মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (বাঁ দিকে) এবং জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
রেশন-দুর্নীতি কাণ্ডে ধৃত প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় (বালু) মল্লিককে ‘ফাঁসানো’ হয়েছে বলে ফের দাবি করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইডি হেফাজত থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় যাওয়ার পথে মুখ্যমন্ত্রীর পাশে থাকার বার্তা দিলেন বর্তমান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়ও। যার প্রেক্ষিতে বিরোধীদের দাবি, দুর্নীতির মামলায় মুখ্যমন্ত্রী ও প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী পরস্পরকে ‘আড়াল’ করার চেষ্টা করছেন।
রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে বুধবার নবান্নে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেছেন, ‘‘ফাঁসানো হয়েছে বালুকে।’’ ইডি-র হাতে জ্যোতিপ্রিয় গ্রেফতার হওয়ার পরে এ দিনই ছিল রাজ্য মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠক। সেখানে অবশ্য বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়ের দফতর বদল হয়নি। উল্টে তাঁর প্রতি খানিকটা আস্থা প্রকাশ করেই বাকি মন্ত্রীদের উদ্দেশে মমতার বার্তা, উত্তর ২৪ পরগনায় সংগঠনের দিকে নজর রাখতে হবে তাঁদের।
তার আগে এ দিন সকালে সিজিও কমপ্লেক্স থেকে শারীরিক পরীক্ষার জন্য কমান্ড (সেনা) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া পথে জ্যোতিপ্রিয়কে প্রশ্ন করা হয়, নিয়োগ-দুর্নীতির মামলায় তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফের তলব করেছে ইডি। জ্যোতিপ্রিয়কে তখন বলতে শোনা যায়, ‘‘কোন বন্দ্যোপাধ্যায়? কে বন্দ্যোপাধ্যায়? অভিষেক, মানে আমাদের নেতা?’’ রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মতে, এমন মন্তব্য করে দুর্নীতির মামলা থেকে অভিষককে দূরে রাখার চেষ্টাই করেছেন জ্যোতিপ্রিয়। যার মধ্যে তাঁর তরফে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রীর পাশে থাকার বার্তাও রয়েছে।
জ্যোতিপ্রিয় এ দিন আরও দাবি করেছেন, ‘‘শুনে রাখুন, আমি নির্দোষ! আমি মুক্ত। আগামী ১৩ নভেম্বর ব্যাঙ্কশাল কোর্টে আমাকে পেশ করা হবে। তখন সব কিছু স্পষ্ট হবে।’’ এর আগের বার আদালতে পেশ করার চার দিন আগেও তিনি একই দাবি করে বলেছিলেন, ‘‘আমি নির্দোষ। চার দিন পরে দেখুন কী হয়।’’ সে দিন অবশ্য তিনি বলেছিলেন, ‘‘মমতাদি ও অভিষেক সব জানে। আমাকে চক্রান্ত করে ফাঁসানো হয়েছে।’’ তার পরে তাঁর এ দিনের মন্তব্য নিয়ে নতুন করে চর্চা শুরু হয়েছে।
প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কটাক্ষ, ‘‘বাড়ি থেকে খাবার গিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হয়তো তাতে কোনও বার্তা দিয়েছেন। তাতে বলেছে, বলবি না, মরে গেলেও বলবি না চিনি!’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ‘‘জ্যোতিপ্রিয়কে ফাঁসানো হয়েছে, এর থেকে হাস্যকর কথা আর কী হতে পারে? ওঁর পরিবারের লোকজনের অ্যাকাউন্টে টাকা, সংস্থা খুলে তার অধিকর্তা হিসেবে ওঁর পরিবারের লোকজনকে বসানো, এ সব কি ওঁকে ফাঁসানোর জন্য কেউ করে গেল! জ্যোতিপ্রিয় অনেক কিছু জানেন, তাই তাঁকে সরানোর সাহস মুখ্যমন্ত্রীর নেই। আর জ্যোতিপ্রিয় আগের দিন বলে ফেলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ও অভিষেক সব জানেন। এখন আবার বাঁচা ও বাঁচানোর চেষ্টায় বলছেন, কে অভিষেক!’’
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ দিন উত্তর ২৪ পরগনা থেকে যাঁরা প্রতিনিধিত্ব করছেন, তাঁদের সংগঠনে বাড়তি নজর রাখা ও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই জেলা থেকে মন্ত্রিসভায় রয়েছেন, অর্থ প্রতিমন্ত্রী (স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত) চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক, কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ, দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু প্রমুখ। রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মতে, বীরভূমে অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে সেখানকার সংগঠন নিয়ে চিন্তিত ছিলেন শাসক দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব। আগামী লোকসভা ভোটের আগে উত্তর ২৪ পরগনার মতো গুরুত্বপূর্ণ এবং বড় জেলায় যাতে সংগঠন ছন্নছাড়া না হয়ে যায়, তা নিশ্চিত করতে চাইছেন মমতা। সেই কারণেই সম্ভবত সেই জেলার মন্ত্রীদের ‘সতর্ক’ থাকার কথা বলেছেন মমতা। জ্যোতিপ্রিয়ের গ্রেফতারির পর থেকে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি তদন্তের ঝাঁজ অনেকটাই বাড়িয়েছে। ফলে, সেই দিক থেকেই ‘সতর্ক’ থাকা প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছেন শাসক-নেতৃত্ব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy