প্রতীকী ছবি
বারবারই ভিডিয়ো বার্তায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে সাহায্য-ভিক্ষা করেছেন ভিন্রাজ্যে আটকে থাকা শ্রমিকেরা। তখনই সংশ্লিষ্ট জেলাগুলির কাছে আটকে পড়া শ্রমিকদের নিয়ে তথ্য চায় রাজ্য সরকার। প্রশাসন সূত্রে খবর, বর্তমানে বাইরে আটকে থাকা শ্রমিদের সংখ্যাটা প্রায় ৩০ হাজার। এ বার দ্রুত তাঁদের সাহায্যে সরকার উদ্যোগী হবে বলে খবর। তবে বাসিন্দাদের একাংশ জানাচ্ছেন, কতজন শ্রমিক বাইরে কাজ করেন, সেটা তো প্রশাসনের জানার কথা! এই বিপদের সময়, যখন শ্রমিকেরা ভিন্রাজ্যে খেতে পাচ্ছেন না, তখন তাঁদের সংখ্যা জানতেই এতগুলো দিন পেরিয়ে গেল!
নিজের এলাকায় কাজ নেই। তাই এই সব শ্রমিকেরা পাড়ি দিয়েছিলেন মুম্বই, দিল্লি, কেরল বা হায়দরাবাদে। কিন্তু লকডাউনে বন্ধ হয়ে গিয়েছে সব কাজ। সেই সব রাজ্যেই আটকে পড়েছেন উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া, গোয়ালপোখর, চাকুলিয়া, করণদিঘি, ইটাহারের, ইসলামপুরের একটি বড় অংশের এই শ্রমিকেরা।
একদিকে কাজ বন্ধ, টাকা শেষ—নিজেরা কী ভাবে বেঁচে থাকবেন সেই ভাবনার পাশাপাশি পরিবারের অবস্থা কী—চিন্তা বেড়েছে তা নিয়েও। এখন এ ভাবে লকডাউন চলতে থাকলে ভিন্রাজ্যে আটকে পড়া এই প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিকের ভবিষ্যৎ কী—তার সদুত্তর দিতে পারছেন না কেউই।
প্রশাসন সূত্রের খবর, জেলায় সরকারি হিসেব অনুসারে পাঁচ হাজার শ্রমিক ফিরেছেন। তাঁদেরকে রাখা হয়েছে হোম কোয়রান্টিনে। তবে বেশিরভাগ শ্রমিক এখনও আটকেই। অধিকাংশ শ্রমিকের কাছেই টাকা নেই, ফুরিয়ে গিয়েছে মজুত খাবারও। কিছু দিন পাড়াপড়শির দেওয়া খাবার পেলেও করোনার বাড়াবাড়িতে বন্ধ হয়েছে সে সবও। জেলার এই সমস্ত শ্রমিকরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে সাহায্যর আর্জি জানান।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, রাজ্যের শ্রম দফতরের উদ্যোগে ভিন্রাজ্যে আটকে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকদের তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু হয়। শ্রম দফতরের আধিকারিক শেখ নৌসাদ আলি বলেন, ‘‘সোমবার আটকে যাওয়া শ্রমিকদের বিস্তারিত তালিকা নবান্নে পাঠানো হয়।’’ জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়, জেলার মোট ৩০ হাজার শ্রমিক ভিন্রাজ্যে আটকে রয়েছেন। এর মধ্যে ইসলামপুর মহকুমার শ্রমিকদের সংখ্যাটা বেশি।
গোয়ালপোখরের বিধায়ক তথা শ্রম দফতরের প্রতিমন্ত্রী গোলাম রব্বানি বলেন, ‘‘রাজ্যে সরকার যা তথ্য চেয়েছিল পাঠানো হয়েছে। ওই শ্রমিকদের সাহায্য করার যথাসাধ্য চেষ্টা চলছে।’’
গোয়ালপোখরের চেনপুর, মণিভিটার বাসিন্দা মনোয়ার আলম, সাহাবাজ আলমের মতো এলাকার প্রায় ২২ জন শ্রমিক দিল্লিতে আটকে। তাঁরা কেউ হোটেলে কাজ করতেন, কেউ বা নির্মাণশ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। কিন্তু এখন প্রত্যেকেই গৃহবন্দি।
তাঁদের অভিযোগ, রাজ্যে থেকেও কোনও সাহায্যেই এখনও পাননি। একই দাবি কেরলে আটকে থাকা চাকুলিয়ার শ্রমিকদেরও। চাকুলিয়ার বাসিন্দা শেখ হালিম বলেন, ‘‘একটি বাঙালি সংগঠন ও একটি রাজনৈতিক দলের যুব সংগঠন মিলে লকডাউন শুরুর আগে খাবার পৌঁছে দিয়েছিল। তাতে কিছু দিন চলেছিল।’’
তিনি বলেন, ‘‘খাবার প্রায় শেষ। কাজ বন্ধের আগে যে টাকা রোজগার করেছিলাম, তাও ফুরিয়ে গেছে। বাড়িতেও পরিবারের লোকজন সমস্যায়। আমরা টাকা পাঠানোর পর হাঁড়িতে চড়ে। ওঁরা কী করছে জানি না।’’
শ্রম দফতরের মন্ত্রী গোলাম রব্বানি বলেন, ‘‘শ্রমিকেরা যাতে সমস্যায় না পড়েন সেই বিষয়ে রাজ্যে সরকার উদ্যোগী হয়েছে।’’ স্থানীয়েরা বলছেন, ‘‘এই পুরো প্রক্রিয়াই অনেক আগে শুরু করা যেত, যদি প্রশাসন শ্রমিকদের সংখ্যাটা জানত। আগেও কেরল, কাশ্মীরে সমস্যার সময় শ্রমিকদের তথ্য না থাকায় সমস্যা হয়েছে। কিন্তু এই প্রশাসন কোনও কিছু থেকেই শিক্ষা নেয়নি। এ বার যদি ওঁদের কিছু হয় সেই দায় কে নেবে!’’
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy