সুপ্রিম কোর্টে নারদ মামলার রায় তখন ঘোষণা হয়েছে মাত্র। এক মুহূর্তও অপেক্ষা না করে প্রদেশ কংগ্রেস নেতা ওমপ্রকাশ মিশ্র বললেন, ‘‘কপিল সিব্বল ও অন্য আইনজীবীদের সর্বোচ্চ আদালত ধুলো চাটতে বাধ্য করায় আমি যারপরনাই আনন্দিত!’’ ওমপ্রকাশ একা নন, আসলে মঙ্গলবার প্রদেশ কংগ্রেসের সার্বিক মুড ছিল এটাই। প্রথম স্বস্তি যে, নারদ ঘুষ-কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ বহাল রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট। উপরি আরও ‘আনন্দ’ যে, এ যাত্রাতেও তৃণমূলের হয়ে মামলা লড়তে গিয়ে পর্যুদস্ত হয়েছেন সিব্বল, অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির মতো সর্বভারতীয় কংগ্রেসের তাবড় আইনজীবীরা।
নারদ-কাণ্ডে হাইকোর্টে আবেদনকারীদের অন্যতম ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তী। নেপথ্যে থেকে তাঁকে মদত জোগাচ্ছিলেন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান। এই অবস্থায় কপিল-অভিষেকেরা তৃণমূলের হয়ে মামলা লড়ায় রাজ্য কংগ্রেস নেতাদের অস্বস্তি হচ্ছিল বৈকি। কারণ, কপিলেরা পেশাগত অধিকারে মামলা লড়লেও তাঁরা আদতে কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতা। মান্নানদের মতে, সামগ্রিক ভাবে এর ফলে বিভ্রান্তিকর বার্তা যাচ্ছে জনতার কাছে। রাজ্য স্তরে দলের কর্মী-সমর্থকেরাও বিভ্রান্ত হচ্ছেন। তাঁদের কাছে বার্তা যাচ্ছে, যেন মান্নানেরা যা করছেন, তাতে কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় স্তরের সায় নেই!
অতীতে সারদা মামলাতেও তৃণমূলের হয়ে আদালতে সওয়াল করেছিলেন সিব্বল। তখন তাঁর বিরুদ্ধে দলের হাইকম্যান্ডের কাছে নালিশ করেছিলেন রাজ্য নেতারা। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী ঘোষণা করেছিলেন, রাজ্য কংগ্রেসের অনুষ্ঠানে আর সিব্বলদের ডাকা হবে না। এখনও অবধি রাজ্যে তাঁদের ডাক পড়েওনি।
নারদ মামলাতেও ভিন্ন কিছু হয়নি। কপিল-অভিষেক তৃণমূলের হয়ে মামলা লড়ার পাশাপাশি কংগ্রেসের প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পি চিদম্বরম আড়ালে থেকে তৃণমূলকে আইনি পরামর্শও দেন। এমনকী, এ দিন অমিতাভবাবুর প্রসঙ্গ উত্থাপন করে অভিষেক আবার তাঁর সওয়ালে বলেন, উনি বিধানসভা ভোটে লড়েছিলেন। ফলে, মামলা করার নেপথ্যে ওঁর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও রয়েছে। অভিষেকের মুখে এ কথা শুনে আদালতের গ্যালারিতে বসে রেগে তেলেবেগুন হয়ে যান মান্নান-অমিতাভবাবুরা। পরে তাঁরা বলেন, ‘‘ওঁরা পেশাগত কারণে কী বলেছেন, ওঁদের ব্যাপার। কিন্তু তৃণমূলের বিরুদ্ধে আমরা যে মামলা করেছি, তা রাহুল গাঁধীও জানেন।’’
দিল্লির মামলার পাট সেরে মান্নান, অমিতাভবাবু, আইনজীবী রবিশঙ্কর চট্টোপাধ্যায়েরা রাতে কলকাতায় নামতেই বিমানবন্দরে তাঁদের ঘটা করে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। এক সময় কেরলে কংগ্রেস সরকার যখন লটারির উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল, তখন লটারি মালিকদের হয়ে মামলা লড়েছিলেন অভিষেক। কেরলের কংগ্রেস নেতারা তখন সনিয়া গাঁধীর কাছে নালিশ করেছিলেন। আবার মোদী জমানায় যে শশিকলার বিরুদ্ধে আদালতে সাজা ঘোষণা হল, এক সময় সেই জয়ললিতা-শশীর আইনজীবী ছিলেন বিজেপি নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদ। তা ছাড়া কেরল কংগ্রেসের নেতা তথা রাজ্যসভার বর্তমান ডেপুটি চেয়ারম্যান পি জে ক্যুরিয়নের হয়ে সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী ছিলেন অরুণ জেটলি। সেই ধারাই চলছে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy