রাজ্যের পুজোর আমেজ এনে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।
গত বছর দুর্গাপুজোর অনুদান ছিল ৬০ হাজার টাকা। সেটা বাড়িয়ে বারোয়ারি প্রতি ৭০ হাজার টাকা করল রাজ্য সরকার। ঘোষণা করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে পুজো কমিটিগুলিকে সরকারের বিভিন্ন দফতর বিজ্ঞাপনের হোর্ডিং দেবে। পর্যটন থেকে শিল্প দফতর সরকারি কাজের হোর্ডং দেবে বারোয়ারি পুজোকে। সেই বাবদও টাকা পাবে পুজো কমিটিগুলি। বিদ্যুতের বিলেও মিলবে ছাড়। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা মতো, বিদ্যুতের যা বিল আসবে তার তিন ভাগের এক ভাগ টাকা মেটাতে হবে বারোয়ারিকে। এই বছর বিসর্জন করতে হবে ২৬ অক্টোবরের মধ্যে। লক্ষ্মীপুজোর আগের দিন ২৭ অক্টোবর হবে পুজোর কার্নিভ্যাল।
পঞ্জিকা মেনে এ বার উমা আসবেন দেরিতে। ২ কার্তিক ষষ্ঠী। তবে মঙ্গলবার, ৫ ভাদ্র দুর্গাপুজোর আগমনী সুর বাজিয়ে দিলেন মমতা। ঘোষণা করে দিলেন এ বার রাজ্যের সব দুর্গাপুজো কমিটিকে রাজ্যের তরফে কত টাকা দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে জানিয়ে দিলেন সব সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতির পরিবেশ বজায় রেখে, নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে শারদীয় উৎসব পালন করতে হবে।
সোমবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে পুলিশ, প্রশাসন ও পুজো কমিটি নিয়ে বৈঠকে বসেন মমতা। একই সঙ্গে রাজ্যের সব জেলাতেও সরাসরি বৈঠকের সম্প্রচার হয়। জেলা প্রশাসনও যোগ দেয় বৈঠকে। মমতা পরামর্শ দিতে গিয়ে বলেন, ‘‘পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতার জন্য স্কুলের পড়ুয়াদের স্বেচ্ছাসেবক রাখতে হবে। মণ্ডপে প্রবেশ ও বাহিরের আলাদা পথ রাখতে হবে। সেই সঙ্গে অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থাও রাখতে হবে।’’ বিসর্জনের জায়গায় আলো ও ব্যারিকেডের ব্যবস্থা করায় বাড়তি গুরুত্ব দিতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। জরুরি পরিস্থিতির জন্য চিকিৎসক, নার্স, অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা এখন থেকেই করে রাখতে হবে জেলায় জেলায়। পুজোর সময় যেন হেল্পলাইন নম্বরগুলো কার্যকর রাখতে হবে। পুজো কমিটিগুলিতে বার বার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য মাইকে ঘোষণা করতে হবে। জনকল্যাণমূলক হোর্ডিং রাখতে হবে। সরকারের বিভিন্ন দফতর বিজ্ঞাপন হিসাবে হোর্ডিং দিলেও তা কম দামের হবে।
বৈঠক শেষে বাংলার দুর্গাপুজো যে বহু মানুষের রোজগারের ব্যবস্থাও করে তা উল্লেখ করেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী জানান, পুজোকে কেন্দ্র করে ৬০ হাজার কোটি টাকার বাজার তৈরি হয়। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যের বিভিন্ন লোকশিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষদের পুজোয় জায়গা করে দিতে হবে। তাঁদের যাতে পুজোর সময় বাড়তি রোজগার হয় সেটা দেখতে হবে।’’ মমতা জানান, রাজ্যে এখন ৪০ হাজার বারোয়ারি পুজো হয়। কলকাতার তিন হাজার বাদ দিলে বাকিটা জেলায়। আবাসনের পুজোরও প্রশংসা করেন মমতা। সেই সঙ্গে পরিবহণ ও পুলিশকে পুজোর জন্য ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
বেশ কয়েক বছর ধরেই দুর্গাপুজোয় সরকারের তরফে পুজো কমিটিগুলির পাশে থাকার সিদ্ধান্ত নেন মমতা। গত কয়েক বছরে সেই টাকার পরিমাণ বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে পুজো কমিটির সংখ্যাও। প্রথমে কমিটি পিছু ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া শুরু করে রাজ্য সরকার। গত বছরে সেই টাকার পরিমাণ বেড়ে হয় কমিটি পিছু ৬০ হাজার টাকা। ২০২২ সালে মোট ৪২ হাজার ২৮টি পুজো কমিটিকে ৬০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়েছিল। সেটাই বেড়ে ৭০ হাজার টাকা হল।
সোমবারেই ইমাম, মোয়াজ্জেম, পুরোহিতদের মাসিক ভাতা বৃদ্ধি করেন মমতা। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ইমাম, মোয়াজ্জেমদের সম্মেলন ছিল। সেখানে তাঁদের মাসিক ভাতা ৫০০ টাকা করে বৃদ্ধি করার কথা ঘোষণা করেন মমতা। এত দিন ইমামরা মাসে ২,৫০০ টাকা করে ভাতা পেতেন। সেটা বেড়ে হল তিন হাজার টাকা। আর মোয়াজ্জেমরা ভাতা পেতেন মাসে এক হাজার টাকা করে। তাঁরা এ বার থেকে দেড় হাজার টাকা পাবেন। পুরোহিতদের মাসিক ভাতাও ৫০০ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। তার পরের দিনই মঙ্গলবার পুজো কমিটির অনুদান ঘোষণা হল।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালে পুজো অনুদান কেন দেওয়া হবে তা নিয়ে আদালতে মামলাও হয়। জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয় তৎকালীন প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চে। অনুদানে বাধা না দিলেও কিছু শর্ত আরোপ করেছিল আদালত। কারা অনুদান পাবে এবং কী ভাবে সেই অর্থের হিসাব দিতে হবে তা ঠিক করে দিয়েছিল আদালত। এ বারেও বিষয়টা আদালতে যেতে পারে আশঙ্কা প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পুজো কমিটিগুলিকে কেনা হচ্ছে না। ক্লাবগুলির জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য দেওয়া হয় টাকা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy