মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফেসবুক পেজ থেকে
নিজামউদ্দিনের জমায়েত নিয়ে বেশি চাঞ্চল্য তৈরি করার দরকার নেই। বার্তা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। যাঁরা গিয়েছিলেন, রাজ্য সরকার তাঁদের খুঁজে বার করার চেষ্টা করছে এবং ইতিমধ্যেই তাঁদের অনেককে কোয়রান্টিনে পাঠানো হয়েছে। বাকিরা যাতে নিজে থেকেই পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, সে আহ্বানও এ দিন মুখ্যমন্ত্রী জানালেন। কিন্তু যে দিন দিল্লির মরকজ নিজামউদ্দিনে জমায়েত হয়েছিল, করোনাকে তখনও দেশের সরকার মহামারি হিসেবে দেখছিল না বলে এ দিন জানিয়েছেন মমতা। কেন্দ্রের একটি চিঠির কথা উল্লেখ করে তিনি সে কথা জানিয়েছেন।
দিল্লির মরকজ নিজামউদ্দিনে তবলিগি জামাতের ধর্মীয় সমাবেশ এবং তার পরে বেশ কিছু দিন ধরে সেখানে কয়েক হাজার লোকের থেকে যাওয়াকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা দেশেই। মরকজ থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ফিরে গিয়ে ইতিমধ্যেই অন্তত ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আরও অনেকেই করোনা সংক্রামিত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন এবং চিকিৎসা চলছে। শুধু ভারতীয় নাগরিকদের নিয়ে নয়, বাংলাদেশ, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া-সহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের নিয়ে জমায়েত করেছিল তবলিগ। গোটা বিশ্ব যখন করোনা সংক্রমণের ত্রাসে কাঁপতে শুরু করেছে এবং জমায়েত এড়াতে যখন স্কুল-কলেজ, অফিস-কাছারি বন্ধ করে দেওয়া শুরু হয়েছে, সেই সময়ে কোন বুদ্ধিতে ওই রকম একটা জমায়েত তবলিগ করল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহল। কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন রাজ্যকে সতর্ক করেছে। মরকজ থেকে কারা ফিরেছেন, দ্রুত খুঁজে বার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাজ্য প্রশাসনগুলিকে। মরকজ ফেরতদের তো বটেই, এ ক’দিনে তাঁরা কাদের সঙ্গে মেলামেশা করেছেন, তাঁদেরও কোয়রান্টিনে পাঠানো জরুরি কি না, সে সবও খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।
বিভিন্ন রাজ্যের প্রশাসন ইতিমধ্যেই মরকজ ফেরতদের চিহ্নিত করে কোয়রান্টিন বা আইসোলেশনে পাঠানোর কাজ শুরু করেছে। তামিলনাড়ু থেকেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক লোক মরকজ নিজামউদ্দিনের ধর্মীয় সমাবেশে গিয়েছিলেন এবং তাঁদের মধ্যে শতাধিক করোনা আক্রান্ত হয়েছেন বলে খবর এসেছে।
আরও পড়ুন: আপনাদের মাস্ক ভাল নয়, পুলিশকে বললেন মমতা
পশ্চিমবঙ্গ সরকারও মরকজফেরতদের চিহ্নিত করার কাজ শুরু করেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার নবান্নের সাংবাদিক সম্মেলনে জানান যে, কেন্দ্রের কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রাজ্য সরকার সক্রিয় হয়। মঙ্গলবারের মধ্যেই ৫৪ জনকে কোয়রান্টিনে পাঠানো হয় বলে তিনি জানান। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন যে, বাঁকুড়া, উত্তর দিনাজপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায় আরও কয়েক জনের খোঁজ মিলেছে এবং তাঁদেরও কোয়রান্টিনে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু এই বিষয়টি নিয়ে বেশি চাঞ্চল্য তৈরি যেন না করা হয়, সতর্কবার্তা দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
নিজামউদ্দিনের বিষয়টি নিয়ে অনেকে অনেক রকম কথা বলছেন, কিন্তু তা উচিত হচ্ছে না— বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘নিজামউদ্দিনে যাঁরা গিয়েছিলেন, সেটা নিয়ে এত চাঞ্চল্য তৈরি করার দরকার নেই।’’ রাজ্য সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে তিনি আশ্বাস দেন।
তবে যাঁরা মরকজ নিজামউদ্দিনে গিয়েছিলেন এবং যাঁরা ওই জমায়েতের আয়োজন করেছিলেন, তাঁরা খুব বড় অপরাধ করেছেন বলে যে তিনি মনে করছেন না, সে বার্তাও স্পষ্ট ছিল সাংবাদিক সম্মেলনে। ১৩ মার্চ তবলিগি জামাতের ধর্মীয় সভা অনুষ্ঠিত হয় বলে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন জানান। ওই তারিখেই কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে একটি চিঠি রাজ্যের কাছে এসেছিল বলেও তিনি জানান। তার পরে সেই চিঠিটি মুখ্যসচিবকে পড়ে শোনাতে বলেন। মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ চিঠির অংশবিশেষ পড়ে শুনিয়ে বলেন, ‘‘১৩ মার্চ কেন্দ্র আমাদের লিখেছে, দেশে কোভিড-১৯-এর কোনও মহামারি নেই।’’ অর্থাৎ তবলিগ যখন জমায়েত করেছে, করোনা সংক্রমণকে তখনও পর্যন্ত কেন্দ্র মহামারি হিসেবে দেখছিল না— এ কথাই বুঝিয়ে দেন মুখ্যসচিব।
আরও পড়ুন: ব্যক্তিগত সঞ্চয় থেকে মমতার করোনা-ত্রাণ
তবে নিজামউদ্দিনে যাঁরা গিয়েছিলেন, তাঁদের নিজেদেরই পুলিশকে গিয়ে সে কথা জানানো উচিত বলে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন মন্তব্য করেছেন। কোয়রান্টিন নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, কোয়রান্টিন সেন্টার আর একটা বাড়ির মতোই— এ ভাষাতেই এ দিন আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন তিনি। তবে নিজামউদ্দিনের জমায়েত নিয়ে চাঞ্চল্য তৈরি করার চেষ্টার বিরুদ্ধে ফের সতর্কবার্তা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এটা নিয়ে জাতের নামে বজ্জাতি করে লাভ নেই।’’
জেলায় জেলায় বিভিন্ন জনবহুল এলাকায় ঠিক করে লকডাউন বিধি মেনে চলা হচ্ছে না বলে জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন অসন্তোষও প্রকাশ করেন। অনেকেই হাটেবাজারে যাচ্ছেন বা রাস্তায় বেরিয়ে আড্ডা মারছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি। বাজারে বা দোকানে গেলেও কেউ যেন ঠাসাঠাসি করে ভিড় না জমায়, প্রত্যেকে যেন পরস্পরের সঙ্গে দূরত্ব বহাল রাখেন— সে বিষয়ে এ দিন তিনি ফের সতর্ক করেন। আর ঘরে থাকতে অসুবিধা হলেও এখন ঘরেই থাকতে হবে, সে কথাও মনে করিয়ে দেন। রাস্তায় বেরিয়ে কেউ আড্ডা মারবেন না, আড্ডা মারার সময় পরেও অনেক পাবেন— মন্তব্য মুখ্যমন্ত্রীর। আগামী দু’সপ্তাহ করোনা মোকাবিলার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি জানান। তাই আগামী দু’সপ্তাহ সবাই মিলে লকডাউনকে সম্পূর্ণ ভাবে সফল করতে হবে— আহ্বান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy