Advertisement
৩০ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus in West Bengal

বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে কোভিড-শয্যা বাড়ানোর প্রস্তাব

স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে নতুন করে মোট ৪০৫ জনের করোনা ধরা পড়েছে।

স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন জানাচ্ছে, তার পরে আট দিনে শুধু কলকাতায় আক্রান্ত হয়েছেন ১০৬০ জন। ছবি: পিটিআই।

স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন জানাচ্ছে, তার পরে আট দিনে শুধু কলকাতায় আক্রান্ত হয়েছেন ১০৬০ জন। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০২০ ০৪:১৪
Share: Save:

শহরের রাস্তায় চলাচলে লকডাউন ওঠার এক সপ্তাহ পরে কলকাতায় রেকর্ড সংখ্যক করোনা-আক্রান্তের হদিস মিলল মঙ্গলবার। এ দিনই রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশনের তরফে বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে কোভিড-শয্যা বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের একাংশের বক্তব্য, পরিস্থিতি সামাল দিতে শহরের প্রতিটি বেসরকারি হাসপাতালেই যাতে করোনার জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক শয্যা বরাদ্দ রাখা হয়, সেই বিষয়ে নির্দেশিকা দেওয়া উচিত।

স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে নতুন করে মোট ৪০৫ জনের করোনা ধরা পড়েছে। তাঁদের মধ্যে ১৭০ জনই কলকাতার বাসিন্দা! রাজ্যে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১১,৯০৯। কলকাতায় ৩৯৪৬।

সরকারি কর্মীরা ৮ জুন থেকে অফিসে যেতে শুরু করেছেন। রাস্তায়, বাজারে, অটোয়, বাসে যাতায়াতও বেড়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন জানাচ্ছে, তার পরে আট দিনে শুধু কলকাতায় আক্রান্ত হয়েছেন ১০৬০ জন। আনলক-পর্বের পরে করোনা রোগীর সংখ্যা যে উত্তরোত্তর বাড়ছে, বেসরকারি হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্তাদের বক্তব্যেও তা স্পষ্ট। তাতে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান অসীম বন্দ্যোপাধ্যায়ের এ দিনের আবেদন।

আরও পড়ুন: করোনায় মৃত্যুতে বিশ্বে অষ্টম ভারত, আক্রান্ত ৩ লক্ষ ৪৩ হাজার

বঙ্গে আক্রান্ত ১১,৯০৯
অ্যাক্টিভ রোগী ৫৩৮৬
২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ৪১৫
২৪ ঘণ্টায় মৃত ১০
মোট মৃত ৪৯৫
কো-মর্বিডিটির কারণে মৃত ৩৪৭

(সূত্র: রাজ্য সরকার)

বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা সূত্রের খবর: আবেদনে অসীমবাবু জানান, করোনা রোগী যে-ভাবে বাড়ছে, তাতে আরও শয্যার প্রয়োজন হবে। সব বেসরকারি হাসপাতালকে অন্তত ৫০ শয্যার করোনা ওয়ার্ড তৈরি করুক। তবে বাধ্যবাধকতা নেই। বেসরকারি হাসপাতালগুলি রাজি হলে ওয়ার্ড তৈরির জন্য কর্মী-সহ আনুষঙ্গিক যে-ধরনের সহযোগিতা লাগবে, তা করা হবে বলে জানান অসীমবাবু।

বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের একাংশের বক্তব্য, স্বাস্থ্য দফতর যা চাইছে, কার্যত সেটাই বলা হয়েছে কমিশনের মাধ্যমে। কিন্তু শুধু আবেদনে কতটা কাজ হবে, তা নিয়ে সন্দিহান বেসরকারি হাসপাতালের অনেকে। তাঁদের মতে, দিল্লি, মহারাষ্ট্রের মতো এ রাজ্যেও মোট শয্যার কত শতাংশ করোনা রোগীদের জন্য রাখতে হবে, সেটা পরিষ্কার ভাবে জানিয়ে দেওয়া উচিত।

পিয়ারলেস হাসপাতালের সিইও সুদীপ্ত মিত্র বলেন, ‘‘অনেক রোগী এক ধরনের সমস্যা নিয়ে আসছেন। নমুনা পরীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, করোনা পজ়িটিভ। বহির্বিভাগ থেকে রোজ গড়ে ৪-৫ জনের দেহে ভাইরাস পাওয়া যাচ্ছে। অস্ত্রোপচারের আগে নমুনা পরীক্ষার সময়েও কোভিড ধরা পড়ছে। আমাদের ৩৮টি শয্যা আছে। আরও একটি ওয়ার্ড গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু সব হাসপাতাল করোনা রোগীর চিকিৎসা শুরু না-করলে এই চাপ সামলানো মুশকিল।’’

ফর্টিস আনন্দপুরের চিফ অব মেডিক্যাল সার্ভিস আরাফত ফয়জলের বক্তব্য, মাত্র ১১,৯০০ কেসে রাজ্যের এই অবস্থা হলে দিল্লি, মহারাষ্ট্রের মতো পরিস্থিতির জন্য এখনই পরিকল্পনা করা উচিত। তিনি বলেন, ‘‘মৃদু উপসর্গযুক্ত রোগীদের বাড়িতে থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু যাঁদের সেই সুযোগ নেই, তাঁরা কোথায় যাবেন? এ-সব ক্ষেত্রে নিভৃতবাসের জন্য হোটেল ইন্ডাস্ট্রিকে এগিয়ে আসতে হবে।’’ মেডিকার কর্ণধার অলোক রায় জানান, রাজ্য সরকারের অনুরোধে উপসর্গহীন এবং মৃদু উপসর্গ রয়েছে, এমন আক্রান্তেরা বাড়িতে থাকতে না-চাইলে একটি গেস্ট হাউসের ব্যবস্থা করেছেন তাঁরা। রোগীর চাপ সামলাতে উপসর্গহীন ও অল্প উপসর্গযুক্তদের বাড়িতে থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান আরএন টেগোর হাসপাতালের কর্তৃপক্ষও। আমরি গ্রুপের সিইও রূপক বড়ুয়া জানান, তাঁরা ১৪ দিনের একটি প্যাকেজের ব্যবস্থা করেছেন।

স্বভূমি সংলগ্ন একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক শুদ্ধসত্ত্ব চট্টোপাধ্যায় জানান, করোনা রোগীর চিকিৎসার জন্য শুধু ওয়ার্ড খুললে চলবে না। এই রোগের চিকিৎসার পরিকাঠামো রয়েছে কি না, দেখতে হবে সেটাও। তিনি বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে এখন অন্যতম চ্যালেঞ্জ হল ডেঙ্গি-কোভিড যুগলবন্দি। করোনা পজ়িটিভ হলে ডেঙ্গি ফলস পজ়িটিভ চলে আসতে পারে। এ ক্ষেত্রে দুই রোগেরই চিকিৎসা করতে হবে, এমন সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। উপসর্গহীন ব্যক্তিরা তো রয়েছেনই।’’

এ দিনের বুলেটিনের সূত্র ধরে স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের একাংশ জানান, বাংলায় এখন অ্যাক্টিভ কেসের তুলনায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরা রোগীর সংখ্যা বেশি। গত ২৪ ঘণ্টায় মোট আক্রান্ত ৪১৫ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৫৩৪ জন। সুস্থতার হার ৫০.৬১ শতাংশ। এক আধিকারিকের বক্তব্য, পরিস্থিতির উপরে নজর রাখা হচ্ছে। সময় অনুযায়ী যথাযথ পদক্ষেপ করা হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus in West Bengal Coronavirus COVID-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy