(বাঁ দিকে) দুর্ঘটনার ঠিক আগের মুহূর্তে। ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ি দু’টির একটি (ডান দিকে।) —নিজস্ব চিত্র।
খড়দহের একটি লেভেল ক্রসিংয়ে হাজারদুয়ারি এক্সপ্রেস রবিবার যে দু’টি ছোট গাড়িকে ধাক্কা মেরেছিল, তারই একটির চালককে সোমবার গ্রেফতার করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে দু’টি গাড়িও। রেল দাবি করেছে, অন্য গাড়িটির চালককেও দ্রুত গ্রেফতার করা হবে।
রবিবার রাতে রাত পৌনে ৯টা নাগাদ খড়দহ স্টেশন লাগোয়া ৯ নম্বর রেলগেট বন্ধ করার সময় বিপত্তি ঘটেছিল। রেল জানিয়েছিল, রবিবার রাত পৌনে ৯টা নাগাদ ডাউন হাজারদুয়ারি এক্সপ্রেস দমদমের দিকে আসছিল চার নম্বর লাইন ধরে। তার আগে ৯ নম্বর রেলগেটের গেটম্যান ‘ক্রসিং গেট’ বন্ধ করেছিলেন। তখন একটি গাড়ি জোর করে লেভেল ক্রসিংয়ে প্রবেশ করে এবং হাজারদুয়ারি এক্সপ্রেসের সঙ্গে ধাক্কা খায়। গাড়িচালক ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান বলেও রেল দাবি করে। দু’টি গাড়ি রেললাইনের পাশে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল।
রেল সম্পূর্ণ ভাবেই এই দুর্ঘটনার দায় সংশ্লিষ্ট গাড়ির চালকের উপরেই চাপায়। এ নিয়ে অভিযোগও দায়ের করে তারা। তার ভিত্তিতেই একটি গাড়ির চালককে গ্রেফতার করা হয়েছে। খোঁজ চলছে দ্বিতীয় গাড়িটির চালকেরও। ইতিমধ্যে গাড়ি দু’টিকেও আটক করা হয়েছে বলে রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, রবিবার রাতে অনেক ক্ষণ ধরেই লেভেল ক্রসিংয়ের উপর গাড়ির চাপ থাকায় গেটম্যান খড়দহের ওই ক্রসিং গেট বন্ধ করতে পারছিলেন না। পরে কোনও রকমে তিনি গেট বন্ধ করেন। কিন্তু তত ক্ষণে বিটি রোডের দিক থেকে আসা দু’টি গাড়ি এক পাশের গেট (রেলের পরিভাষায় বুম) অতিক্রম করে উল্টো দিকের বুম পেরোনোর আগে আটকে পড়ে। তার অব্যবহিত পরেই চার নম্বর লাইন ধরে আসা ডাউন হাজারদুয়ারি এক্সপ্রেস ওই গাড়ি দু’টিকে ধাক্কা মারে।
স্থানীয়দের দাবি, ওই লেভেল ক্রসিংয়ে গাড়ির চাপ প্রবল থাকে। পাশাপাশি তাঁরা এ-ও জানিয়েছেন, এক বার রেল গেট বন্ধ হলে একাধিক ট্রেন পাস করে ওখান থেকে। ফলে অনেক ক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয় গাড়িগুলিকে। তাই অনেকেরই প্রবণতা, গেট বন্ধ হওয়ার আগে দ্রুত লেভেল ক্রসিং পার হতে হবে। না হলে আটকে থাকতে হবে। সেই প্রবণতার কারণে গেটম্যান সঠিক সময়ে ক্রসিং গেট বন্ধ করতে পারেন না বলেও রেলের দাবি। সেই প্রবণতার কারণেই রবিবার ওই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয়দের একাংশের মত। দীর্ঘ দিন ধরে ওই এলাকায় ওভার ব্রিজ তৈরির দাবিও জানিয়ে আসছেন তাঁরা।
রবিবার রাতের দুর্ঘটনার সময়কার একাধিক ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ঘুরছে। তারই একটিতে দেখা গিয়েছে, রেলগেটের এক পাশের বুম পুরোপুরি নামেনি। কিছুটা অংশ নেমে আসতে তখনও বাকি। মিনিটখানেকেরও বেশি সময় ধরে শূন্যে একই জায়গায় থমকেও ছিল বুমটি। আর তার ঠিক আগেই আটকে রয়েছে দু’টি গাড়ি। গাড়ি দু’টির আগে কয়েকটি অটো এবং টোটো রয়েছে। অটো-টোটোগুলি বুমের অংশ পেরিয়ে যেতেই বুম সম্পূর্ণ ভাবে নেমে আসে এবং গেট বন্ধ হয়ে যায় (এই ভিডিয়োর সত্যতা আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি)। এর পরেই দেখা যায় চার নম্বর লাইন ধরে এগিয়ে আসছে হাজারদুয়ারি এক্সপ্রেস। তিন নম্বর লাইনে দাঁড়িয়ে একটি আপ ট্রেনও সেই সময় চলতে শুরু করে হাজারদুয়ারি যে দিক থেকে আসছিল সেই অভিমুখে। একাধিক ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, চার নম্বরের রেললাইন এবং গেটের বুমের মধ্যের অংশে আটকে রয়েছে গাড়ি দু’টি। যে দু’টিকে ধাক্কা মারে হাজারদুয়ারি। ভিডিয়োগুলি প্রকাশ্যে আসতেই অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, কেন দু’টি গাড়ি আটকে থাকা সত্ত্বেও গেট বন্ধ করে দেওয়া হল?
রেল যদিও এ প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করেনি। তারা গোটা ঘটনার দায় ওই দু’টি গাড়ির চালকের উপরেই চাপিয়ে দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে পূর্ব রেলের মুখ্য জন সংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র বলেন, ‘‘ট্রেন আসার সময়ে এ ভাবে জোর করে লেভেল ক্রসিং পেরোনোর প্রবণতা বিপজ্জনক। এই প্রবণতা যে কোনও মুহূর্তে আরও বড় দুর্ঘটনা ডেকে আনতে পারে। সাধারণ মানুষকে আরও বেশি সচেতন থাকতে হবে। রেলের তরফেও সচেতন করার চেষ্টা করা হয় সাধারণ মানুষকে।’’
প্রাক্তন রেলকর্মীদের একাংশের মতে, ক্রসিং গেট বন্ধ হলে তবেই নিকটবর্তী স্টেশন মাস্টারের কাছে সঙ্কেত যায়, গেট বন্ধ হয়েছে। তার পরেই তিনি ট্রেন চলাচলের প্রয়োজনীয় সিগন্যাল দেন। এ ক্ষেত্রে সেই মতো ট্রেন চলাচল করেছে। এবং গেট বন্ধ হয়েছিল বলেই সিগন্যাল পেয়ে হাজারদুয়ারি এগিয়েছিল নির্দিষ্ট পথে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy