মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।
২০১১ সালে বাংলায় পালাবদলের নির্বাচনের আগেই তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্লোগান দিয়েছিলেন ‘বদলা নয়, বদল চাই’। ভোটে জেতার পরে পাড়ার মোড় থেকে রাস্তার ট্র্যাফিক সিগন্যালে রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজানোরও নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। বার্তা ছিল— তিনি প্রতিহিংসা বা বদলের রাজনীতি করতে চান না। যারা ক্ষমতাচ্যুত, তাদের উপর যেন ‘বদলা’ না নেওয়া হয়। কিন্তু ১৩ বছর পরে সেই স্লোগানই বদলের ডাক দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা।
বুধবার মেয়ো রোডের জমায়েতের মঞ্চ থেকে মমতা বলেন, ‘‘আমায় অনেক গালাগালি দিয়েছেন। অনেক অসম্মান করেছেন। আমি অনেক ভেবেছি। আমি ভেবে দেখলাম, এদের বিরুদ্ধে কোনও দিনও বদলা নিইনি। আমরা বলেছিলাম বদলা নয়, বদল চাই। আজ বলছি, ওই কথা নয়। আজ বলছি, যেটা করার দরকার, সেটা আপনারা ভাল বুঝে করবেন।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি অশান্তি চাই না। কিন্তু কুৎসা, অপপ্রচার এবং চক্রান্ত করে যে আপনাকে রোজ কামড়াচ্ছে, তাকে আপনি কামড়াবেন না ঠিকই। কিন্তু ফোঁস তো করতে পারেন।’’
অন্য রাজ্যের যাঁরা বাংলায় রয়েছেন, তাঁদের উদ্দেশেও বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘বাইরের যাঁরা বাংলায় আছেন, তাঁরা নিজের মনে করে থাকুন। বিজেপির সঙ্গে মিশে গিয়ে পুলিশকে পেটালেন! মনে রাখবেন, আপনাকেও কিন্তু কেউ গায়ে হাত দিতে পারে। আমি সেটা চাই না। আমি মৃত্যু চাই না। কিন্তু বাংলায় থাকতে গেলে ভালবেসে থাকতে হবে। এত দুর্বল ভাবার কোনও কারণ নেই।’’ যে বক্তব্য নিয়ে তৃণমূলের এক নেতার ব্যাখ্যা, ‘‘মঙ্গলবার বিজেপির ইন্ধনে নবান্ন অভিযানের নামে যে হিংসা হয়েছে, সেখানে অবাঙালি অংশের আধিক্য ছিল। মুখ্যমন্ত্রী মূলত তাঁদের উদ্দেশেই বার্তা দিতে চেয়েছেন।’’
বুধবার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সভার মঞ্চ থেকে মমতা যা বলেছেন, তাকে ‘নতুন করে হিংসার প্ররোচনা’ বলে অভিহিত করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার। তাঁর মতে, ‘‘এটা বাংলার মানুষের উপর আক্রমণে উস্কানি।’’ সুকান্ত বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বাংলার মানুষের উপর আক্রমণ করতে উস্কানি দিয়েছেন। সাংবিধানিক পদে থেকে তিনি ফোঁস করতে বলেছেন তাঁর দলের হার্মাদদের।’’ খানিকটা কটাক্ষের সুরে সুকান্ত বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর কথা ভেবেই বোধহয় সুকুমার রায় লিখেছিলেন, ‘দুটো সাপ জ্যান্ত, গোটা দুই আন তো’। আসলে বাংলায় এখন দুটোই সাপ আছে। আর বাংলার মানুষ তাদের কী ট্রিটমেন্ট করবে, সে ব্যাপারেও কবি লিখেছিলেন, ‘তেড়ে মেরে ডান্ডা, করে দিই ঠান্ডা’। বাংলার মানুষ জানে কী ভাবে ঠান্ডা করতে হয়।’’ মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে হিংসায় উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ তুলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠিও লিখেছেন সুকান্ত।
মমতা অবশ্য বাতলে দিয়েছেন, কী ভাবে ‘ফোঁস’ করতে হবে। রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব এবং একটি গোখরো সাপের গল্প শুনিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এক বার একটা গোখরো সাপ শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের কাছে গিয়ে বলেছিল, ঠাকুর আপনি আমাকে কামড়াতে বারণ করেছেন। কিন্তু আমায় ওরা রোজ ইট মারে। আমার রক্ত ঝরে। আমার যন্ত্রণা হয়। রামকৃষ্ণ তাকে বলেন, আমি তোমাকে কামড়াতে বারণ করেছি। কিন্তু ফোঁস করতে তো বারণ করিনি।’’ ভিড়ে ঠাসা সমাবেশের উদ্দেশে মমতা বলেন, ‘‘আগামী দিন আপনাদের কাজ হচ্ছে চক্রান্তকারীদের মুখোশ খুলে দেওয়া। দিয়ে ফোঁস করতে শিখুন, ফাঁস করতে শিখুন।’’
বিরোধী বিজেপির উদ্দেশে তিনি যে ‘হুঁশিয়ারি’ দিচ্ছেন, তা মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রীর বক্তব্যে গোপন থাকেনি। মমতা জানিয়েছেন, ‘ধৈর্য্যচ্যুতি’ হলে তিনি যে কী করতে পারেন, সে ব্যাপারেও কারও ধারণা নেই। তাঁর কথায়, ‘‘আমি এখনও সহ্য করছি। ধৈর্য ধরে আছি। সহ্যের সীমা পার করে গেলে আমি যে কী করতে পারি, তা কারও জানা নেই। কারণ, আই অ্যাম দ্য প্রোডাক্ট অফ মুভমেন্ট। আন্দোলনে আমার জন্ম। আন্দোলনেই আমার মৃত্যু হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy