রুজি: ছেলেকে নিয়ে ঠোঙা তৈরি করছেন পূর্ণিমা। নিজস্ব চিত্র
চার বছর হল তাঁর অজ্ঞাতবাসের। আরও কত দিন? রাতে ঘুম নেই পূর্ণিমা মৃধার।
জমানো টাকা, জমি-জায়গা গিয়েছে। কোনও গয়না নেই। স্বামী ‘খুন’ হয়েছেন। হামলার ভয়ে বাপেরবাড়িতেও ঠাঁই নিতে পারেননি। ভিন্ জেলার তস্য গলির মধ্যে দরমার বেড়ার ঘরে অজ্ঞাতবাসে থেকে ঠোঙা বানিয়ে দিন গুজরান করছেন সুন্দরবন কোস্টাল থানার দয়াপুরের বছর পঁয়ত্রিশের ওই মহিলা। সাড়ে সাত বছরের ছেলে প্রত্যুষ প্রায়ই জিজ্ঞেস করে, ‘‘কবে বাড়ি ফিরব?’’ চুপ করে থাকেন মা। তিন লক্ষ টাকা জোগাড় করতে হবে যে!
বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থার মামলায় কেন্দ্র-রাজ্য, সিবিআই-কলকাতা পুলিশের চাপান-উতোরের খবর পৌঁছয় না ওই দরমার ঘরে। পূর্ণিমা শুধু জানেন, তাঁর ‘অপরাধ’, তিনি ‘রাহুল হাইরাইজ’ নামে বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থার এজেন্ট গৌতম মৃধার স্ত্রী। ২০১৩ সালে সারদা কেলেঙ্কারি সামনে আসার পরে ঝাঁপ বন্ধ হয় ‘রাহুল’-এরও। গৌতম লগ্নিকারীদের সব টাকা মিটিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু হামলার হাত থেকে রেহাই পাননি।
অথচ, এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। আইটিআইয়ের ডিপ্লোমা ছিল গৌতমের। বিয়ের পরেও চাকরি পাননি বলে চুটিয়ে ছাত্র পড়াতেন। পূর্ণিমা জানান, ২০১২ সালে এক আত্মীয় পিয়ালিতে নিয়ে গিয়ে গৌতমকে ‘রাহুল হাইরাইজ’-এর এজেন্ট করে দেন। এলাকার লোকজনের কাছ থেকে তিনি প্রায় ১৬ লক্ষ টাকা তুলেছিলেন। কিন্তু পরের বছরই বিপদ ঘনায়। সংস্থা বন্ধ হতেই বাড়িতে চড়াও হতে শুরু করেন লগ্নিকারীরা।
আরও পড়ুন: ওকল্যান্ডের কাছেই থাকেন প্রতারিতেরা
বাঁচার তাগিদে মৃধা দম্পতি পিয়ালি ছেড়ে দয়াপুরে ফেরেন। প্রতিশ্রুতি রক্ষায় গৌতম নিজের সব সঞ্চয় দিয়ে দেন। জমি, স্ত্রীর গয়নাও বেচে দেন। সব মিলিয়ে ১০ লক্ষ টাকা হয়। পূর্ণিমার বাপেরবাড়ি থেকে আরও তিন লক্ষ টাকা দেওয়া হয়। তবু রেহাই মেলেনি বলে অভিযোগ। ২০১৪ সালের শেষ দিকে সেচ দফতরে চাকরি পান গৌতম। ফের লগ্নিকারীদের টাকা ফেরতের আশ্বাস দেন। কিন্তু অভিযোগ, বাড়িতে হামলা আরও বাড়ে। ২০১৫-র ২০ ফেব্রুয়ারি দয়াপুরে চড়াও হয়ে গৌতম-পূর্ণিমা এবং প্রত্যুষকে তুলে এনে পিয়ালির একটি ঘরে কিছুদিন আটকে রাখা হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি মাঝরাতে কয়েক জন এসে গৌতমকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। ভোরে পূর্ণিমাকে জানানো হয়, রেললাইনে পড়ে রয়েছে গৌতমের দেহ। তিনি আত্মহত্যা করেছেন।
কিন্তু মৃতদেহ শনাক্ত করার পরে পূর্ণিমার সন্দেহ হয়। তিনি থানায় খুনের অভিযোগ জানান। পূর্ণিমার প্রশ্ন, “ওর একটা হাত ছিল না। চোখ খুবলে নেওয়া হয়েছিল। পুরুষাঙ্গ কেটে নেওয়া হয়েছিল। কেউ আত্মহত্যা করলে এমন হয় বলুন?”
গৌতমের অপমৃত্যুতেই এ কাহিনির শেষ নয়। পূর্ণিমার উপরেও পাওনাদারেরা চড়াও হয় এবং এফআইআর প্রত্যাহারের জন্য চাপ তৈরি করতে থাকে বলে অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত এক রাতে ছেলেকে নিয়ে ঘর ছাড়েন পূর্ণিমা। অজ্ঞাতবাসে গিয়ে প্রথম দিকে অন্যের বাড়িতে রান্নার কাজ করতেন। মাস ছয়েক ধরে শরীর জবাব দিয়েছে।
গৌতমের অপমৃত্যুর ঘটনার এখনও তদন্ত চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। পূর্ণিমা অবশ্য আদালতে গিয়ে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কিন্তু প্রশ্ন একটাই, টাকা জোগাবে কে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy