Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

এসআই মৃত্যুতে উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ

জুয়ার আসর ভাঙতে গিয়ে কোচবিহার থানার এসআই রঞ্জিত পালের মৃত্যু নিয়ে পরস্পর বিরোধী মন্তব্য করেছিলেন পাশাপাশি দুই জেলার দুই তৃণমূল সভাপতি। আলিপুরদুয়ারের তৃণমূল জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘রঞ্জিতবাবু জুয়াড়িদের হাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন।

আলিপুরদুয়ারের জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তীর ফোন থেকে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছেন মৃত এসআইয়ের স্ত্রী রত্না পাল। ছবি: নারায়ণ দে।

আলিপুরদুয়ারের জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তীর ফোন থেকে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছেন মৃত এসআইয়ের স্ত্রী রত্না পাল। ছবি: নারায়ণ দে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৫ ০৩:০৯
Share: Save:

জুয়ার আসর ভাঙতে গিয়ে কোচবিহার থানার এসআই রঞ্জিত পালের মৃত্যু নিয়ে পরস্পর বিরোধী মন্তব্য করেছিলেন পাশাপাশি দুই জেলার দুই তৃণমূল সভাপতি। আলিপুরদুয়ারের তৃণমূল জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘রঞ্জিতবাবু জুয়াড়িদের হাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাঁর বুকে আঘাত লেগেছিল।’’ কোচবিহারের তৃণমূল জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষের কিন্তু বক্তব্য ছিল, ‘‘রঞ্জিতবাবু অসুস্থ ছিলেন। জুয়ার আসর ভাঙতে গিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।’’ এ বার খোদ মুখ্যমন্ত্রী রঞ্জিতবাবুর স্ত্রীকে ফোন করে জানালেন, এই ঘটনার উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত হবে। মুখ্যমন্ত্রীর এই নির্দেশের কথা জানিয়েছেন সৌরভবাবুই। কিছু ক্ষণ পরে রাজ্য পুলিশের ডিজি জেএমপি রেড্ডিও রত্নাদেবীকে ফোন করেন।

বিরোধীদের দাবি, রঞ্জিতবাবুর মৃত্যু নিয়ে দলের দুই জেলা নেতৃত্বের দূরত্ব বাড়ছে দেখেই পরিস্থিতি সামলাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে হস্তক্ষেপ করলেন। প্রাক্তন মন্ত্রী সিপিএম নেতা অনন্ত রায় বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীও বুঝতে পারছেন, হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে পরিস্থিতি। তাই উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের কথা বলেছেন।’’

এই ঘটনায় কোচবিহারের এসপি রাজেশ যাদবের মন্তব্যেও প্রশ্ন উঠেছিল। রঞ্জিতবাবুর মৃত্যুর পরে রাজেশবাবু যেন রবীন্দ্রনাথবাবুর সুরে সুর মিলিয়েই বলেছিলেন, ওই এসআইয়ের শরীরে আঘাতের কোনও চিহ্ন নেই, তিনি ঘটনার সময় হদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। পরে অবশ্য অবস্থান বদলে এসপি বলেছিলেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরেই বোঝা যাবে, কী ভাবে রঞ্জিতবাবুর মৃত্যু হল। রাজেশবাবুর বিরুদ্ধে তখন শাসক দলের চাপে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ ওঠে। এসপি-র মন্তব্যে খুশি হতে পারেননি নিচুতলার পুলিশকর্মীরাও।

কিন্তু রঞ্জিতবাবুর মৃত্যুর পরপর সেই রাতেই স্থানীয় ধাইয়ের হাট গ্রামের ২১ জনকে গ্রেফতার করার পরে পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় তৃণমূল নেতারা। এ দিন রবীন্দ্রনাথবাবু যাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁদের বাড়িতেও যান। অনেকের বাড়িতে কাপড়-খাদ্যও দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘যা হয়েছে তা অন্যায়, কিন্তু যাঁরা নিরপরাধ তাঁদের গ্রেফতার করাও অনুচিত।’’ ঘটনা হল, সিপিএমও মনে করে, পুলিশ নিরপরাধদেরই গ্রেফতার করেছে। এ দিন স্থানীয় সিপিএম নেতা তমসের আলি ও অনন্তবাবুও ওই গ্রামে যান। কিন্তু তখন তাঁদের গ্রামে ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। তমসের আলি বলেন, ‘‘শাসক দলের মদতেই ওই জুয়ার আসর বসে। সেটা ফাঁস হয়ে যাবে বলেই আমাদের গ্রামে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।’’ সেই সঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘কিন্তু পুলিশ যাঁদের ধরেছে, তাঁরা নিরপরাধ।’’ কোচবিহার জেলা পুলিশ অবশ্য এ দিনও জানিয়েছে, নির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণের উপরে ভিত্তি করেই ওই ২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

পাশের জেলার সৌরভবাবু এ দিন দুপুরে আলিপুরদুয়ারের ভোলার ডাবরিতে রঞ্জিতবাবুর বাড়িতে যান। তখনই রঞ্জিতবাবুর স্ত্রী রত্নাদেবী তাঁকে বলেন যে, তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চান। মমতার নির্দেশে বিকেলে সৌরভবাবু আবার ভোলার ডাবরিতে যান। তখন মমতা তাঁর ফোনেই ফোন করে রত্নাদেবীর সঙ্গে কথা বলেন। রত্নাদেবী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী সমবেদনা জানিয়েছেন। ছোট মেয়ে কোন ক্লাসে পড়ে, তার খোঁজ নিয়েছেন।”

এই অবস্থায়, তৃণমূলের অন্দরের খবর, পরিস্থিতি সামলানোর ক্ষেত্রে দুই জেলা সভাপতির মধ্যে সৌরভবাবুর ভূমিকাই দলনেত্রীর কাছে বেশি নম্বর পেয়েছে। রবীন্দ্রনাথবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘এখানে নম্বরের প্রশ্ন নেই। সবই দলের নেতাদের জানিয়েছি। তদন্তে সব পরিষ্কার হবে।’’ সৌরভবাবুর বক্তব্য, ‘‘দলনেত্রী উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের কথা বলেছেন। এর বেশি কিছু বলব না।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE