ঘটনার প্রতিটি দিক খুঁটিয়ে তদন্ত করে দ্রুত রিপোর্ট জমা দিতে বলেছেন। সে ক্ষেত্রে চার্জশিটে নতুন কোনও নাম উঠে আসে কিনা বা অন্য কোনও ধারা যুক্ত করা যায় কিনা, তা-ও দেখতে বলেছেন বিচারক।”
গত ১৭ জানুয়ারি বোমাবাজিতে অভিযুক্ত পাড়ুই থানার সাত্তোরের এক বিজেপি সমর্থককে খুঁজতে বর্ধমানের বুদবুদ থানার কলমডাঙা গ্রামে তাঁর কাকিমার বাপের বাড়িতে যায় বীরভূম জেলা পুলিশের এক বিশেষ দল। ওই কর্মীকে না পেয়ে তাঁর কাকিমাকে পাশের জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে পুলিশ ও তৃণমূলের কিছু নেতা-কর্মী অকথ্য অত্যাচার চালায় বলে অভিযোগ। এই নিয়ে তুমুল হইচই শুরু হওয়ায় রাজ্য সরকার সিআইডি-কে তদন্তভার দেয়। মামলায় দু’মাসের মধ্যে চার্জশিট দিয়েও গত বৃহস্পতিবার আদালতে ধাক্কা খেয়েছিল সিআইডি। স্পেশ্যাল অপারেশন গ্রুপের (এসওজি) ওসি কার্তিকমোহন ঘোষ, দুই কনস্টেবল দীপক বাউরি ও কাশীনাথ দাস, ইলামবাজার থানার মহিলা কনস্টেবল আলপনা লোহারের অভিযুক্ত হিসাবে ওই চার্জশিটে নাম রয়েছে। কিন্তু, চার্জশিটের বেশ কিছু ফাঁকফোকর নিয়ে তদন্তকারী অফিসারের কৈফিয়ত তলব করেন বিচারক। পরের শুনানিতে উপস্থিত থাকতে বলেছিলেন অভিযোগকারী পক্ষকেও।
ঘটনার পরেই পাড়ুই ও বুদবুদ থানায় দু’টি পৃথক অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। দুই অভিযোগ মিলিয়ে ঘটনায় অভিযুক্তদের মধ্যে এসডিপিও (বোলপুর), সিআই (বোলপুর), ওসি (এসওজি) এবং সাত্তোরের তৃণমূল কর্মী শেখ আজগর-সহ কয়েক জনের নাম ছিল। কিন্তু, সিআইডি তাদের চার্জশিটে কার্তিকমোহন ঘোষ ছাড়া বাকিদের নাম রাখেনি। অথচ বাকি অভিযুক্তদের ভূমিকা নির্যাতনের ঘটনায় ঠিক কী ছিল, চার্জশিটে তা নিয়েও স্পষ্ট কিছু বলা হয়নি। পাশাপাশি চার্জশিটে যে চার জনের নাম রয়েছে, তাঁদের ৪১ (এ) ধারায় ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্তকারীরা সন্তুষ্ট বলে জানানো হয়েছে। কিন্তু, কেন তাঁদের গ্রেফতার করা হয়নি, তাঁদের বিরুদ্ধে কী বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা-ও স্পষ্ট করা হয়নি।
এ দিন শুরুতেই অভিযোগকারীর (নির্যাতিতার স্বামী) আইনজীবী গোপাল মুখাপাধ্যায় আদালতের কাছে দাবি করেন, তাঁর মক্কেল সিআইডি তদন্তে সন্তুষ্ট নন। তদন্তকারীরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা-কর্মীদের নাম বাদ দিয়েছেন। এর পরেই আদালতে ডাক পড়ে তদন্তকারী অফিসার প্রশান্ত নন্দীর। তাঁর হয়ে সওয়াল করতে ওঠেন পিপি এবং এপিপি। তাঁদের বক্তব্যে খুশি হননি বিচারক।
ইতিমধ্যেই ঘটনার তদন্ত কেন্দ্রীয় কোনও সংস্থাকে দিয়ে করানোর দাবিতে হাইকোর্টে আবেদন করেছে নির্যাতিতার পরিবার। এ দিন আদালত চত্বরে উপস্থিত নির্যাতিতা বলেন, “প্রথম থেকেই আমাদের সিআইডি-র তদন্ত নিয়ে আস্থা নেই। যাদের নামে অভিযোগ হয়েছিল, চার্জশিটে তাদের নামই নেই! আদালতকে আমাদের আপত্তির কথা জানিয়েছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy