সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বর্ধমান মেডিক্যালের অতিথিশালায় অভীককে কেক খাওয়ানোর ছবি।
এসএসকেএমের পিজিটি, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন আরএমও অভীক দে শুধু নন, স্বাস্থ্য-ব্যবস্থার দুর্নীতিতে উঠে আসা ‘বর্ধমান শাখা’র আরও ১৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছিল বর্ধমান মেডিক্যালের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের চিকিৎসক-পড়ুয়ারা। সোমবার প্রায় ছ’ঘণ্টা ঘেরাও থাকার পরে কলেজ কর্তৃপক্ষ সবার বিরুদ্ধেই এ সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেই কমিটি তিন সপ্তাহের মধ্যে কলেজ কাউন্সিলকে রিপোর্ট দেবে বলে ঠিক হয়েছে। তবে রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের সদস্য হওয়ায় অভীকের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের অভিযোগ স্বাস্থ্য দফতরে পাঠিয়ে তদন্ত করার জন্য চিঠি দেবেন কলেজ কর্তৃপক্ষ।
অধ্যক্ষ মৌসুমী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সই করা ওই চিঠিতে জানানো হয়েছে, আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে অভীকের মেডিক্যাল কলেজে ঢোকা নিষিদ্ধ করা হযেছে। অভীকের দুই ‘ঘনিষ্ঠ’, বর্ধমান মেডিক্যালের দুই প্রাক্তনী বিশাল সরকার ও অভিপ্সিতা সাহারও কলেজ ঢোকায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন কর্তৃপক্ষ। তবে তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি গঠন হলে, সেই কমিটির তদন্তের স্বার্থে তাঁরা কলেজে আসতে পারবেন। এ ছাড়াও ন’জন স্নাতকস্তরের পড়ুয়া, দু’জন সিনিয়র রেসিডেন্ট, দু’জন পিজিটি, দু’জন ইন্টার্নের বিরুদ্ধে তদন্ত করবেন কর্তৃপক্ষ। অনিয়মিত হাজিরা, শৃঙ্খলাভঙ্গের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে রাজ্যের স্বাস্থ্য-বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে চিঠি পাঠানো হবে বলেও জানা গিয়েছে।
আন্দোলনকারীদের দাবি, অভীকের হাত ধরে বর্ধমান মেডিক্যালে ‘শাসানি-সংস্কৃতি’ শুরু হয়। অভীক এতটাই প্রভাবশালী ছিলেন যে বর্ধমান মেডিক্যালের সঙ্গে যুক্ত না থেকেও কলেজের অতিথিশালা থেকে হাসপাতালের বিভাগীয় প্রধানের ঘরে তাঁর জন্মদিন পালন করা হত। হাসপাতাল সুপার তাপস ঘোষ তাঁকে কেক খাওয়াচ্ছেন, পাশে অধ্যক্ষ দাঁড়িয়ে আছেন–এমন ছবিও সমাজমাধ্যমে ঘুরছে। ওই ছবির কথা অস্বীকার করেননি সুপারও। তিনি বলেন, “ছাত্রছাত্রীদের ডাকেই জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম।” আর অধ্যক্ষের দাবি, অতিথিশালায় কোনও অনুষ্ঠান হলেও, সেখানে তিনি ছিলেন না।
জানা গিয়েছে, বিশাল সরকার বর্ধমান দক্ষিণ মহকুমার একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক। আর অভিপ্সিতা কয়েক মাস আগে বর্ধমান মেডিক্যালের হাউসস্টাফশিপ শেষ করেছেন। আন্দোলনকারীরা লিখিত ভাবে তাঁদের বিরুদ্ধে ‘শাসানি-সংস্কৃতি’র অভিযোগ করেছেন। তাঁদের দাবি, প্রাক্তনী হওয়ার পরেও কলেজে ঢুকে ‘দাদাগিরি’র অভ্যাস ছাড়তে পারেননি ওই দু’জন। আর জি কর কাণ্ডের পরে আন্দোলন ভেস্তে দেওয়া কিংবা সরকার-বিরোধী আন্দোলন করা যাবে না বলে ‘হুমকি’ও দেওয়া হয়। স্নাতকস্তরের পড়ুয়াদের একাংশের দাবি, “প্রাক্তনী হয়েও বিশাল ছেলেদের হস্টেলে ঢুকে নিয়ন্ত্রণ করতেন। কলেজের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নামে টাকা আদায় করা, কথা না শুনলে ফেল করানোর ভয় দেখাতেন। একই কাজ মহিলা হস্টেলে করতেন অভিপ্সিতা।” বিশাল ও অভিপ্সিতার সঙ্গে এ দিন যোগাযোগ করা যায়নি। মেসেজেরও উত্তর আসেনি।
আন্দোলনকারী সুহোত্র মুখোপাধ্যায়, গৌরাঙ্গ প্রামাণিকেরা বলেন, “ভয় মুক্ত হয়ে স্নাতকের পড়ুয়ারা তাঁদের ক্ষোভের কথা অধ্যক্ষ ও কলেজ কাউন্সিলের সামনে জানিয়েছে।” আন্দোলনকারীদের দাবি ছিল, ছাত্র সংসদ ও রেসিডেন্সিয়াল ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন গণতান্ত্রিক ভাবে গঠন করতে হবে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য ভবনের অনুমতি ছাড়া ভোট করানো সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে ৩-৪ দিনের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে একটি পদ্ধতি বার করে সবার মতামত নিয়ে ও সব বিভাগের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy