—ফাইল চিত্র।
দিন কতক আগে সপরিবার করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন তাঁর কাকা। তখনই অন্য বিপত্তিটা মালুম হয়েছিল তাঁর।
কোনও বাড়িতে কেউ সংক্রমিত হয়েছেন জানলে এমনিই লোকে অচ্ছুৎ করে রাখে। তখন কে কার মুখে খাবার তুলে দেয়? তাঁর সোদপুরের কাকাবাবুর পাশে ছিলেন প্রতিবেশীরা। কিন্তু যাদের পাশে প্রতিবেশীরা নেই?
সাতপাঁচ ভেবে নবদ্বীপ শহরের ষষ্ঠীতলায় নিজের বাড়িতেই ‘কোভিড কিচেন’ খুলে ফেলেছেন নবদ্বীপ ব্লাড ব্যাঙ্কের তরুণ কর্মী শান্তনু চক্রবর্তী। আক্রান্তদের বাড়ি বাড়ি রান্না করা খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন তাঁরা।
সকাল সাড়ে ৮টা বাজলেই এখন শান্তনুদের বাড়িতে তুমুল ব্যস্ততা। তিন জনের হেঁশেলে এখন প্রায় তিরিশ জনের কড়াই ঠেলছেন তাঁর মা সন্ধ্যা আর স্ত্রী শর্মিষ্ঠা। সাতসকালে বাজার থেকে টাটকা আনাজ আর মাছ নিয়ে আসছেন শান্তনু নিজেই। শাশুড়ি-বউমার রান্না শেষ হতে বেলা সাড়ে ১১টা। বেলা সাড়ে ১২টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দেওয়ার পালা। সে কাজে শান্তুনুর সঙ্গী একঝাঁক বন্ধু। তাঁরা ‘ড্রাগন বয়েজ়’ নামে সেই স্কুলবেলা থেকে খেলাধুলো বা কুইজ়ে লড়তে নামতেন। এখন তাঁরাই ফয়েলে প্যাক করে সাইকেল কিংবা মোটরবাইকে খাবার পৌঁছে দিয়ে আসছেন চারিচার পাড়া থেকে প্রাচীনমায়াপুর— শহরের নানা প্রান্তে। বিনা মূল্যেই।
শান্তনু বলছেন, “নিজে সরকারি হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুবাদে জানি, করোনা আক্রান্তদের শারীরিক সমস্যার চেয়েও অনেক ক্ষেত্রে সামাজিক সমস্যা বেশি হচ্ছে। যেন অস্পৃশ্য। হাতে টাকা থাকলেও পাচ্ছেন না খাবার, ওষুধ। একটি পরিবারের সকলে আক্রান্ত হলে তো অবস্থা সহজেই অনুমেয়। সেটা আরও বেশি করে বুঝেছি কাকার অসুস্থতার সময়ে। তখনই ঠিক করি, খাবার পৌঁছে দেওয়ার কাজ করব। বাড়িতে বলতেই মা আর স্ত্রী রান্নার দায়িত্ব নিয়ে গেলেন। আর ড্রাগন বয়েজ় তো এক পায়ে খাড়া।”
বিধানসভা ভোটের ফল বেরনোর এক দিন পর থেকেই চালু হয়েছে তাঁদের এই ‘কোভিড কিচেন’। প্রথম দিন দু’টি পরিবার দিয়ে কাজ শুরু হয়েছিল, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২টি পরিবারে। সাধারণত ভাত, রুটি, দু’রকম সব্জি, ডিম, মাছ, সাদা দই দেওয়া হচ্ছে। শান্তনু বলেন, “আমি নিজে এক জন স্বাস্থ্যকর্মী, তাই ব্যালান্সড ডায়েটের বিষয়টা কিছুটা জানি। ভাতের সঙ্গে তেতো বা শুক্তো, দু’রকম সব্জি, তার সঙ্গে সয়াবিন, ডিম, মাছ ইত্যাদি পাল্টাপাল্টি করে দিচ্ছি। কোনও দিন বন্ধুরা হয়ত সঙ্গে সাদা দই দিল।” প্রথমে তাঁরা দু’বেলা ভাতের ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু পরে অনেকে রুটি চান। যাঁরা যেটা খান, তাঁদের সেটাই দেওয়া হচ্ছে। দু’বেলার খাবার একই সঙ্গে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে আলাদা প্যাকে।
ওই সব পরিবারের যে সদস্যেরা নবদ্বীপ হাসপাতালে ভর্তি আছেন, তাঁদের কাছেও দরকারি জিনিস পৌঁছে দিচ্ছেন ওঁরা। “কেউ হয়ত বিস্কুট, কেক কিংবা পেয়ারা-আপেল খেতে চাইছেন বাড়ির লোকের কাছে। কারও হয়ত চাই বিশেষ ব্র্যান্ডের বিস্কুট বা টুথপেস্ট। কিন্তু আক্রান্তের বাড়ির লোকেরা হয় নিজেরাও অসুস্থ অথবা গৃহ নিভৃতবাসে। তাঁদের হয়ে আমরাই পৌঁছে দিচ্ছি সে সব”— জানাচ্ছেন ওঁরা। এই অতিমারিতে আক্রান্তদের জন্য দৌড়ঝাঁপ করতে ভয় করছে না? শান্তনুরা হাসছেন, বলছেন— “ভীষণ ভাল লাগছে। সবাই মিলেই বাঁচব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy