ফের শুশুনিয়া পাহাড়ে ঝরা পাতায় লাগল আগুন। বৃহস্পতিবার পাহাড়ের পূর্ব অংশে আগুনের লেলিহান শিখা প্রথম চোখে পড়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের। আগুন দ্রুত পাহাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে দেখে তাঁরাই খবর দেন বন দফতরে। বন দফতরের কর্মীরা পাহাড়ের নির্দিষ্ট অংশে উঠে ব্লোয়ারের সাহায্যে ঝরা পাতার স্তুপ বিচ্ছিন্ন করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে।
শুশুনিয়া পাহাড়ে ঝরা পাতায় আগুন লাগার ঘটনা নতুন নয়। ২০২৪ সালে শেষ বার এই পাহাড়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সে বার পাহাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছিল আগুন। আগুন এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, তা বাগে আনতে রীতিমত হিমশিম খেতে হয় বন দফতরকে। ঝরা শুকনো পাতায় লেগে যাওয়া আগুন কার্যত দাবানলের চেহারা নেয়। পুড়ে ছাই হয়ে যায় পাহাড়ের বহু জীবজন্তু, বিরল প্রজাতির গাছ ও সরীসৃপ। প্রায় চার দিন ধরে দাউদাউ করে সেই আগুন জ্বলার পর অবশেষে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। সেই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে শুশুনিয়া পাহাড়ে অগ্নিকাণ্ড ঠেকাতে বিশেষ পদক্ষেপ করে বন দফতর। পাহাড়ের উপরে জলের রিজার্ভার তৈরির পাশাপাশি পাহাড় জুড়ে কড়া নজরদারি চালাতে পাহাড়ের বিভিন্ন উচ্চতায় বসানো হয় বিশেষ প্রযুক্তির সিসি ক্যমেরা। সেই সিসি ক্যমেরার মাধ্যমে লাগাতার নজরদারি এবং বন কর্মীদের লাগাতার প্রচারের ফলও হাতেনাতে মেলে। ২০২৫ সালে সে ভাবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেনি শুশুনিয়া পাহাড়ে। তবে দু’বছর যেতে না যেতেই বৃহস্পতিবার সকালে কেউ বা কারা পাহাড়ের পুর্ব অংশে পাহাড়ের গায়ে ঝরে পড়া শুকনো পাতার স্তুপে আগুন লাগিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। সেই আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকে পাহাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকায়। সাদা ধোঁয়ায় কার্যত ঢেকে যায় গোটা পাহাড়। বিষয়টি স্থানীয়দের নজরে আসতেই বন দফতরে খবর দেন তাঁরা। এর পরেই বন কর্মীদের একটি বিশাল বাহিনী উন্নত মানের ব্লোয়ার সঙ্গে নিয়ে পাহাড়ে উঠে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেন। ব্লোয়ার দিয়ে শুকনো ঝরা পাতার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে আগুন নেভানোর চেষ্টা শুরু হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা জয়প্রকাশ মণ্ডল বলেন, ‘‘পাহাড়ে আগুন লাগলে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। বহু বিরল লতা ও গাছের পাশাপাশি জীব জন্তু, পাখি ও সরীসৃপ মারা যায়। গত বছর পাহাড়ে আগুন লাগেনি। এ বছর আবার কেউ বা কারা আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। সকালে পাহাড়তলির পুকুরে স্নান করতে গিয়ে আগুন নজরে আসতেই বন দফতরে খবর দেওয়া হয়েছে। এই সময় পলাশের সমারোহ দেখতে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকেরা শুশুনিয়া পাহাড়ে আসেন। এই অগ্নিকাণ্ডে তাঁরাও আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন।’’
বন দফতরের ছাতনা রেঞ্জের আধিকারিক নির্মল দাস বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা নাগাদ পাহাড়ে আগুন লাগার খবর পাই। সঙ্গে সঙ্গেই বন কর্মীদের আগুন নেভানোর কাজে নামানো হয়। পাহাড়ের এক হেক্টরের মতো এলাকায় আগুনটি ছড়িয়ে পড়েছিল। আমরা আগুন প্রায় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছি। শুশুনিয়া পাহাড় বাঁকুড়া জেলার অন্যতম সম্পদ। আগুন লাগলে পাহাড়ের প্রকৃতির সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়। আমরা লাগাতার সচেতনতা প্রচার চালাচ্ছি। তার পরেও কে বা কারা এই আগুন লাগিয়েছে, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। দ্রুত তাদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’’