Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus in West Bengal

‘হটস্পটে’ পূর্ণ গৃহবন্দি রাজ্যে

কিসের ভিত্তিতে সরকার ‘হটস্পট’ বাছাই করেছে?

‘হটস্পটে’ এই দৃশ্যও দেখা যাবে না।—ছবি পিটিআই।

‘হটস্পটে’ এই দৃশ্যও দেখা যাবে না।—ছবি পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২০ ০৩:৪০
Share: Save:

করোনা সংক্রমণের ক্ষেত্রে কয়েকটি জায়গাকে ‘হটস্পট’ হিসেবে চিহ্নিত করে সেখানে ‘কমপ্লিট লকডাউন’ বলবৎ করতে চলেছে রাজ্য সরকার। শুক্রবার নবান্নে এ সিদ্ধান্ত জানান মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ। তিনি এ-ও জানান, রাজ্যে করোনা সংক্রমণ ঘটেছে মূলত ৯-১০টি জায়গায়। নবান্নের খবর, উত্তরবঙ্গের ১টি ও কলকাতা, হাওড়া, নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুরের কয়েকটি জায়গা পূর্ণ লকডাউনের আওতায় পড়ছে।

সম্পূর্ণ ‘লকডাউন’ প্রসঙ্গে মুখ্যসচিব বলেন, ‘‘মানুষের অসুবিধা হবে। কিন্তু আমাদের আর কোনও উপায় নেই। রোগ যাতে ছড়িয়ে না-পড়ে, সেই জন্য চিহ্নিত এলাকাগুলিতে কাউকে বেরোতে দেওয়া হবে না। কেউ ওই এলাকায় ঢুকতে পারবেন না।’’ পরিস্থিতি বিচার করে সরকার পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। নবান্ন সূত্রের খবর, আপাতত অন্তত ১৪ দিন এই ব্যবস্থা বহাল থাকবে। এবং স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসন বাসিন্দাদের প্রয়োজনমতো সব সাহায্য করবে।

কিসের ভিত্তিতে সরকার ‘হটস্পট’ বাছাই করেছে? মুখ্যসচিব জানান, দেখা যাচ্ছে, ১১টি পরিবার থেকেই ৬০টির বেশি কোভিড সংক্রমণ হয়েছে। কালিম্পং, হলদিয়া, এগরা, হাওড়া, কলকাতায় দেখা গিয়েছে, এক জনের সংক্রমণ থেকে তা দ্রুত প্রতিবেশী বা পরিবারে ছড়িয়ে গিয়েছে। ফলে পজ়িটিভ করোনা সংক্রমণ দেখেই ‘হটস্পট’ বাছাই করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, স্বাস্থ্য দফতর চার-পাঁচটি স্তরে প্রযুক্তি ব্যবহার করে তা নির্ধারণ করেছে। কোনও একটি গ্রামে সংক্রমণ ছড়াতে শুরু করলে সেটি ‘হটস্পট’। গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাটি হবে ‘ক্লাস্টার’। সম্পূর্ণ লকডাউনে এই দু’ধরনের এলাকাতেই মানুষের মেলামেশায় নিষেধাজ্ঞা থাকছে। শুক্রবার কলকাতা-সহ সাতটি জেলার প্রশাসনিক এবং পুলিশকর্তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে ভিডিয়ো বৈঠক করেন মুখ্যসচিব।

সম্পূর্ণ লকডাউন

• ওই সব এলাকায় সব রাস্তা ও বাজার বন্ধ

• কাউকে বাইরে বেরোতে দেওয়া হবে না

• কাউকে এলাকায় ঢুকতেও দেওয়া হবে না

• নতুন করে আক্রান্ত ১২

• সুস্থ হয়ে বাড়িতে ৩

• অ্যাক্টিভ করোনা পজ়িটিভ রোগী ৮৯

• মৃত্যু ৫

• নমুনা পরীক্ষা ২০৯৫

• হাসপাতাল আইসোলেশনে ৪৮৩০

• গত ২৪ ঘণ্টায় ছাড়া পেয়েছেন ৪৫০

• ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে এসেছেন ১১৩

• গৃহ পর্যবেক্ষণে ৪৪৪৭৪

• ২৪ ঘণ্টায় ছাড়া পেয়েছেন ১৩৮৮

• ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে রাখা হয়েছে ২৪৪

(নবান্নে মুখ্যসচিবের বক্তব্য অনুযায়ী)

কলকাতা পুর এলাকার ক্ষেত্রে ওয়ার্ডভিত্তিক ‘হটস্পট’ হবে, নাকি অন্য পদ্ধতির সাহায্য নেওয়া হবে, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে। পুরসভা সূত্রের খবর, শহরের যে-ক’টি ওয়ার্ডে করোনা পজ়িটিভ কেস মিলেছে, সেগুলিতে বাড়তি নজর দিতে বলা হয়েছে। হাওড়ায় করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় চারটি এলাকা ‘হটস্পট’ চিহ্নিত করে সিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছে হাওড়া সিটি পুলিশ। সুপার ও এক স্বাস্থ্যকর্মীর করোনা পজিটিভ হওয়ায় হাওড়া হাসপাতাল অনির্দিষ্ট কাল বন্ধ রাখার কথা ভাবছে জেলা প্রশাসন। পূর্ব মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিতাইচন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘তমলুকের দু’টি গ্রাম সিল হয়েছে।’’

তবে আশার কথাও শুনিয়েছেন মুখ্যসচিব। তিনি বলেন, ‘‘গত এক সপ্তাহ ধরে আট থেকে ১২টির বেশি নতুন সংক্রমণের খবর আসেনি। সে-দিক থেকে কিছুটা ভাল খবর। তবে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে না, এমনটা এখনই বলা উচিত হবে না। সরকার সব ধরনের ব্যবস্থাই করছে।’’ তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে ১২টি নতুন সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। তিন জনের নতুন করে নেগেটিভ রিপোর্ট আসায় রাজ্যে এখন অ্যাক্টিভ করোনা রোগীর সংখ্যা ৮৯। নতুন করে কোনও রোগীর মৃত্যু হয়নি। রাজ্যে করোনায় মৃতের সংখ্যা পাঁচ।

এ দিকে, ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চের (আইসিএমআর) সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন রাজ্যে জ্বর-শ্বাসকষ্টের উপসর্গ থাকা রোগীদের (সিভিয়র রেসপিরেটরি ইলনেস বা সারি) মধ্যে করোনা সংক্রমণ পাওয়া যাচ্ছে এবং তাঁদের কারও কারও বিদেশ বা অন্যত্র যাতায়াতের যোগ নেই। এই তালিকায় পশ্চিমবঙ্গ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে মুখ্যসচিব বলেন, ‘‘এই কঠিন সময়ে কেন্দ্র ও রাজ্য একযোগে কাজ করছে। পারস্পরিক যোগাযোগ রেখেই পদক্ষেপ করছে সরকার।’’

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE