মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকের আগে ‘পাস’ নিয়ে ধুন্ধুমারকাণ্ড নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের সামনে। পাসহীন এবং পাসধারী— কার্যত এই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়েছেন চাকরিহারারা। যাঁদের কাছে ‘পাস’ নেই, তাঁদের নেতাজি ইন্ডোরে ঢুকতে দেওয়া যাবে না বলে দাবি তুলেছেন, হাত ‘পাস’ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা চাকরিহারারা। কিন্তু এই ‘পাস’ কারা দিল, কারা এটি পাওয়ার দাবিদার, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
কী লেখা আছে সেই ‘পাস’-এ? আকাশি প্রেক্ষাপটে গাড় নীল রঙে লেখা রয়েছে ‘আমরা যোগ্য’। চাকরিহারাদের বসার জায়গা নির্দিষ্ট করে দিয়ে কোনও পাস-এ লেখা আছে ‘ফ্লোর’ বা মেঝে, কোনও ‘পাস’-এ আবার গ্যালারি।
ইতিমধ্যেই ‘পাস’ দেখে চাকরিহারাদের লাইন করিয়ে নেতাজি ইন্ডোরের ভিতরে ঢোকাচ্ছে পুলিশ। এই প্রসঙ্গে কলকাতা পুলিশের ডিসি সেন্ট্রাল ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অনেক লোক চলে এসেছেন। আমরা অন্য গেট দিয়ে ঢোকানোর চেষ্টা করছি। পাস কারা দিয়েছে, আমাকে সেটা দেখতে হবে। পাস দেখেই আমরা ঢোকাচ্ছি।’’ যাঁদের কাছে ‘পাস’ নেই, তাঁরা এর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কবে কী ভাবে এই ‘পাস’ দেওয়া হল, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।
চাকরিহারাদের ‘পাস’ বন্টনের ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকায় দেখা গিয়েছে ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ’ নামক একটি সংগঠনের সদস্যদের। সংগঠনটির তরফে দাবি করা হয়েছে, তাদের তরফ থেকে যাঁরা আদালতে মামলা করেছিলেন, তাঁদের নামের তালিকা রয়েছে। সংগঠনটির আরও দাবি, সরকার তাদের এই ‘পাস’ দিয়েছে। যদিও সরকারের তরফে আনুষ্ঠানিক ভাবে এই বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।
সংগঠনটির দাবি, যোগ্য চাকরিহারা শিক্ষকের সংখ্যা ১৫,৪০৩। তারা ‘পাস’ পেয়েছে ৭৫০০টি। প্রত্যেক চাকরিহারা যে ‘পাস’ পাবেন না, তা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন ওই সংগঠনের এক সদস্য। তবে তাদের দাবি, ১২,০০০ জন যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চের তরফ থেকে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন।
‘পাস’ নিয়ে এই গোলমাল কেন, এই প্রশ্নের উত্তরে ওই সংগঠনের দাবি, সুপ্রিম কোর্টের কথায় যাঁরা ‘দাগি’ অর্থাৎ অযোগ্য চাকরিহারা, তাঁরা আগেভাগে নেতাজি ইন্ডোরের সামনে জড়ো হয়ে ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করে। ওই সংগঠনের সদস্যদের আরও অভিযোগ, অযোগ্যেরা সোমবার ভোরে শহিদ মিনার চত্বরে তাঁদের কাছ থেকে ‘পাস’ কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন।
‘পাস’ নিতে গেলে কী করতে হবে, তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন ওই সংগঠনের সদস্যেরা। তাঁদের এক জনের কথায়, “পাস নিতে গেলে সেই চাকরিহারা আমাদের কাছে যে পিটিশন করেছিল, সেই পিটিশনের নম্বর, তার অ্যাডমিট কার্ড এবং একটি সচিত্র পরিচয়পত্র লাগবে।” সোমবার সকালে দেখা গিয়েছে, টোকেন দেখিয়ে অনেকে ‘পাস’ সংগ্রহ করছেন। সংগঠনটির দাবি, কাজের সুবিধার্থে ওই টোকেন দেওয়া হয়েছিল, যাতে দ্রুত সেটি দেখে ‘পাস’ বিলি করা যায়। তাদের দাবি মোতাবেক, রবিবার সন্ধ্যায় ‘পাস’ হাতে পায় তারা। তার পর হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপে সকলকে ‘পাস’ সংগ্রহ করতে বলা হয়।