গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
বাঁকা পথে চাকরি নেওয়ায় গ্রেফতার করা হয়েছে চার প্রাথমিক শিক্ষককে। এ বার সিবিআই চার্জশিটে দাবি করা হয়েছে, ওই চাকরি পাওয়ার জন্য তাঁরা কত টাকা দিয়েছিলেন। কার হাতেই বা তুলে দিয়েছিলেন ‘স্কুলের চাকরি পাকা’ করে দেওয়ার বিনিময় মূল্য। নিয়োগ মামলার তদন্তকারী কেন্দ্রীয় সংস্থাটি তাদের চার্জশিটে জানিয়েছে, প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থীদের থেকে ছ’বছরে কয়েক কোটি টাকা তুলেছিলেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যবসায়ী তাপস মণ্ডল এবং তৃণমূলের বহিষ্কৃত যুবনেতা কুন্তল ঘোষ।
নিয়োগ মামলায় ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছে তাপস এবং কুন্তলকে। চার্জশিটে সিবিআইয়ের দাবি, তাপস বিভিন্ন এজেন্ট মারফত এবং ব্যক্তিগত ভাবেও চাকরিপ্রার্থীদের থেকে স্কুলের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কয়েক কোটি টাকা তুলেছিলেন। এঁদের মধ্যে যে সমস্ত অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীর থেকে তিনি ব্যক্তিগত ভাবে টাকা নিয়ে চাকরি পাইয়ে দিয়েছিলেন, সোমবার তাঁদের মধ্যেই চার শিক্ষককে জেলে পাঠিয়েছে আলিপুরের বিশেষ সিবিআই আদালত। বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ কারণ, এর আগে দুর্নীতির অভিযোগে প্রশাসনিক ব্যক্তিত্ব এবং এজেন্টদের গ্রেফতার করা হলেও অযোগ্য শিক্ষকদের গ্রেফতার করা হয়নি। এই প্রথম ‘শিক্ষক’দেরও জেলে পাঠাল আদালত। সিবিআই তাদের চার্জশিটে জানিয়েছে, এই চার শিক্ষক প্রাথমিক স্কুলে চাকরি পেতে সরাসরি টাকা দিয়েছিলেন তাপস মণ্ডলকে। এঁদের থেকে সংগৃহীত এবং অন্যান্য এজেন্ট থেকে পাওয়া মোট ৫ কোটি ২৩ লক্ষ টাকা তাপস আবার দিয়েছিলেন কুন্তলকে।
জেলে যাওয়া চার অযোগ্য শিক্ষকের নাম— জাহিরউদ্দিন শেখ, সায়গর হোসেন, সিমার হোসেন এবং সৌগত মণ্ডল। সিবিআইয়ের চার্জশিটের তথ্য অনুযায়ী, তাপসকে এঁদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি টাকা দিয়েছিলেন সায়গর। তিনি ৬ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন প্রাথমিকের শিক্ষকের চাকরির জন্য। জাহিরউদ্দিন এবং সৌগত দিয়েছিলেন সাড়ে ৫ লক্ষ টাকা করে। সিমার দিয়েছিলেন ৫ লক্ষ টাকা। চার জনেই অযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও স্কুলে চাকরি পান। এ ছাড়াও আসিক আহমেদ নামে এক প্রার্থী ১ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন তাপসকে। তিনি চাকরি পেয়েছেন কি না জানা যায়নি। তবে তিনি গ্রেফতারও হননি।
চার্জশিটে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটি জানিয়েছে, আট জন এজেন্ট মারফত ১৩৬ জন চাকরিপ্রার্থীর থেকে মোট ৩ কোটি ৮৯ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা তুলেছিলেন তাপস। নিজে পাঁচ চাকরিপ্রার্থীর থেকে নিয়েছিলেন ২৩ লক্ষ টাকা। সব মিলিয়ে, ৪ কোটি ১২ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা তুললেও কুন্তলকে ৫.২৩ কোটি টাকা দিয়েছিলেন তাপস এই প্রার্থীদের চাকরি পাকা করার জন্য। ২০১৬ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত চলেছে এই টাকা নেওয়ার কারবার। সিবিআই চার্জশিটে দাবি, কিছু কিছু চাকরিপ্রার্থীকে টোপ দিতে তাপসরা এমনও বলতেন যে, প্রশ্নপত্রে ছ’টি ভুল প্রশ্ন ছিল। হাই কোর্টে প্রার্থী আবেদন করলেই ওই ছ’টি প্রশ্নের প্রাপ্য নম্বর তাঁরা পেয়ে যাবেন। তাতেই তাঁদের নম্বর বেড়ে যাবে। এ ছাড়া অন্যান্য উপায়ও ছিল চাকরিপ্রার্থীদের ফাঁদে ফেলার জন্য।
সিবিআই চার্জশিটে জানিয়েছে, একা তাপস নন, কুন্তলও এজেন্ট মারফত ৩ কোটির বেশি টাকা তুলেছিলেন ওই ছ’বছরে। তিন জন এজেন্টের মাধ্যমে ৭১ জন অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীর থেকে মোট ৩ কোটি ১৩ লক্ষ টাকা তুলেছিলেন কুন্তল। যদিও এঁদের অধিকাংশই চাকরি পাননি বলে চার্জশিটে জানিয়েছে সিবিআই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy