Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
West Bengal Panchayat Election 2023

মঞ্চে তুলে প্রার্থী ঘোষণা করেন অভিষেক, কেশপুরে ‘নতুন তৃণমূল’-এর দুই মুখ পারলেন মুখরক্ষা করতে?

ফেব্রুয়ারি মাসে কেশপুরের সভায় গিয়ে মঞ্জু দলবেরা এবং শেখ হসিনুদ্দিনকে মঞ্চে ডেকে নিয়েছিলেন অভিষেক। জানান, তাঁরাই ‘নতুন তৃণমূলের মুখ’। দু’জনেই ফিরিয়ে দিয়েছিলেন আবাস যোজনার টাকা।

Candidates declared by Abhishek Banerjee on stage in Keshpur wins for TMC.

(বাঁ দিকে)কেশপুরের সভামঞ্চে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মঞ্জু দলবেরা। ওই মঞ্চেই শেখ হসিনুদ্দিন (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কেশপুর শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০২৩ ১৮:৫০
Share: Save:

মঞ্চে দাঁড়িয়ে ‘নতুন তৃণমূল’-এর কথা শোনাচ্ছিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘নতুন তৃণমূল’ কেমন, কারা সেই দলের প্রার্থী, সে সব বোঝাতে বোঝাতে হঠাৎই মঞ্চে তাঁদের ডাক পড়ে। অভিষেক স্বয়ং ডেকে নেন কেশপুরের শেখ হসিনুদ্দিন এবং মঞ্জু দলবেরাকে। তাঁরাই ‘নতুন তৃণমূলের মুখ’।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে কেশপুরে সভা করতে গিয়ে ‘নতুন তৃণমূলের’ যে দৃষ্টান্ত দিয়েছিলেন অভিষেক, পাঁচ মাসের ব্যবধানে ছিল তাঁদের ‘পরীক্ষা’। ভোটের পরীক্ষায় কেমন ফল করলেন মঞ্জু, হসিনুদ্দিন? তাঁরা কি অভিষেকের মুখ রাখতে পারলেন?

মঞ্জু ছিলেন তৃণমূলের গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য। এর আগেও তিনি পঞ্চায়েত ভোটে দাঁড়িয়েছেন। গোলাড়ের ৫৩ নম্বর বুথে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। ওই বুথে বিরোধীদের প্রার্থী ছিল না। ফলে সেই অর্থে ‘পরীক্ষা’র মুখে পড়তেই হয়নি মঞ্জুকে।

তবে পরীক্ষা দিয়ে হোক বা না দিয়ে, জয়ের আনন্দ চেপে রাখছেন না মঞ্জু। তিনি বলেছেন, ‘‘আমি গত ৬ জুলাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেছি। দল আমাকে এ বারও প্রার্থী করেছিল। আমি মানুষের জন্য কাজ করেছি, তাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছি।’’

অভিষেকের মুখরক্ষা করেছেন হসিনুদ্দিনও। কলাগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের ১২ নম্বর আসনে এ বছর তাঁকে প্রার্থী করেছিল তৃণমূল। তিনি ২১ ভোটে জয়লাভ করেছেন। হসিনুদ্দিনের প্রাপ্ত ভোট ২৩০। তাঁর বিরুদ্ধে কংগ্রেস প্রার্থী ছিলেন আবদুল জব্বর মল্লিক। তবে গণনার দিনই হসিনুদ্দিনের এই প্রতিপক্ষকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ভোটের দিন কলাগ্রাম এলাকায় গোলমাল এবং সংঘর্ষে বেশ কয়েক জন আহত হয়েছিলেন। সেই ঘটনায় অভিযুক্ত ছিলেন জব্বর। মঙ্গলবার তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। তার পরেই ওই কেন্দ্রের ফল জানা গিয়েছে। জব্বরের প্রাপ্ত ভোট ২০৯।

আদ্যোপান্ত ‘অরাজনৈতিক’ হসিনুদ্দিন এই প্রথম কোনও ভোটে দাঁড়িয়েছেন। অভিষেকের প্রস্তাবের পরেও নাকি তিনি প্রার্থী হতে ইতস্তত করেছিলেন। বলেছিলেন, ‘‘তৃণমূল প্রস্তাব দিয়েছে। আমি ভেবে দেখছি। আমি ওষুধের দোকানে কাজ করি। এই কাজটিই করতে চাই।’’ তবে একই সঙ্গে তাঁর সংযোজন ছিল, ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমি সম্মান করি। তাঁকে কৃতজ্ঞতা জানাই।’’ দলের সদস্য না হওয়া সত্ত্বেও ওষুধের দোকানের কর্মী হসিনুদ্দিনকে পঞ্চায়েতে টিকিট দিয়ে তৃণমূলের দরাজ মনোভাব তুলে ধরতে চেয়েছেন অভিষেক।

হসিনুদ্দিন এবং মঞ্জুর মধ্যে একটি বিশেষ ‘গুণ’ খুঁজে বার করেছিলেন অভিষেক। দাবি করেছিলেন, তাঁরা দু’জনেই ‘সৎ’। দু’জনেই কেন্দ্রের আবাস যোজনার টাকা ফিরিয়ে দিয়েছেন। তাই অভিষেকের ‘নতুন তৃণমূলের’ অবয়ব তাঁরাই। গত ৪ ফেব্রুয়ারি কেশপুরের মঞ্চে দাঁড়িয়ে হসিনুদ্দিনকে আলিঙ্গন করে অভিষেক বলেছিলেন, ‘‘এই ভদ্রলোকের নামে বাড়ি এসেছে। উনি প্রধানকে গিয়ে বলেছেন, আমি বাড়ির টাকা নেব না। উনি বলে এসেছিলেন, আমার এক ছেলে, এক মেয়ে। অনেক কষ্টে মেয়েকে পড়িয়ে বড় করেছি। ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় দুটো ঘরের ছোট বাড়িও যদি বানাই, বাড়তি আরও ৩ লাখ টাকা খরচ হবে। তা হলে আমি মেয়ের বিয়ে দিতে পারব না। এই হসিনুদ্দিনবাবুর মতো লোকেরাই নতুন তৃণমূলের মুখ। শুধু পশ্চিম মেদিনীপুর নয়, এটা সমগ্র বাংলার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।’’ হসিনুদ্দিনের কন্যার বিয়ের দায়িত্ব নেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন অভিষেক।

আবাসের টাকা ফেরান মঞ্জুও। তাঁর শাশুড়ির নামে আবাস যোজনার ঘর বরাদ্দ হয়েছিল। প্রকাশ্য সভামঞ্চে মঞ্জুদের সাধারণ টালির বাড়ির ছবি দেখিয়ে অভিষেক বলেন, ‘‘যাঁরা বলে, তৃণমূলের বুথ সভাপতি, পঞ্চায়েত সদস্য ফুলেফেঁপে উঠেছে, তাঁদের জানাই, মঞ্জুদেবীর শাশুড়ির নামে আবাসের ঘর বরাদ্দ হয়েছিল। কিন্তু উনি প্রধানকে বলেছেন, উনি ওই ঘর নিতে চান না। কারণ, তিনি পঞ্চায়েত সদস্য এবং তাঁর স্বামী বুথ সভাপতি।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy