ছবি : শাটারস্টক।
ওজন ঝরানোর জন্য উপোস করার চল বেড়েছে ইদানীং। ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করে বলিউডের তারকাদের ওজন ঝরানোর সাফল্য দেখে অনুপ্রাণিতও হচ্ছেন অনেকে। ডায়াবিটিসের রোগীদেরও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে বলা হয়। কিন্তু ওজন ঝরানোর জন্য কি ডায়াবিটিসের রোগীরা ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করতে পারেন?
চিকিৎসকেরা বলছেন, ডায়াবিটিস রোগীদের ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করার পথে প্রথম বাধা হল প্রাতরাশ। ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিংয়ে অনেক সময়েই উপোসের সময় বৃদ্ধি করতে গিয়ে প্রাতরাশ বন্ধ রাখা হয়। ১৬:৮ অনুপাতে উপোসের সময় ১৬ ঘণ্টা রেখে খাওয়ার জন্য নির্ধারিত থাকে মাত্র ৮ ঘণ্টা। তাই অনেকেই রাত ৮টায় খাওয়া শেষ করে আবার সকাল ১২টায় মধ্যাহ্নভোজের সময় খান। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে অনেক ক্ষণ পেট খালি থাকে। চা, জল, বিনা চিনির পানীয় ছাড়া আর কিছু খাওয়া যায় না। তাতে ডায়াবিটিসের রোগীদের অসুস্থ হয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে।
কী সমস্যা হতে পারে প্রাতরাশ না করলে?
১। হাইপারগ্লাইসিমিয়া: প্রাতরাশ বাদ গেলে ডায়াবিটিস রোগীদের রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে বলে জানাচ্ছেন পুষ্টিবিদ এবং ডায়িবিটিসে আক্রান্তদের খাদ্য বিষয়ে পরামর্শদাতা কণিকা মলহোত্র। তিনি বলছেন প্রাতরাশ না করলে হাইপারগ্লাইসিমিয়ার ঝুঁকি বাড়তে পারে। হাইপারগ্লাইসিমিয়া হল রক্তে শর্করার মাত্রা এতটাই বেড়ে যাওয়া যে, তা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে ডায়াবেটিক কোমা পর্যন্ত হতে পারে। কেন এমন হয়? কণিকা বলছেন, ‘‘যে হেতু আগের দিন রাত থেকে সকাল পর্যন্ত দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকবেন ডায়াবিটিসের রোগী, তাই প্রথম খাবারটি তিনি যদি না খান তা হলে পরের খাবারটি খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রক্তে গ্লুকোজ় এক ধাক্কায় অনেকটা বেড়ে যাবে। রোজ এমন হতে থাকলে তার প্রভাব আরও খারাপ হতে পারে।’’
২। ইনস্যুলিন: ইনস্যুলিন দিয়েও শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। বিশেষ করে রোগীর যদি টাইপ টু ডায়াবিটিস থাকে, তবে প্রাতরাশ না করলে শরীরে ইনস্যুলিনের প্রভাব পড়বে না তেমন। পুষ্টিবিদ বলছেন, বহু গবেষণাতেও দেখা গিয়েছে, ডায়াবিটিসের রোগী নিয়মিত প্রাতরাশ না করায় তাঁর শরীরে আর ইনস্যুলিন কাজ করেনি। সে ক্ষেত্রে শর্করার মাত্রা বিপদসীমা ছাড়িয়ে গেলে তাকে নিয়ন্ত্রণের উপায় থাকবে না। ডায়াবিটিসে নিয়ন্ত্রণ না থাকলে তা থেকে হৃদ্রোগের ঝুঁকিও বাড়বে।
৩। টাইপ টু: যাঁদের রক্তে শর্করার মাত্রা ডায়াবিটিস রোগের সীমা ছুঁইছুঁই, তাঁদের ক্ষেত্রেও প্রাতরাশ জরুরি। কারণ নিয়মিত প্রাতরাশ না করলে, তাঁদের টাইপ টু ডায়াবিটিস হওয়ার সম্ভাবনা আরও বাড়বে।
৪। দৃষ্টিশক্তি: ডায়াবিটিসের রোগীদের নিয়মিত হাইপারগ্লাইসেমিয়া হতে থাকলে তা থেকে স্নায়ু, কিডনি, এমনকি দৃষ্টিশক্তিও নষ্ট হতে পারে।
৫। মানসিক সমস্যা: পু্ষ্টিবিদ কণিকা বলছেন, সব সময় যে ডায়াবিটিসের রোগীদের শারীরিক ক্ষতিই হয়, তা-ও নয়। মানসিক সমস্যাও হতে পারে। প্রাতরাশ না করলে ডায়াবিটিস রোগীরা যখন-তখন মেজাজ হারাতে পারেন, তাঁদের বিরক্তির উদ্রেক হতে পারে, এমনকি, তাঁরা যদি অফিসে কাজ করেন, তবে সেই কাজেও তার প্রভাব পড়তে পারে।
প্রাতরাশ ছাড়া আর কোনও সমস্যা হতে পারে কি?
পুষ্টিবিদ সুনীল শেট্টি বলছেন, ‘‘ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং মানেই যে প্রাতরাশ বাদ দিতে হবে, তা নয়। অনেকেই সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্তও খাওয়াদাওয়া করেন। উপোস করেন বিকেল ৫টার পর থেকে টানা ১৬ ঘণ্টা। যাঁরা ১৪:১০ অনুপাতে উপোস আর খাওয়াদাওয়ার সময় বেঁধে রাখেন, তাঁরা ৯টার সময় প্রাতরাশ দিয়ে শুরু করে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্তও খাওয়া দাওয়া করতে পারেন।’’ কিন্তু কণিকা বলছেন, তাতেও টানা ১৪ ঘণ্টা না খেয়ে থাকতে হবে ডায়াবিটিসের রোগীকে। যে হেতু একজন ডায়াবিটিস রোগীকে খাওয়াদাওয়া করতে হয় নিয়ম মেনে এবং সার্বিক স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্যই তাঁদের সব সময় রক্তে শর্করার মাত্রা বজায় রেখে চলতে হয়, তাই তাতেও ঝুঁকি থেকে যাবে।
তা হলে কী করবেন ডায়াবিটিস রোগীরা?
ডায়াবিটিসের রোগীদের ওজন কমানোর অন্য পদ্ধতি বেছে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন পুষ্টিবিদ কণিকা। তিনি বলছেন, ‘‘আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ-এর একটি গবেষণাপত্রে বলা হচ্ছে টাইপ টু ডায়াবিটিস রোগীরা ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করে ওজন কমিয়েছেন। কিন্তু একই সঙ্গে তাতে বলা হয়েছে, সে ক্ষেত্রে ডায়াবিটিস রোগীদের খাওয়াদাওয়ার ক্ষেত্রে কঠিন নিয়ম মানতে হয়েছে। যা দীর্ঘ মেয়াদে বজায় রাখা প্রায় অসম্ভব।’’ তাই কনিকার মতে, ডায়াবিটিসের রোগীরা যদি একান্তই ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করতে চান, তবে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে তবেই সিদ্ধান্ত নিন। নিজে থেকে কোনও সিদ্ধান্ত নিলে বহু প্রকার ঝুঁকি থেকে যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy