Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus in West Bengal

কেন্দ্র বলল, বাংলায় ১০টি রেড জোন, প্রতিবাদ জানিয়ে রাজ্য বলল ৪

রাজ্য প্রতিবাদ জানিয়ে কেন্দ্রকে জানাল, ১০ নয়, বাংলায় রেড জোন মাত্র ৪টি। অরেঞ্জ ও গ্রিন জোনে পড়া জেলার সংখ্যাও কেন্দ্র এবং রাজ্যের একেবারেই আলাদা।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০১ মে ২০২০ ১২:৫০
Share: Save:

করোনা সংক্রমণের তীব্রতার নিরিখে গোটা পশ্চিমবঙ্গকে তিনটে ভাগে ভাগ করা হয়েছিল— রেড, অরেঞ্জ এবং গ্রিন জোন। কোন জোনের আওতায় কোন কোন জেলা পড়েছে, তা-ও জানিয়ে দিয়েছিল নবান্ন। এ বার সেই জোনভিত্তিক জেলার সংখ্যা নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য সঙ্ঘাত বাধল। কেন্দ্রের দাবি, রাজ্যে মোট ১০টি রেড জোন রয়েছে। কিন্তু রাজ্য তার প্রতিবাদ জানিয়ে কেন্দ্রকে জানাল, ১০ নয়, বাংলায় রেড জোন মাত্র ৪টি। অরেঞ্জ ও গ্রিন জোনে পড়া জেলার সংখ্যাও কেন্দ্র এবং রাজ্যের একেবারেই আলাদা।

বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব প্রীতি সুদান প্রতিটি রাজ্যকে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। সঙ্গে বিভিন্ন রাজ্যের সংশোধিত রেড, অরেঞ্জ এবং গ্রিন জোনের তালিকাও। কেন্দ্রের ওই তালিকা অনুযায়ী, গোটা দেশে ১৩০টি জেলা রেড জোনে রয়েছে। আর ২৮৪টি জেলা রয়েছে অরেঞ্জ জোনে এবং ৩১৯টি গ্রিন জোনে। সেই তালিকায় দেখা যাচ্ছে, এ রাজ্যের ১০টি জেলা রয়েছে রেড জোনের ভিতর। ৫টি রয়েছে অরেঞ্জে এবং ৮টি গ্রিন জোনে রয়েছে।

রাজ্য আগেই জানিয়েছিল বাংলায় রেড জোনের মধ্যে পড়ছে মাত্র চারটি জেলা। কলকাতা, হাওড়া, উত্তর ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুর। কিন্তু ৩০ এপ্রিল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিবের ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রতি সপ্তাহে সংক্রমণের হার, কত দিনে সংক্রমণের সংখ্যা দ্বিগুণ হচ্ছে, কত জন ব্যক্তি সংক্রমিতের সংস্পর্শে আসছেন— এ সব পর্যালোচনা করে স্বাস্থ্য মন্ত্রক এই তালিকা তৈরি করেছে। তালিকায় দেখা গেল, রাজ্যের ঘোষিত ওই চার জেলার সঙ্গে রেড জোনে জুড়ে গিয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পশ্চিম মেদিনীপুর, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কালিম্পং এবং মালদহ। অর্থাৎ আরও ছয় জেলা। অরেঞ্জ জোনের মধ্যে রয়েছে মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, দুই বর্ধমান এবং হুগলি। বাকি আট জেলা গ্রিন জোনের অন্তর্ভুক্ত— ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূম, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, আলিপুরদুয়ার এবং কোচবিহার।

আরও পড়ুন: রাজ্যে ১০৫ করোনা আক্রান্তের মৃত্যু, তবে করোনার কারণেই মৃত ৩৩: নবান্ন​

রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব বিবেক কুমার এ বিষয়ে পাল্টা চিঠি পাঠিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিবকে। সেখানে তিনি জানিয়েছেন, রাজ্যগুলির সঙ্গে ক্যাবিনেট সচিবের ভিডিয়ো কনফারেন্সে যে বৈঠক হয়েছে, সেখানে যে প্রেজেন্টেশন দেখানো হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে এ রাজ্যে ১০টি জেলা রেড জোনের আওতাভুক্ত। এই তথ্য ত্রুটিপূর্ণ। কেন্দ্রের নির্দেশিকা মেনেই রাজ্যে জোন ভাগ করা হয়েছে এবং সেই অনুযায়ী রাজ্যে ৪টি রেড জোন, ১০টি নয়। তাঁর চিঠির সঙ্গে একটি তালিকাও পাঠিয়েছেন বিবেক কুমার।

তবে, স্বাস্থ্যসচিবের চিঠিতে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, কেন্দ্রের পাঠানো তালিকার সঙ্গে রাজ্য স্থানীয় তথ্যের উপর ভিত্তি করে আরও এলাকা যুক্ত করতে পারে। কিন্তু এই তালিকা থেকে কোনও এলাকা বাদ দেওয়া যাবে না। প্রীতি সুদান ওই চিঠিতে রাজ্যের মুখ্য সচিবকে জানিয়েছেন, প্রথম পর্যায়ে এই জোন ভাগ করার ক্ষেত্রেসংক্রমণ বা সংক্রমিতের সংখ্যা দ্বিগুণ হওয়ার হারকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই মুহূর্তে গোটা দেশে রোগমুক্ত হয়ে ওঠা মানুষের সংখ্যা অনেক বেড়ে যাওয়ায়, আরও বৃহত্তর আঙ্গিক বিচার করে এই জোন ভাগ করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে দেখা হচ্ছে, এলাকায় কতটা নজরদারি রয়েছে, কত নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে বা ওই এলাকা থেকে সামগ্রিক ভাবে কী প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাচ্ছে—তার উপর। তবে সেই সঙ্গে দেখা হচ্ছে সংক্রমণের সংখ্যাও।

এই চিঠিতে জানানো হয়েছে, গত ২১ দিনের মধ্যে কোনও জেলায় যদি একটিও সংক্রমণের ঘটনা না ঘটে তবে তাকে গ্রিন জোনের আওতায় রাখা যাবে। তবে সেই সঙ্গে সতর্ক করা হয়েছে, সংক্রমণের রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে এই তালিকা প্রতি মুহূর্তেই পরিবর্তনশীল।

আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যায় নতুন রেকর্ড দেশে

এই চিঠিতে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে যে, জেলায় থাকা পুরসভাগুলিতে আলাদা এলাকা হিসাবে ধরা যাবে। অর্থাৎ কোনও জেলায় তিনটি পুরসভা থাকলে তিনটি আলাদা জোন, সঙ্গে বাকি জেলা আরও একটি জোন। যদি কোনও পুরসভা এলাকায় গত ২১ দিনে একটিও সংক্রমণের ঘটনা না ঘটে, তবে সেই পুরসভা রেড জোনভুক্ত জেলার মধ্যে থাকলেও, তা অরেঞ্জ জোন হিসাবে চিহ্নিত করা যাবে।

বৃহস্পতিবারই রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ নবান্নে জানিয়েছিলেন, রাজ্যের অরেঞ্জ জোনের দু’টি জেলায় গত ২৫ দিন কোনও সংক্রমণ হয়নি। তিনটি জেলা থেকে ২১ দিনের মধ্যে নতুন সংক্রমণ নেই। আরও দু’টি জেলায় গত সাত দিনে কোনও সংক্রমণ নেই। স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের একাংশের ইঙ্গিত, সংশোধিত এই কেন্দ্রীয় তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে সম্প্রতি রাজ্যে করোনা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা কেন্দ্রীয় দলের প্রাথমিক রিপোর্ট প্রভাব ফেলেছে।

স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, রাজ্যের ৮টি জেলা গ্রিন জোনভুক্ত হয়েছে কেন্দ্রীয় এই তালিকায়। কিন্তু বৃহস্পতিবারই আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার এবং বীরভূম জেলায় সংক্রমণের হদিশ পাওয়া গিয়েছে। ফলে গ্রিন জোন থেকে বাদ যেতে পারে আরও তিন জেলা। কারণ, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিবের চিঠিতেই লেখা ছিল এই তালিকা পরিবর্তনশীল।

বৃহস্পতিবার দিল্লি এমস থেকে চিকিৎসা করে ফেরা চার জনের শরীরে কোভিডের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে আলিপুরদুয়ারে। ওই চার জনের মধ্যে দু’জন আলিপুরদুয়ারের বাসিন্দা। বাকি দু’জন কোচবিহারের। ফলে গ্রিন জোন থেকে বাদ যেতে পারে কোচবিহারও। অন্য দিকে মুম্বই থেকে বীরভূমের ময়ূরেশ্বরে ফেরা রোগী এবং তাঁর দুই সঙ্গীর শরীরেও পাওয়া গিয়েছে করোনা ভাইরাস। ফলে গ্রিন জোনের তালিকা থেকে বাদ যেতে পারে এই জেলাও। সেই হিসাবে দেখতে গেলে রাজ্যে মাত্র ৫টি জেলা থাকবে গ্রিন জোন তালিকাভুক্ত। এ নিয়ে এ দিন নতুন করে কোনও মন্তব্য করেনি রাজ্য সরকার।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy