সরকারি জমি দখল নিয়ে সাম্প্রতিক কালে সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বেআইনি দখলদারদের কড়া হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন। সজাগ থাকতে নির্দেশ দিয়েছিলেন স্থানীয় প্রশাসনকেও। সেই প্রশাসনের বিরুদ্ধেই সরকারি জমি দখলে সরাসরি সাহায্য করার অভিযোগ উঠেছিল শিলিগুড়িতে। অভিযোগ ছিল, পঞ্চায়েত প্রধানই শংসাপত্র দিয়ে এক ব্যক্তিকে সরকারি জমি পাইয়ে দিয়েছেন! আনন্দবাজার অনলাইনের সেই খবর প্রকাশিত হওয়ার পরেই শুক্রবার ওই জমি দখলমুক্ত করলেন ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরের আধিকারিকেরা।
ফাঁসিদেওয়ার বিডিও বিপ্লব বিশ্বাস আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘আপনাদের খবর প্রকাশের পরেই আমরা বাগডোগরা থানার পুলিশ ও বিএলআরও-কে জানাই। যারা ওই জমিতে কাজ করছিল, তাদের কাজ থেকে বিরত রাখা হয়। আজ আমরা ও ভূমি ও রাজস্ব দফতরের আধিকারিকেরা মিলে জায়গাটি দখলমুক্ত করে সেখানে সরকারি সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিয়েছি। অন্য দিকে পঞ্চায়েত প্রধানকে আমরা সতর্ক করেছি এবং কেন উনি শংসাপত্র দিলেন, তার জবাবও আমরা চেয়েছি।’’
শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের অন্তর্গত ফাঁসিদেওয়ার হেটমুড়ি সিঙিঝোড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘটনা। অভিযোগ, পঞ্চায়েত এলাকার লচকা নদীর চরে প্রায় এক বিঘা সরকারি জমি রয়েছে। অভিযোগ, সেই জমিটি গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান জগন্নাথ রায় গত ৩১ জানুয়ারি জনৈক সিপেন সিংহের নামে লিখে দিয়েছেন! সিপেনকে একটি শংসাপত্রও দিয়েছিলেন প্রধান।
বিষয়টি নিয়ে বিতর্কের মুখে জগন্নাথ বলেছিলেন, ‘‘আবেদন করা হয়েছিল। আমি শংসাপত্র দিয়েছি। আমি তো আর জমিটি ওই ব্যক্তির নামে লিখে দিইনি। সেটা তাঁর দখলে রয়েছে। সেটাই লিখেছি মাত্র। জমিটি বহু দিন ধরে তাঁদের দখলে। সেখানে একটি বাঁশঝাড় ছিল। সেখানকার বাঁশ তাঁরা বিক্রিও করত। ওই জমি যে তাঁদেরই দখলে, সে কথাই লেখা হয়েছে। কিন্তু জমির মালিকানার কথা লিখিনি। সেটা আমার এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে না।’’ সিপেনেরও বক্তব্য ছিল, ওই জমিটি তাঁর বাপ-ঠাকুরদার আমল থেকে তাঁদের দখলে।
সরকারি জমি বেদখল হওয়ার খবরে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। এর পরেই অভিযান চালানো হয়। ফাঁসিদেওয়া ভূমি ও রাজস্ব দফতরের আধিকারিক অশোক পাল বলেন, ‘‘সরকারি জমি দখলমুক্ত করা আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য। এখানে মাপজোক করে দেখা গেল, এটা সম্পূর্ণ ভাবে সরকারি জমি। জমিটি দখলমুক্ত করে দু:জায়গায় সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে। তবে দায়ী কে, তা তদন্তসাপেক্ষ। এ নিয়ে আমার কোনও বক্তব্য নেই।’’
সিপেনের মেয়ে রুমা সিংহ বলেন, ‘‘আমাদের জমিতে সরকারি সাইনবোর্ড বসল। এলাকায় আরও সরকারি জমি রয়েছে। তা হলে সেগুলোতে বসছে না কেন? সেগুলো দখলমুক্ত করে সেখানেও সাইনবোর্ড বসানো হোক।’’