(বাঁ দিকে) আরজি কর-কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার। শিয়ালদহ আদালত চত্বর (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
অবশেষে! গত ৯ অগস্ট আরজি করে মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের যে ঘটনার পর রাস্তায় নেমেছিল কলকাতা-সহ সারা দেশ, যে বিচারের দাবিতে রাস্তায় নেমেছিল আট থেকে আশি, অবশেষে সেই ‘বিচার’-এর রায় দেওয়ার দিন আসছে শনিবার। আরজি কর-কাণ্ডের রায় ঘোষণা করা হবে শিয়ালদহ আদালতে। আগের দিন শুক্রবার সেখানে ‘বড়’ দিনের প্রস্তুতি তুঙ্গে।
অন্য পাঁচটা দিনের মতোই শুক্রবারও সকাল থেকে শিয়ালদহ আদালতে চেনা ব্যস্ততা। নানা ধরনের মামলা-মোকদ্দমা নিয়ে আসছেন সাধারণ মানুষ। ব্যস্ত পায়ে সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করছেন, ফাইল ঘাঁটছেন আইনজীবীরা। কিন্তু তার মধ্যেও কোথাও যেন একটা চাপা উত্তেজনা। ইতিউতি কানাঘুষো চলছে। মধ্যেমধ্যে আইনজীবীদের জটলায় উঠে আসছে শনিবারের ‘বড়’ দিনের প্রসঙ্গ। কেউ কেউ আঙুল তুলে আদালত ভবনের তিনতলার দিকে ইঙ্গিতও করছেন। শুক্রবার সেখানে আইনজীবীদের একটি অনুষ্ঠান চলছিল। রাত পোহালে সেখানেই বসবে বিচারের এজলাস। আদালত ভবনের তিনতলার একটি কক্ষে আরজি কর-কাণ্ডের রায় ঘোষণা করবেন বিচারক অনির্বাণ দাস।
নিরাপত্তার প্রাচীর
শিয়ালদহ আদালতে যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর মিলবে শনিবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ। তখন এজলাসে বসবেন বিচারক অনির্বাণ দাস। পাশের ২১১ নম্বর ঘর থেকে এজলাসে নিয়ে আসার কথা অভিযুক্ত সিভিককে। বিচারপ্রক্রিয়ার মতো রায় ঘোষণাও রুদ্ধদ্বার কক্ষে হবে কি না, শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত তা নিয়ে জল্পনা ছিল। আদালত চত্বরে নিরাপত্তার বিষয়টিও এখনও স্পষ্ট নয়। নিরাপত্তার কারণেই পুলিশ সূত্রে বা আদালত সূত্রে শনিবারের ব্যবস্থাপনা নিয়ে কোনও তথ্য প্রকাশ্যে আনা হয়নি। আরজি কর মামলার বিচারপর্বের শুরু থেকে ‘নিশ্ছিদ্র’ নিরাপত্তায় ধৃতকে নিয়ে আদালতে যাতায়াত করেছে পুলিশ। রুদ্ধদ্বার কক্ষে বিচারপ্রক্রিয়া চলাকালীনও আদালত চত্বরে নিরাপত্তা কমানো হয়নি। ফলে শনিবার যে নিরাপত্তা আরও কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হবে, তা সহজেই অনুমেয়।
আদালত কখন? রায় কখন?
আইনজীবীদের মধ্যে তো বটেই, আদালত চত্বরে সাধারণ মানুষের মধ্যেও শনিবার নিয়ে কৌতূহল কম নয়। শিয়ালদহ আদালত চত্বর এমনিতেই জনবহুল এবং সেই সুবাদে ঘটনাবহুলও বটে। কাছেই শিয়ালদহ স্টেশন। সেখানে প্রতি দিন লক্ষ লক্ষ মানুষের আনাগোনা। রয়েছে বাজার, ছোটখাটো অজস্র দোকানপাট। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়ে প্রায় প্রত্যেকেই তাকাচ্ছেন আদালত ভবনের দিকে। মামলার জন্য যাঁরা এসেছেন, কেউ কেউ উঁকি দিচ্ছেন তিনতলাতেও। এক অতি উৎসাহী যুবক তো সাংবাদিক দেখে প্রশ্নই করে বসলেন, ‘‘কাল কোর্ট কখন বসবে? রায় ঘোষণা কখন?’’
তিনতলার ২১০
গত কয়েক বছরে রাজ্যে ‘ওজনদার’ মামলা এবং ততোধিক ‘ওজনদার’ বিচারাধীন বন্দি দেখা গিয়েছে। কিন্তু মন্ত্রী থেকে শুরু করে উচ্চপদস্থ সরকারি আধিকারিক— কারও মামলাই এর আগে শিয়ালদহ আদালতে আসেনি। সেই কারণেই আরজি কর মামলা শিয়ালদহ আদালতের ‘গুরুত্ব’ বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে কোনও ত্রুটি রাখতে চাইছেন না আদালতের কর্মীরা। সিঁড়ি দিয়ে তিনতলায় উঠে বাঁ দিকে মোড় ঘুরলেই ২১০ নম্বর ঘর। সেখানেই এজলাস বসে। শনিবারেও বসবে। এজলাসের এক প্রান্তে বিচারকের আসন। আসনের পিছনের দেওয়ালে মহাত্মা গান্ধীর ছবি। শনিবার রায় ঘোষণার প্রক্রিয়া যাতে মসৃণ হয়, তাই এজলাসে আগেভাগেই সব গুছিয়ে রাখা হয়েছে। মামলার সঙ্গে সম্পর্কিত যাবতীয় কাগজপত্র, নথি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসও শুক্রবারেই এনে রাখা হয়েছে।
ভিড় কম, উৎসাহ নয়
বিচার শুরুর প্রথম থেকেই আদালতে উৎসাহীদের ভিড় ছিল। মূল অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ারকে যখন আদালতে নিয়ে আসা হত বা যখন আরজি কর হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ, টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকে শিয়ালদহ আদালতে আনা হয়েছিল, বহু সাধারণ মানুষ তাঁদের ঘিরে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন। সিবিআই চার্জশিট জমা দেওয়ার পরে রুদ্ধদ্বার কক্ষে মামলার বিচার শুরু হয়। তখন ভিড় কমলেও উৎসাহে ভাটা পড়েনি। গত ৯ জানুয়ারি আদালত জানিয়ে দেয়, বিচারপ্রক্রিয়া শেষ। সাজা ঘোষণা ১৮ জানুয়ারি। তার পর থেকে উত্তেজনার পারদ আরও চড়তে শুরু করেছে।
বিচারের অপেক্ষা
নির্যাতিতার পরিবারের আইনজীবী আশাবাদী যে, তাঁরা ‘কাঙ্ক্ষিত’ বিচার পাবেন। নির্যাতিতার বাবা-মা আদালতে বরাবর দাবি করে এসেছেন, কোনও এক জনের পক্ষে এই কাণ্ড ঘটানো সম্ভব নয়। আরও বিশদ, আরও নিখুঁত তদন্ত করতে হবে সিবিআইকে। শুক্রবার আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে তাঁদের আইনজীবী অমর্ত্য দে বললেন, ‘‘আমরা প্রথম থেকেই বলছিলাম, শুধু সিভিক নয়, আরও কেউ এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত। আশা করছি, শনিবারের রায়ে সে দিকেও আলোকপাত করা হবে।’’
শাস্তির কলম
রায় কী হতে পারে, তা নিয়ে বিচিত্র জল্পনা আদালত চত্বরে। কেউ চান অভিযুক্ত সিভিকের সর্বোচ্চ শাস্তি। কেউ আবার বলছেন, ‘‘সিভিক তো বলির পাঁঠা! আসল চক্রীদের শাস্তি চাই’’। অনেকে আবার দোষী সাব্যস্ত হলেও মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে মত দিতে পারছেন না। আইনের পাড়ায় যাঁরা ঘোরাফেরা করেন, তাঁদের মধ্যে একটা কথা প্রচলিত আছে— যে কলম দিয়ে ফাঁসির শাস্তিতে স্বাক্ষর করা হয়, সেই কলম থেকে আর কখনও কোনও অক্ষর বার হয় না। মৃত্যুদণ্ডে স্বাক্ষর করে কলমটি চিরকালের মতো বন্ধ করেন বিচারক, ভেঙে দেওয়া হয় তার নিব। শিয়ালদহের আদালত চত্বরে শুক্রবার আলোচনা সেই কলম নিয়েও। আরজি কর-কাণ্ডে কি সর্বোচ্চ শাস্তি শোনানো হবে? যদি হয়, তা হলে কী হবে সেই শাস্তি দেওয়া কলমটির? কোন কলমে দণ্ডে স্বাক্ষর করবেন বিচারক অনির্বাণ দাস? আইনজীবীরাও কৌতূহলী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy