রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান হওয়ার সুবাদে রাজ্যপাল বোস রাজ্যের ৪২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য। ফাইল চিত্র।
প্রশ্ন করা হয়েছিল, বাংলার রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসকে নিয়ে। জবাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন। একই সঙ্গে এ-ও জানালেন, তিনি রাজ্যপালের ‘চেয়ার’ অর্থাৎ তাঁর পদকে সম্মান করেন। তাঁর বিশ্বাস, ‘‘কেউ সম্ভবত ওঁকে (রাজ্যপালকে) ভুল বোঝাচ্ছে।’’
রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান হওয়ার সুবাদে রাজ্যপাল বোস রাজ্যের ৪২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য। সম্প্রতি সেই পদে রাজ্যপাল বোসের সক্রিয় ভূমিকা নিয়ে উচ্চ শিক্ষা দফতরের সঙ্গে বার বার সঙ্ঘাত হয়েছে রাজ্যপালের। মুখ্যমন্ত্রীও এই একই বিষয়েই রাজ্যপালের কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সোমবার নবান্নে একটি সাংবাদিক বৈঠকে, রাজ্যপালকে নিয়ে একটি প্রশ্নের উত্তরে মমতা বলেন, ‘‘রাজ্যপালকে আচার্য করা হয়েছিল। কিন্তু (শিক্ষা) দফতর তো চালায় উচ্চ শিক্ষা মন্ত্রক। আমিও দখল দিই না। আমি এটাও বলি না আমার কথা না শুনলে অ্যাকশন নেব। কিন্তু উনি সেটাই বলছেন। উনি বলছেন, ‘৭ দিনের মধ্যে নির্দেশ দিতে হবে না হলে আমি ব্যবস্থা নেব’।’’
সোমবার মমতা যখন এ কথা বলছেন তার কয়েক ঘণ্টা আগেই জোড়াসাঁকোয় রবীন্দ্রভারতীর সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন রাজ্যপাল বোস। সেখানে তিনি বলেছিলেন, ‘‘যদি দেখি সংবিধান ভাঙা হচ্ছে বা আইন অমান্য করা হচ্ছে তবে আমিও শেক্সপিয়রের হ্যামলেটের মতো কী করব বা কী করব না সেই দোটানায় বসে থাকব না।’’ মমতাকে সেই মন্তব্যের কথা জানিয়ে তাঁর বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়। তারই জবাবে এই কথা বলেন মমতা। পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘তিনি চুপচাপ বসে থাকবেন না তো কি? সবার চাকরি খাবেন? শুনুন আমি রাজ্যপালকে শ্রদ্ধা করি। আপনি প্রশ্ন করলেন বলে আমি উত্তর দিচ্ছি। রাজ্যপালকে আমরা সম্মান দিই কারণ, ওঁর পদটা হল আচার্যের, সম্মাননীয় পদ। আমরাই আইন করেছিলাম। কিন্তু যেহেতু তখন ১২টা ছিল (বিশ্ববিদ্যালয়) এখন ৪২টা হয়েছে এখন আমাদেরও সমস্যা হচ্ছে।’’
আচার্য হিসাবে রাজ্যপালের সাম্প্রতিক সক্রিয়তা যে পছন্দ নয় তা আগেই স্পষ্ট বুঝিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। শিক্ষা দফতরের সঙ্গে আলোচনা না করেই বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ পদে নতুন নিয়োগ করছিলেন রাজ্যপাল বোস। সেই প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বসু বলেছিলেন, ‘‘আচার্য সংক্রান্ত নতুন নিয়ম (মুখ্যমন্ত্রীকে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য হিসাবে মান্যতা দেওয়ার বিল ) আমরা বিধানসভায় পাস করিয়েছিলাম। ওঁকে পাঠিয়েও ছিলাম। কিন্তু উনি তা ফেরত পাঠাননি। দরকার হলে আমরা আবার ওই বিল পাস করাব।’’ সোমবার মমতাও সেই একই কথা বলেছেন।
রাজ্যপালের নাম না করেই মমতা বলেন, ‘‘আমরা যেন প্রত্যেকে মনে রাখি আমাদের প্রত্যেকের একটা সীমাবদ্ধতা আছে। রাজ্যপালকে যখন আচার্য করার কথা ভাবা হয়েছিল, তখন এ রাজ্যে ১০টা-১২টা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। এখন ৪২টা বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এখনও তো একই নিয়ম চলতে পারে না!’’ এ প্রসঙ্গেই শিক্ষামন্ত্রীর সুরে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘রাজ্যপালকে বিল পাঠানো হয়েছিল। সেই বিল উনি ফেরতও পাঠাননি, সমর্থনও করেননি। আমি বলব, যদি ওঁর পছন্দ না হয় উনি আমাদের পাঠিয়ে দিন। যাতে আমরা আবার বিলটা পাস করাতে পারি। অনেক রাজ্যের বিধানসভাই কিন্তু এই নিয়ম পাস করিয়েছে।’’
এ প্রসঙ্গে রাজ্যপালের ‘অতিসক্রিয়তা’ নিয়ে মমতা বলেছেন, ‘‘উনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরদের নানা নির্দেশ দিচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলররা কাজকর্ম করবেন, পড়াশোনা করাবেন, পরীক্ষা নেবেন, ছাত্রছাত্রীদের দেখবেন না কি ওঁর কাছে গিয়ে প্রতিদিন সব কিছুর হিসাব দেবেন। হিসাব যদি ওদের দিতে হয় সেটা রাজ্য সরকারকে দিতে হয়, আর রাজ্য সরকার এমন কিছু করে না যার জন্য ভিসিরা বিপদে পড়েন। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলির স্বাধীন ভাবে চলার পক্ষে। আমি মনে করি রাজ্যপালকে কেউ ভুল বোঝাচ্ছে সম্ভবত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy