কলকাতা পুরসভার অনুষ্ঠান। উপস্থিত খোদ মেয়র ফিরহাদ হাকিম। সেখানে তাঁর সামনেই কার্যত নজিরবিহীন ভাবে তৃণমূলেরই দুই গোষ্ঠী জড়িয়ে পড়ল সংঘর্ষে, যার জেরে তিন জনের মাথা ফেটে যায় বলে অভিযোগ। মেয়র পরিস্থিতি সামাল দিতে উদ্যোগী হলে তাঁকেও ধাক্কাধাক্কি করা হয় বলে অভিযোগ। যদিও তাঁকে ধাক্কা দেওয়ার কথা মেয়র অস্বীকার করেছেন। ঝামেলা থামাতে গেলে মেয়র পারিষদ তারক সিংহকেও ধাক্কা মারা হয়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সোমবার বিকেলে দমদমের সেভেন ট্যাঙ্কস সংলগ্ন এলাকায় দুই ও তিন নম্বর ওয়ার্ডের সংযোগস্থলে পুর নিকাশি দফতরের একটি অনুষ্ঠান ছিল। সেই মঞ্চের কাছেই দু’নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি কাকলি সেনের তরফে আর একটি মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল। দীর্ঘ দিন পরে এলাকায় মেয়র আসছেন বলে তাঁকে সংবর্ধনা দিতেই কাকলি মঞ্চ গড়েছিলেন। অভিযোগ, এ দিন বিকেলে মেয়র ওই মঞ্চের সামনে আসতেই কাকলির অনুগামীদের সঙ্গে এলাকার বিধায়ক তথা ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষের ঘনিষ্ঠ, এক নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল নেতা আনোয়ার খানের অনুগামীদের ঝামেলা শুরু হয়। চলতে থাকে হাতাহাতি। ওই মঞ্চের সামনে পৌঁছে তাজ্জব বনে যান মেয়র। পরে তিনি বলেন, ‘‘আমি মঞ্চের সামনে যেতেই দেখি, মঞ্চের উপরে দু’দল মারপিট করছে। আমি ওদের থামাই।’’ স্থানীয় সূত্রের খবর, এর পরেও দুই গোষ্ঠী রাস্তায় নেমে মারামারি শুরু করে। যা দেখে অতীন ঘোষ, তারক সিংহেরাও হতবাক হয়ে যান। পরিস্থিতি সামলাতে গেলে তারককেও ধাক্কা দেওয়া হয়।

দমদমে গন্ডগোল। সোমবার। — নিজস্ব চিত্র
স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই মঞ্চে মেয়রের কাছে কারা আগে পৌঁছে ফুল দিয়ে সংবর্ধনা দেবে, তা নিয়েই তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত। অভিযোগ, আনোয়ারের অনুগামীরা কাকলির অনুগামীদের প্রবল মারধর করে। তিন জনের মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়। ঘটনা প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, ‘‘আমি গিয়ে দেখি, দুই গোষ্ঠীর মধ্যে মারপিট চলছে। কারা আমাকে আগে ফুল দিতে আসবে, তা নিয়েই নাকি ঝামেলার সূত্রপাত। আমি ওদের বলি, তৃণমূল কর্মীদের কি এমন আচরণ শোভা পায়! তবে, আমাকে কেউ ধাক্কাধাক্কি করেনি।’’
এ দিন ওই মঞ্চ কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। পরিস্থিতি সামলাতে পৌঁছোয় পুলিশ। গন্ডগোল থামলে মেয়র, ডেপুটি মেয়র-সহ অন্য পুরপ্রতিনিধিরা পাশের সরকারি অনুষ্ঠানের মঞ্চে উপস্থিত হন। অতীন অবশ্য দাবি করেন, ‘‘তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়নি। কারা মেয়রকে আগে ফুলের মালা দেবে, তা নিয়ে একটু বাদানুবাদ হয়। বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে মিটেও যায়। মেয়র পুরো অনুষ্ঠান শেষ করে ফিরেছেন।’’
ঘটনা প্রসঙ্গে কাকলি বলেন, ‘‘এটা দুই, তিন ও চার নম্বর ওয়ার্ডের অনুষ্ঠান। কিন্তু বহিরাগত গুন্ডারা এসে আমার অনুগামীদের মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে।’’ কাকলির অভিযোগ উড়িয়ে আনোয়ারের দাবি, ‘‘আমার কোনও অনুগামী ওখানকার ঝামেলায় ছিল না। এটা আমাকে কালিমালিপ্ত করার চক্রান্ত ছাড়া কিছু নয়।’’ তারক বলেন, ‘‘মেয়রকে কারা আগে ফুল-মালা দেবে, তা নিয়ে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়।’’ রাতে দুই তরফেই পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)