গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
১৭ জানুয়ারি তার জন্মদিন। বিচারও এল এই দিনেই। হুগলির গুড়াপে পাঁচ বছরের শিশুকে ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় ফাঁসির সাজা হল দোষীর। শনিবার এই রায় শোনালের চুঁচু়ড়া পকসো আদালতের বিচারক চন্দ্রপ্রভা চক্রবর্তী।
গুড়াপকাণ্ডে ফাঁসির সাজা হল প্রতিবেশী প্রৌঢ় অশোক সিংহের। ঘটনার ৫৫ দিনের মাথায় রায় ঘোষণা করল চুঁচুড়া আদালত। আদালতের রায়ের পর কেঁদে ফেলেন নির্যাতিতার মা। কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘‘আজ মেয়েটার জন্মদিন। জন্মদিনে কেক খেতে চেয়েছিল মেয়েটা! সেটা তো আর খাওয়াতে পারলাম না।’’ তবে পুলিশি তদন্ত এবং আদালতে বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে খুশি তিনি। বলেন, ‘‘পুলিশের উপরেই সব ছেড়ে দিয়েছিলাম। পুলিশ খুব ভাল কাজ করেছে। আদালতের রায়ে আমরা খুশি।’’
দোষীর ফাঁসির সাজা হওয়ার পরেই এক্স হ্যান্ডলে টুইট করেছেন পুলিশ প্রশাসন এবং বিচারবিভাগকে অভিনন্দন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি লিখেছেন, ‘‘গুড়াপে শিশুকে ধর্ষণ-খুনের মামলায় দোষীর ফাঁসির সাজা হয়েছে। এর জন্য বিচারবিভাগকে আমি ধন্যবাদ জানাই। হুগলি গ্রামীণ পুলিশ দ্রুত এবং সুষ্ঠু ভাবে তদন্ত শেষ করায় ৫৪ দিনেই বিচার এল।’’ ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ তথা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও লিখেছেন, ‘‘বাংলায় দ্রুত এবং আপোষহীন ভাবেই মেলে ন্যায়বিচার।’’
গত ২৪ নভেম্বর সন্ধ্যাবেলা বাড়ির সামনে থেকে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল ওই শিশু। বাজারে যাওয়ার সময় তাকে খেলা করতে দেখেছিলেন বাবা। ফিরে এসে মেয়ের খোঁজ না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। ডাকেন প্রতিবেশীদেরও। সকলে মিলে এলাকায় খোঁজাখুঁজি করতে গিয়েই অশোক সিংহ নামে প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে শিশুর দেহ উদ্ধার হয়েছিল। এর পরেই অভিযুক্ত প্রৌঢ়কে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। পরে প্রৌঢ়কে গ্রেফতার করে পুলিশ। গত বুধবার তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন বিচারক চন্দ্রপ্রভা চক্রবর্তী।
আদালত সূত্রে খবর, শিশুকে ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় গত ৯ ডিসেম্বর চার্জশিট জমা দিয়েছিল পুলিশ। চার্জ গঠন হয় ১১ ডিসেম্বর। এর পর এক মাসের মধ্যে ২৭ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ-সহ গোটা বিচারপ্রক্রিয়া শেষ করে সাজা ঘোষণা হল চুঁচুড়া আদালতে। সরকারি আইনজীবী গত বুধবার বলেছিলেন, ‘‘নতুন যে বিএনএস আইন এসেছে, তাতেই এত দ্রুত বিচারপর্ব শেষ হল। বিচারপর্ব শুরু হওয়ার পর বড়দিনের সময় সাত দিন ছুটি ছিল। না-হলে আরও আগে নিষ্পত্তি হত মামলার। এটা সম্ভব হয়েছে পুলিশের সঠিক তদন্তের ফলে।’’ সরকারি আইনজীবী জানিয়েছেন, শিশুর পরিবারকে ১০ লাখ টাকা দেওয়া হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শিশুটির বাড়ির পাশেই অশোকের বাড়ি। অনেক খোঁজাখুঁজির পর তার বাড়িতে কম্বল ও কাঠ দিয়ে চাপা দেওয়া অবস্থায় শিশুটির দেহ পাওয়া গিয়েছিল। অশোকের বিরুদ্ধে আগেও নানা ধরনের অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেগুলি ধামাচাপা পড়ে গিয়েছিল। স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘সন্ধ্যার পর থেকে আমরা সকলেই খোঁজাখুঁজি করছিলাম সেই দিন। অশোককেই আমাদের সন্দেহ হয়েছিল। পরে ওর বাড়ি থেকেই পাওয়া গিয়েছিল মেয়েটিকে। কাঠ, কম্বল চাপা দিয়ে রেখে দিয়েছিল। ওর স্বভাব খারাপ। নিজের মেয়ের সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করত। আগেও এমন কিছু ঘটনা ঘটিয়েছিল। পরে তা ধামাচাপা পড়ে যায়। আমরা ওর ফাঁসি চেয়েছিলাম।’’
আদালতের রায়ে খুশি গ্রামবাসীরাও। আদালত থেকে বেরোনোর পর সরকারি আইনজীবী এবং পুলিশ আধিকারিকদের বরণও করেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy