সারদা মামলায় ধৃতেরা যাতে জামিন না পেয়ে যান, তা নিশ্চিত করতে দ্রুত প্রাথমিক চার্জশিট পেশ করতে চাইছে সিবিআই। তাদের হাতে আর এক মাস সময় রয়েছে। দিল্লিতে সিবিআইয়ের সদর দফতরে চার্জশিট গঠনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। সিবিআইয়ের সারদা-তদন্তকারী দলের প্রধান রাজীব সিংহ আজ কলকাতা থেকে দিল্লি এসে সিবিআই প্রধান রঞ্জিৎ সিন্হার সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
সিবিআই প্রধান নভেম্বরের শেষে অবসর নেবেন। তিনিও চাইছেন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই প্রাথমিক চার্জশিট পেশ করতে। আইন অনুযায়ী কাউকে গ্রেফতারের ৯০ দিনের মধ্যে চার্জশিট পেশ করতে হয়। তা না হলে অভিযুক্তরা জামিনের জন্য আদালতে আবেদন করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে জামিন পেয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। সিবিআই সূত্রের বক্তব্য, যাঁদের এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে, প্রাথমিক চার্জশিটে মূলত তাঁদের নামই থাকবে। সন্দেহের তালিকায় থাকলেও রাজনৈতিক হেভিওয়েটদের অনেককেই এখনও সিবিআই জেরা করেনি বা তাঁদের বাড়িতে তল্লাশিও চালায়নি। প্রাথমিক চার্জশিটে তাঁদের নাম রাখা হবে কি না, তা নিয়ে সিবিআইয়ের শীর্ষ স্তরে আলোচনা চলছে। যুগ্ম নির্দেশক রাজীব সিংহ বারবার দিল্লিতে এসে এ বিষয়েই শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন।
সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত সিবিআই দু’টো রাস্তা ভেবে রেখেছে। এক, প্রাথমিক চার্জশিটে রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের নাম করে আদালতের নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করা। অথবা দুই, নির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করে তবেই রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের নাম পরবর্তী চার্জশিটে আনা। সে ক্ষেত্রে প্রাথমিক চার্জশিট পেশ করে সিবিআই আদালতে জানাবে, সারদা কাণ্ডের বিশাল তদন্তে আরও সময় প্রয়োজন। তদন্তের স্বার্থে ধৃতদেরও হেফাজতে রাখতে হবে। তদন্ত যেমন এগোবে, সেই অনুযায়ী অতিরিক্ত চার্জশিট পেশ করা হবে।
সারদা মামলায় সুদীপ্ত সেন, দেবযানী মুখোপাধ্যায় এবং কুণাল ঘোষকে রাজ্য পুলিশই গ্রেফতার করেছিল। তাঁরা এখন সিবিআই হেফাজতে রয়েছেন। সারদা তদন্তের দায়িত্ব হাতে নেওয়ার পরে সিবিআই নিজে পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রথমে ইস্টবেঙ্গল-কর্তা দেবব্রত সরকার ওরফে নিতুকে গ্রেফতার করে। তার পরে তৃণমূল নেতা তথা প্রাক্তন পুলিশ-কর্তা রজত মজুমদার এবং ব্যবসায়ী সন্ধির অগ্রবালকে গ্রেফতার করা হয়। কলকাতা থেকেই গ্রেফতার হন অসমের সঙ্গীতশিল্পী সদানন্দ গগৈ-ও।
সিবিআইয়ের আশঙ্কা, ধৃতেরা জামিন পেয়ে গেলে তদন্তে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসারদের বক্তব্য, রাজ্য পুলিশের তদন্ত চলাকালীন অভিযুক্তরা তথ্যপ্রমাণ লোপাটের জন্য যথেষ্ট সময় পেয়ে গিয়েছিলেন। তার পরেও সিবিআই তদন্তে নেমে নির্দিষ্ট কাগজপত্র জোগাড় করে তবেই অভিযুক্তদের গ্রেফতার করেছে। এ বার অভিযুক্তরা জামিন পেয়ে গেলে ফের সমস্যা তৈরি হবে। তা ছাড়া অভিযুক্তরা এমনিতেই যথেষ্ট প্রভাবশালী। কাজেই তাঁরা তদন্তেও প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করতে পারেন। সিবিআইয়ের এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, “খেলা সবে শুরু হয়েছে। শক্ত হাতে রাশ ধরে রাখতে হবে। মুঠো আলগা করার প্রশ্নই নেই।”
তা ছাড়া তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বার্থেও ধৃতদের হেফাজতে রাখা জরুরি বলে মনে করছে সিবিআই। যেমন দেবব্রত সম্পর্কে এক তদন্তকারী অফিসারের ব্যাখ্যা, দেবব্রত সেবি-র সঙ্গে সুদীপ্ত সেনের যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছিলেন। সেবি-র একেবারে শীর্ষ স্তরেন নিজের যোগাযোগ রয়েছে বলে দাবি করেছিলেন। “এই দিকটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছি। কারণ দেবব্রতর দাবি সত্যি হলে সারদা কেলেঙ্কারির থেকেও বড় কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসবে। দেবব্রতকে হেফাজতে রাখা তাই জরুরি।”
একই ভাবে রজত মজুমদারকেও জামিনে বের হতে দিতে চায় না সিবিআই। রজত তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে সারদার যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ছিলেন বলে অভিযোগ। সিবিআইয়ের দাবি, রজত বহু তথ্যপ্রমাণ নষ্ট করার চেষ্টা করেছেন। সুদীপ্ত সেনকে পালাতে তিনিই সাহায্য করেছিলেন। সিবিআইয়ের এক তদন্তকারী অফিসারের কথায়, রজত শাসক দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। তিনি নিজে পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছেন। পুলিশি তদন্ত সম্পর্কে তিনি যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। সুতরাং ওই অফিসারের মতে, “কোন তথ্যপ্রমাণ আদালতে কতখানি গুরুত্বপূর্ণ, কোন কোন নথি গায়েব করে দিলে তদন্ত হোঁচট খাবে, তা রজত মজুমদারের পক্ষে বোঝা সবথেকে সহজ।” রজত ছাড়া পেয়ে গেলে তিনি ফের তথ্যপ্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করবেন বলে আশঙ্কা সিবিআই অফিসারদের।
দেবব্রত সরকার গ্রেফতার হন ২০ অগস্ট। তার ছয় দিন আগে সারদা মামলাতেই ওড়িশার কংগ্রেস নেতা সমদিত কুন্তিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। কুন্তিয়াই ছিলেন সারদায় সিবিআইয়ের প্রথম গ্রেফতারি। হিসেব মতো, এঁদের দু’জনকে হেফাজতে রাখার জন্য ৯০ দিন পূর্ণ হওয়ার আগে, নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যেই সিবিআইকে প্রাথমিক চার্জশিট পেশ করতে হবে। কবে সেটা করা হবে, তা নিয়ে সিবিআই কর্তারা মুখ খুলতে চাইছেন না। রজতের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়ার জন্য আরও খানিকটা সময় রয়েছে সিবিআইয়ের হাতে। প্রাক্তন এই ডিজি গ্রেফতার হয়েছিলেন ৯ সেপ্টেম্বর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy