Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
COVID-19 Vaccine

মাস্ক ছাড়াই রোগী দেখছেন ডাক্তার, ধূপগুড়িতে চরম অসচেতনতার ছবি

অনলাইনে নাম নথিভুক্ত করা নিয়েও ধুন্ধুমার বাধে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে।

মাস্ক ছাড়াই বসে রয়েছেন ডাক্তার, সামনে রোগী।

মাস্ক ছাড়াই বসে রয়েছেন ডাক্তার, সামনে রোগী। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ধূপগুড়ি শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২১ ১৯:৫৯
Share: Save:

সংক্রমণের শৃঙ্খল ভাঙতে বিধিনিষেধের উপর জোর দিচ্ছে সরকার। প্রচার চলছে জায়গায় জায়গায়। তার পরেও অসচেতনতার ছবি ধরা পড়ছে ভূরি ভূরি। এ বার দেখা গেল স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভিতরেই মাস্ক না পরে রোগী দেখছেন এক চিকিৎসক। রাজ্যে দৈনিক সংক্রমণ যখন ১৭ হাজার পেরিয়ে গিয়েছে, তখন করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামনের সারিতে থাকা চিকিৎসকের এমন গা ছাড়া মনোভাবে স্বাস্থ্যদফতরের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে।

বৃহস্পতিবার ধূপগুড়ির সাকোয়াঝোরা ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত ডুডুয়া নদীর পাড় সংলগ্ন একটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ঘটনা। সকাল থেকে প্রবীণ নাগরিকদের প্রথম ডোজের টিকাকরণ চলছিল সেখানে। তার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এসে ভোর ৫টা থেকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বাইরে লাইন দিয়েছিলেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড়ও বাড়তে থাকে। তাতে শিকেয় ওঠে স্বাস্থ্যবিধি।

সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা তো দূর, টিকা নিতে এসে ইতিউতি গা ঘেঁষে জটলা করে বসে গল্পগুজব করতে দেখা যায় মহিলা এবং পুরুষদের। তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগেরই মাস্ক থুতনির নীচে ঝুলছিল। কিন্তু ভিতরে ঢুকে আরও অবাক হওয়ার পালা। দেখা যায়, মাস্ক না পরেই একের পর এক রোগী দেখে যাচ্ছেন চিকিৎসক দেবাশিস দাস। এত মানুষের আনাগোনা সত্ত্বেও মাস্ক না পরে বসে রয়েছেন কী ভাবে জানতে চাওয়া হয় তাঁর কাছে। কিন্তু আনন্দবাজার ডিজিটালের প্রশ্ন এড়িয়ে যান তিনি।

টিকা নিতে এসে জটলা।

টিকা নিতে এসে জটলা। —নিজস্ব চিত্র।

স্বয়ং চিকিৎসকের মুখে যখন মাস্ক নেই, সেখানে রোগীরা বিধিনিয়ম মানবেন কেন? তাতেও নির্বিকার দেবাশিসবাবু। এর পরেই কার্যত ধুন্ধুমার শুরু হয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বাইরে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী অনলাইনে নাম নথিভুক্ত করে যাঁরা টিকা নিতে এসেছেন, তাঁরাই আগে ডোজ পাবেন বলে যেই না ঘোষণা করেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এক কর্মী, ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ। বিক্ষুব্ধরা জানান, অনলাইনে কী ভাবে নাম নথিভুক্ত করতে হয়, তা জানা নেই তাঁদের।

আবার লাইন ধরে কেন টিকা দেওয়া হবে তা নিয়ে আপত্তি তোলেন অনলাইনে নাম নথিভুক্ত করে আসে লোকজনও। পূর্ব গয়েরকাটার বাসিন্দা সুবল রায় বলেন, ‘‘অনলাইনে আগে থেকে নাম তুলে রেখেছি। তা-ও এখানে এসে লাইন দেব কেন? নাম নথিভুক্ত না করেই লাইনে দাঁড়িয়েছেন অনেকে। সামনের দিকে রয়েছেন বলেই আগে টিকা দিতে হবে ওঁদের? তাহলে সরকার অনলাইন নাম নথিভুক্তিকরণ চালু করল কেন? আজ যদি টিকা না পাই, রোজ রোজ এ ভাবে কাজ বন্ধ করে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব কি? ’’

এমন পরিস্থিতিতে বিক্ষুব্ধদের শান্ত করতে এগিয়ে আসেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মীরা। কিন্তু তাতে দু’পক্ষের মধ্যে বচসা বেধে যায়। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পানীয় জলের ব্যবস্থা না থাকা নিয়েও বিক্ষোভ দেখান মানুষ জন। পরিস্থিতি এতটাই তেতে ওঠে যে ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছয় পুলিশ। তাদের ঘিরে ধরেও বিক্ষোভ চলতে থাকে। বেশ কিছু ক্ষণ এ ভাবে চলার পর টিকা না নিয়েই বাড়ি ফিরে যান অনেকে। শেষমেশ ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছন ধূপগুড়ি ব্লকের স্বাস্থ্য আধিকারিক সুরজিৎ ঘোষ। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করে করজোড়ে সকলকে ধৈর্য রাখতে অনুরোধ জানান তিনি। অনলাইনে যাঁরা নাম নথিভুক্ত করিয়েছেন, টিকা নেওয়ার জন্য ধূপগুড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে পৃথক ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। তার পরই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE