যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উজ্জ্বল ইতিহাসের গরিমাই যেন ফিরে এল শুক্রবার দুপুরে। শতাধিক বছরের পুরনো কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রকাণ্ড ল্যাবরেটরি এ বার প্রাক্তনীদের হাত ধরে নতুন চেহারায় সেজে উঠল। যাদবপুরের সহ-উপাচার্য অমিতাভ দত্ত এর পুরো কৃতিত্ব দিলেন ১৯৮১ সালে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রাক্তনী সনৎ চট্টোপাধ্যায়কে। সনতের অনবরত মন্ত্রণা এবং ঠেলাঠেলিতেই কর্পোরেট সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে যাদবপুরের ঐতিহ্যশালী ল্যাবরেটরি ভগ্নস্তূপ থেকে ফিনিক্স পাখির
মতো জেগে উঠেছে। একই সঙ্গে আন্তঃবিষয় ভিত্তিক গবেষণার জন্য যাদবপুরে ‘সনৎ চ্যাটার্জি রিসার্চ সেন্টার অন এনভায়রনমেন্টাল সাসটেনেবিলিটি’ বলে একটি
উৎকর্ষ কেন্দ্র গড়ে ওঠার কথা জানান যাদবপুর কর্তৃপক্ষ।
আমেরিকাপ্রবাসী সনৎ এখন বহুজাতিক ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থার উৎপাদন শাখার প্রেসিডেন্ট। তিনি বলছিলেন, ‘‘কর্মক্ষেত্রে দেখেছি, ক্লাসঘরের বদলে ল্যাবে কী শিখেছি, সেটাই আগে মনে পড়ে। ল্যাবের থেকে বড় শিক্ষক নেই। আর যাদবপুরের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো বড় ল্যাব দেশে বেশি নেই।’’
বঙ্গীয় জাতীয় শিক্ষা পরিষদের আমলে তৎকালীন কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনলজি হিসেবেই যাদবপুর এক দিন প্রকৌশলী বিদ্যায় দেশের তরুণদের স্বপ্ন দেখিয়েছিল। কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ল্যাবরেটরিটি সে-যুগের। অমিতাভ বলছিলেন, ‘‘জরাজীর্ণ দশায় কিছুটা অসুবিধে করেই ল্যাবের কাজ চলছিল। সনৎদাই আমাদের কর্পোরেট সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের সুযোগ কাজে লাগানোর বুদ্ধি দেন।’’
সনতের সহায়তাতেই যাদবপুরের কর্মকাণ্ডের জন্য এক কোটি টাকা উঠে এসেছে। এর মধ্যে ৭০ লক্ষ মতো কেমিক্যালে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ল্যাবরেটরিতে লেগেছে। সনতের নামে পরিবেশবন্ধু উৎকর্ষ গবেষণা কেন্দ্রটির কাজ বাকি টাকা হাতে শুরু হলেও দ্রুত আরও তহবিল বাড়ানোর চেষ্টা তাঁরা করবেন বলে জানান সনৎ। যাদবপুরের শিক্ষাপ্রাঙ্গণে জায়গাও মোটামুটি ঠিক, প্রকল্পটির জন্য। এ বছরই পিএইচ ডি-র গবেষকদের নেওয়া শুরু হবে। সনৎ বলেন, ‘‘আর্থিক বৃদ্ধি এবং পরিবেশগত ভারসাম্য এখন সর্বত্র অঙ্গাঙ্গী জড়িয়ে। এই উৎকর্ষ কেন্দ্রটি দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হাতিয়ার হবে এবং যাদবপুরকে অনেক এগিয়ে দেবে বলে আমাদের আশা। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিল্পক্ষেত্রের সঙ্গে সমন্বয়ে কেন্দ্রটিতে অনেক কাজের পরিকল্পনা রয়েছে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)