প্রতীকী ছবি।
অতিমারি পরিস্থিতিতে মজুতের তালিকা থেকে বাদ পড়েনি প্রাণদায়ী বায়ুও! যার জেরে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সরবরাহে ‘কৃত্রিম’ টান পড়েছে বলে অভিযোগ। কলকাতা, দুই ২৪ পরগনা এবং হাওড়ায় অক্সিজেন সরবরাহকারী সংস্থাগুলির বক্তব্য, সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে প্রয়োজন না-থাকলেও উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্তদের একাংশের মধ্যে অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুতের প্রবণতা বেড়ে গিয়েছে। যার প্রেক্ষিতে অক্সিজেনের জোগানে টান পড়ছে শুধু নয়, সিলিন্ডারের খরচও বাড়ছে!
শ্বাসকষ্টের রোগীদের জন্য বাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহের বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। তার মধ্যে একটি পদ্ধতি হল, নতুন সিলিন্ডার কিনে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে তা ভর্তি করা। সেই পদ্ধতি কারও পছন্দ না-হলে অনেকে সিলিন্ডার ভাড়া নেন। দুই পদ্ধতিতেই আচমকা অক্সিজেনের চাহিদা তরতরিয়ে বাড়তে শুরু করেছে বলে বেসরকারি স্বাস্থ্যসূত্রে খবর।
উত্তর কলকাতার এক ব্যবসায়ী জানান, আগে সপ্তাহে দু-তিনটি সিলিন্ডার বিক্রি করতেন তিনি। এখন প্রতিদিন আটটি করে সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে। ওই ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘প্রয়োজন না-থাকলেও বাড়িতে অনেকে লকডাউনের আগে চাল-ডাল-ডিমের মতো অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুত করছেন। বিদেশ থেকে সন্তানেরা প্রয়োজন না-থাকলেও বৃদ্ধ বাবা-মায়ের জন্য ফোন করে সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করে রাখছেন।’’
আরও পড়ুন: রাজ্যে করোনায় মৃত্যু হাজার ছুঁল, সংক্রমণের হার বেড়ে ১৪
আরও পড়ুন: দামি ওষুধে জোর কেন, সরব সাংসদেরা
অক্সিজেনের সিলিন্ডার ক্রয় বা ভাড়া নেওয়ার খরচ বেড়েছে। খালি সিলিন্ডার ভর্তির জন্য কেউ এক হাজার টাকা চাইছেন তো কেউ ৬০০ টাকা! হাওড়ার এক অক্সিজেন সরবরাহকারী ব্যবসা বলেন, ‘‘শুধু সিলিন্ডার দিলে তো হবে না। অক্সিজেন রোগীকে দেওয়ার জন্য যে ফ্লো-মিটার প্রয়োজন তারও তো জোগান নেই!’’
উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন আবাসনে সিলিন্ডার সরবরাহকারী সংস্থার কর্ণধার সৌম্যদীপ মণ্ডল বলেন, ‘‘প্রতিদিন অক্সিজেন চেয়ে ৫০-৬০টি ফোন পাচ্ছি। দু’টি কোম্পানি তো সিলিন্ডারই দিতে পারছে না!’’ তিনি জানান, ১৮০০ লিটার অক্সিজেন থাকে এমন সিলিন্ডারের দাম ১০ হাজার টাকা। তার সঙ্গে ফ্লো-মিটার, ন্যাজাল ক্যানুলা-সহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির খরচ আরও ২২০০ টাকা। দক্ষিণ কলকাতায় অবস্থিত অক্সিজেন সরবরাহকারী এক সংস্থার কর্তা জানান, ১৩২০ লিটার অক্সিজেনের জন্য তাঁরা ১১৮০০ টাকা নিচ্ছেন। ট্রলি নিলে আরও দু’হাজার টাকা বেশি। ওই সংস্থার কর্তা জানান, প্রতি মিনিটে দু’লিটার অক্সিজেন খরচ করলে ১৩২০ লিটারের সিলিন্ডারের ১১ ঘণ্টা চলবে। সৌম্যদীপ বলেন, ‘‘আনুষাঙ্গিক যন্ত্রপাতি আগে ১২০০ টাকায় কিনতাম। এখন কিনছি ১৮৫০ টাকায়। সিলিন্ডারের দাম যেখানে ৭-৮ হাজার টাকা ছিল, সেটা এখন ন’হাজার টাকা দিয়ে কিনছি।’’
সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহকারী সংস্থার পূর্বাঞ্চলের এক পদস্থ আধিকারিক জানান, সিলিন্ডার এবং আনুষাঙ্গিক যন্ত্রপাতির দাম আট থেকে ন’হাজার টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। সেই খরচই এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৫ হাজার টাকা। সিলিন্ডার ভর্তির খরচ ৩০০ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়। তিনি বলেন, ‘‘এখন যা পরিস্থিতি তাতে চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া বাড়িতে বা অফিসে অক্সিজেন সরবরাহের উপরে বিধিনিষেধ আরোপ করা উচিত। কোভিডে জীবনদায়ী ওষুধ হল অক্সিজেন, এটা সকলকে বুঝতে হবে!’’
সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশনের (সিডিএসসিও) পূর্বাঞ্চল কার্যালয়ের এক পদস্থ আধিকারিক জানান, মেডিক্যাল অক্সিজেন যেহেতু এক ধরনের ওষুধ তার ঘাটতি যাতে না হয়, সেই বিষয়টি রাজ্য সরকারগুলির মাধ্যমে নিশ্চিত করে ‘ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যাল প্রাইসিং অথরিটি’। ওই আধিকারিক বলেন, ‘‘ইতিমধ্যে কোভিডের আগে এবং কোভিডের পরে মেডিক্যাল অক্সিজেনের উৎপাদন ও সরবরাহ কেমন রয়েছে, সেই সংক্রান্ত তথ্য রাজ্যগুলির কাছে চাওয়া হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy