মেয়ো রোডে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) সভায় তাঁর বক্তৃতার ‘ব্যাখ্যা’ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি, বৃহস্পতিবার সমাজমাধ্যমে বুধবারের ওই সভার তাঁর বক্তৃতার ‘অপব্যাখ্যার’ অভিযোগে সংবাদমাধ্যমের একাংশকেও দুষলেন তিনি।
মমতা লিখেছেন, ‘‘আমি কিছু সংবাদপত্র, বৈদ্যুতিন (টিভি চ্যানেল) এবং ডিজিটাল মিডিয়াতে একটি নোংরা, বিভ্রান্তিমূলক প্রচার চিহ্নিত করেছি। গত কাল আমাদের ছাত্রদের কর্মসূচিতে আমি যে বক্তৃতা করেছিলাম, সে প্রসঙ্গেই রিপোর্টগুলি প্রকাশ করা হয়েছে।’’
আরও পড়ুন:
এর পরেই সরাসরি তাঁর বক্তৃতার প্রসঙ্গে এসেছেন তৃণমূলনেত্রী। লিখেছেন, ‘‘আমি সবচেয়ে জোরালো এবং স্পষ্ট ভাবে বলতে চাই যে, পড়ুয়াদের (ডাক্তারি ইত্যাদি) বা তাঁদের আন্দোলনের বিরুদ্ধে একটি শব্দও উচ্চারণ করিনি। আমি তাঁদের আন্দোলনকে সম্পূর্ণ সমর্থন করি। তাঁদের আন্দোলন ন্যায্য। আমি কখনই তাঁদের হুমকি দিইনি। কিন্তু কিছু মানুষ আমাকে অভিযুক্ত করছেন। এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।’’
আরও পড়ুন:
বুধবার মেয়ো রোডের জমায়েতের মঞ্চ থেকে মমতা বলেন, ‘‘আমায় অনেক গালাগালি দিয়েছেন। অনেক অসম্মান করেছেন। আমি অনেক ভেবেছি। আমি ভেবে দেখলাম, এঁদের বিরুদ্ধে কোনও দিনও বদলা নিইনি। আমরা বলেছিলাম বদলা নয়, বদল চাই। আজ বলছি, ওই কথা নয়। আজ বলছি, যেটা করার দরকার, সেটা আপনারা ভাল বুঝে করবেন।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি অশান্তি চাই না। কিন্তু কুৎসা, অপপ্রচার এবং চক্রান্ত করে যে আপনাকে রোজ কামড়াচ্ছে, তাকে আপনি কামড়াবেন না ঠিকই। কিন্তু ফোঁস তো করতে পারেন।’’
আরও পড়ুন:
তাঁর ওই মন্তব্য বিরোধীদের বিরুদ্ধে উস্কানি বলে অভিযোগ উঠেছে। এ প্রসঙ্গে, সমাজমাধ্যমের পোস্টে তাঁর ব্যাখ্যা— ‘‘আমি গত কাল আমার বক্তৃতায় যে বাক্যাংশটি ব্যবহার করেছি তা শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসের একটি উদ্ধৃতি। কিংবদন্তি সাধক বলেছিলেন, মাঝেমাঝে আওয়াজ তুলতে হয়। অপরাধ ও ফৌজদারি অপরাধ হলে প্রতিবাদের আওয়াজ তুলতে হবে।’’
আরও পড়ুন:
পড়ুয়ারা নন, টিএমসিপির প্রতিষ্ঠা দিবসে তাঁর নিশানা যে বিজেপি ছিল, সে কথাও বৃহস্পতিবার খোলাখুলি জানিয়েছেন মমতা। সমাজমাধ্যমে তিনি লিখেছেন, ‘‘আমি বিজেপির বিরুদ্ধে কথা বলেছি। আমি তাদের বিরুদ্ধে কথা বলেছি কারণ, ভারত সরকারের মদতে তারা আমাদের রাজ্যে গণতন্ত্রকে আঘাত করার এবং নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করছে। কেন্দ্রের সমর্থনে তারা অনাচার তৈরি করার চেষ্টা করছে। তাই আমি তাদের বিরুদ্ধে আমার আওয়াজ তুলেছি।’’
প্রসঙ্গত, বুধবার টিএমসিপির সভায় আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে জুনিয়র ডাক্তাদের আন্দোলনকে সমর্থন জানানোর পাশাপাশি তাঁদের কাজে ফেরার বার্তাও দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘জুনিয়র ডাক্তারেরা যখন দেশ জুড়ে আন্দোলন করছিলেন, আমরা কিন্তু কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিইনি। কারণ আমি মনে করেছিলাম ওঁদের আন্দোলনটা সঙ্গত। ওঁরা ওঁদের বন্ধুর বিচার চাইছেন। কিন্তু দিল্লিতে ডাক্তারদের বিরুদ্ধে এফআইআর করে দিয়েছিল।’’
আরও পড়ুন:
তার পরই মমতা বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, এখনও পর্যন্ত যাঁরা কাজে যোগ দেননি, তাঁদের বিরুদ্ধে কিছু করবেন না। পরে এটা রাজ্যের উপর ছেড়ে দিলাম। আজ কত দিন হল? আজকেও জুনিয়র ডাক্তারদের মিছিল রয়েছে। আমার তাঁদের প্রতি সমর্থন ছিল, আছে, থাকবে। তবে আমি বলব, আপনারা তো মানবিক। সুপ্রিম কোর্টও অনুরোধ করেছে সবাইকে কাজে যোগ দেওয়ার জন্য। অনেক গরিব লোক চিকিৎসা না পেয়ে মারা গিয়েছে। গরিবেরা কোথায় যাবে? অনেক পরিষেবা আপনারা (জুনিয়র ডাক্তার) দেন। আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি, আপনারা আন্দোলন করেছেন, কিন্তু আমরা কোনও ব্যবস্থা নিইনি। কোনও ব্যবস্থা নেব না। কিন্তু এ বার আস্তে আস্তে কাজে যোগদান করুন। আমি কোনও পদক্ষেপ করতে চাই না।’’