Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪

পছন্দের নামের অধিকার থেকে বঞ্চনা কেন?

শরীরে পুরুষ, মনে নারী এই রূপান্তরকামী সদ্য কলকাতা পুলিশে সিভিক ভলান্টিয়ারের চাকরি পেয়েছেন। কিন্তু কাগজে-কলমে নিজের নতুন নামের স্বীকৃতি পেতেই নাজেহাল হতে হচ্ছে তাঁকে।

পল্লবী চক্রবর্তী

পল্লবী চক্রবর্তী

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৯ ০৪:১৪
Share: Save:

কবি বলেছেন, গোলাপে যে-নামে ডাকো...! কিন্তু নামে যে অনেক কিছুই আসে-যায়, টের পাচ্ছেন পল্লবী চক্রবর্তী। দু’বছর আগে যিনি খাতায়-কলমে পল্লব ছিলেন।

শরীরে পুরুষ, মনে নারী এই রূপান্তরকামী সদ্য কলকাতা পুলিশে সিভিক ভলান্টিয়ারের চাকরি পেয়েছেন। কিন্তু কাগজে-কলমে নিজের নতুন নামের স্বীকৃতি পেতেই নাজেহাল হতে হচ্ছে তাঁকে। নিজেকে তৃতীয় লিঙ্গভুক্ত মানুষ বলে দাবি করে পল্লবী বছর দুয়েক আগে আদালতে হলফনামা পেশ করেছিলেন। পল্লবী নামে বিজ্ঞাপনও দেন গেজেটে। ২০০৯ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ‘পল্লব’-কে তবু পল্লবী বলে চিহ্নিত করতে রাজি নয় মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রাক্কালে এই নারীসুলভ নামটুকুর স্বীকৃতির জন্য হাইকোর্টের দ্বারস্থ পল্লবী।

পল্লবীর দু’‌টো লড়াই চলছে একসঙ্গে। প্রথমত, নিজের পছন্দের নামে নিজেকে চিহ্নিত করার অধিকার আদায়ের লড়াই। ‘‘আমি আমার পছন্দমাফিক নামের অধিকার থেকে কেন বঞ্চিত হব, মাথায় ঢুকছে না,’’ বলছেন ময়দান থানায় কর্মরত পল্লবী। দ্বিতীয়ত, পল্লবের পরিবর্তে পল্লবী হয়ে সেই নামেও রূপান্তরকামনার স্বাক্ষর রাখতে চাইছেন তিনি।

গত দু’দশকে নারীর অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে রূপান্তরকামী বা তৃতীয় লিঙ্গভুক্তদের অধিকারের লড়াইও ঢুকে পড়েছে। কয়েক বছর ধরে কলকাতার নারী দিবস উদ্‌যাপনেও মেয়েদের সঙ্গে শামিল হচ্ছেন রূপান্তরকামীরা। রাজপথে রূপান্তরকামী মেয়েদের ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ করতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত বছর তাঁদের পুলিশের স্বেচ্ছাসেবী বাহিনীতে নিতে বলেন। নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মেনে জানুয়ারিতে সিভিক ভলান্টিয়ার হিসেবে চাকরি হয়েছে পল্লবীর। কিন্তু মাধ্যমিকের শংসাপত্রে পল্লবী নামটিকে স্বীকৃতি দেওয়ার আবেদন খারিজ করে দেয় মধ্যশিক্ষা পর্ষদ।

২৪ সেপ্টেম্বর মাধ্যমিকের নথিতে নামবদলের আবেদন করেন পল্লবী। তাঁর কাছে লিঙ্গান্তর অস্ত্রোপচারের নথি চায় পর্ষদ। পল্লবী ২০১৫ সালে স্নাতক হওয়ার পরেই হরমোনের চিকিৎসা শুরু করেন। তবে লিঙ্গান্তর অস্ত্রোপচার এখনও করাননি। পল্লবী বোঝানোর চেষ্টা করেন, নাম বদলাতে ওই নথি অবান্তর। তাতেও পর্ষদের মনোভাব বদলায়নি। ‘‘এ ভাবে নাম বদল হয় না,’’ বলছেন পর্ষদ-সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়।

সুপ্রিম কোর্ট ২০১৪ সালে নালসা রায়ে বলেছিল, পুরুষ, মহিলা বা তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধি হিসেবে নিজের লিঙ্গ নির্ণয় ব্যক্তির মৌলিক অধিকার। ‘‘সুতরাং নিজেকে নারী বা তৃতীয় লিঙ্গের এক জন বলে দাবি করতে পারেন পল্লবীও। এর জন্য কোনও অস্ত্রোপচার জরুরি নয়,’’ বলছেন পল্লবীর আইনজীবী অঙ্কন বিশ্বাস। শরীরে মেয়ে, মনে পুরুষ অঙ্কনও রূপান্তরকামী। রূপান্তরকামী নারী তথা সমাজকর্মী রঞ্জিতা সিংহও পর্ষদের সচেতনতার খামতিতে বিরক্ত। তিনি বলেন, ‘‘আমার ক্ষেত্রে মাধ্যমিকে আগের ‘রঞ্জিত’ নামই রয়েছে। কিন্তু ড্রাইভিং লাইসেন্সের মতো শিক্ষাগত নথিতে নতুন নাম বসাতে চাওয়াটা অন্যায় নয়।’’

তিন বছর আগে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে রূপান্তরিত পুরুষ তমাল ভট্টাচার্যও পর্ষদ ও উচ্চ মাধ্যমিক সংসদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। শংসাপত্রের তমালী নাম পাল্টে তমাল হতে চান তিনি। চার সপ্তাহের মধ্যে তাঁর আর্জি মঞ্জুর করতে বলেন বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত। কিন্তু পর্ষদ-সভাপতি এ দিনও দাবি করেন, সেই মামলায় উল্টো রায় হয়েছিল।

অন্য বিষয়গুলি:

Transgender 3rd Gender Kolkata Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE