৫৫ দিন পর সন্দেশখালির শাহজাহান শেখকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
৫৫ দিন ‘নিখোঁজ’ থাকার পর অবশেষে গ্রেফতার হয়েছেন সন্দেশখালির নেতা শাহজাহান শেখ। বুধবার রাতে মিনাখাঁর বামনপুকুর এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সকালে তাঁকে নিয়ে হাজির করানো হয় বসিরহাট মহকুমা আদালতে। বিচারক তাঁকে ১০ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। যদিও পুলিশ শাহজাহানকে ১৪ দিন নিজেদের হেফাজতে চেয়েছিল। বসিরহাট থেকে এর পরেই শাহজাহানকে সোজা কলকাতার ভবানী ভবনে নিয়ে আসা হয়। মামলার তদন্তভার যায় রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ সিআইডির হাতে। আপাতত আগামী ১০ দিন তাই ভবানী ভবনই শাহজাহানের ঠিকানা।
গ্রেফতারের পরেই সন্দেশখালির শাহজাহানকে ‘ঝেড়ে ফেলেছে’ রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। তাঁকে দল থেকে ছ’বছরের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠক করে সে কথা জানিয়েছে তৃণমূল। এর আগে সন্দেশখালির অন্য অভিযুক্ত উত্তম সর্দারের ক্ষেত্রেও একই পদক্ষেপ করা হয়েছিল।
শাহজাহানকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু দিন ধরে রাজ্য রাজনীতির শিরোনামে সন্দেশখালি। টানা জোরালো হয়েছে শাসক-বিরোধী বিক্ষোভ। পথে নেমেছেন গ্রামের মহিলারা। শাহজাহান, উত্তম, শিবপ্রসাদ হাজরা-সহ স্থানীয় নেতাদের গ্রেফতারির দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। অভিযোগ, সন্দেশখালি জুড়ে ‘জমিদারি’ কায়েম করেছেন শাসকদলের এই নেতারা। জোর করে জমি দখল, সেখানে মাছের ভেড়ি তৈরি করা, চাষের জমিতে নোনা জল ঢুকিয়ে দেওয়া, মহিলাদের শ্লীলতাহানি, অত্যাচার, মারধর, কাজ করিয়ে টাকা না দেওয়া— বিবিধ অভিযোগ শাহজাহানদের বিরুদ্ধে। লোকসভা ভোটের আগে এ সবই তৃণমূলকে খানিক অস্বস্তিতে ফেলে। বিরোধী দলগুলিও সন্দেশখালিকে হাতিয়ার করে ময়দানে নেমে পড়ে। তাই শাহজাহানের গ্রেফতারি এবং তাঁকে তড়িঘড়ি দল থেকে সাসপেন্ড করে বিরোধীদের ‘ঝাঁজ কমানোর চেষ্টা’ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
বিতর্কের সূত্রপাত গত ৫ জানুয়ারি। রেশন ‘দুর্নীতি’ মামলার তদন্তে সে দিন সন্দেশখালিতে শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশিতে গিয়েছিল ইডি। সেখান থেকে কেন্দ্রীয় আধিকারিকদের মার খেয়ে ফিরতে হয়। শাহজাহানের দেখা তাঁরা পাননি। ইডির অভিযোগ, বাড়ির ভিতর থেকে ফোন করে অনুগামীদের জড়ো করেন শাহজাহান। তাঁরাই ইডি আধিকারিকদের উপর চড়াও হন। সেই ফাঁকে শাহজাহান বাড়ির পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যান বলে আদালতে জানায় কেন্দ্রীয় সংস্থা। তার পর থেকে শাহজাহান ‘নিখোঁজ’ ছিলেন। পুলিশ, ইডি কেউ-ই তাঁর নাগাল পায়নি। বেশ কয়েক বার ইডি তাঁকে সল্টলেকের দফতরে তলবও করে। শাহজাহান প্রতি বারই হাজিরা এড়িয়েছেন। এর মধ্যেই অবশ্য আগাম জামিন চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন তিনি।
এর মধ্যেই শাহজাহানের গ্রেফতারি চেয়ে সন্দেশখালিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। সন্দেশখালির বিক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের অভিযোগ ছিল, শাহজাহান এলাকাতেই গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন। পুলিশ তাঁকে নিরাপত্তা দিচ্ছে। শাহজাহানের গ্রেফতারি নিয়ে যখন বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে, সেই সময় আনন্দবাজার অনলাইনে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, হাই কোর্টের নির্দেশের কারণেই পুলিশ শাহজাহানকে ধরতে পারছে না। আদালতের স্থগিতাদেশ না থাকলে রাজ্যের পুলিশ শাহজাহানকে গ্রেফতার করার ক্ষমতা রাখে। অভিষেকের এই মন্তব্যের পর কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম স্পষ্ট জানিয়ে দেন, শাহজাহানকে গ্রেফতারির বিষয়ে আদালত কোনও স্থগিতাদেশ দেয়নি। ইডির উপর হামলার ঘটনায় সিট গঠনের নির্দেশের উপরে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছিল। আদালত এ-ও জানিয়ে দেয়, পুলিশ, ইডি বা সিবিআই— যে কেউ শাহজাহানকে গ্রেফতার করতে পারবে।
এর পরেই বুধবার রাতে শাহজাহানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশের হেফাজতে শাহজাহান থাকলে রেশন মামলার তথ্য এবং নথি ‘নষ্ট’ হতে পারে বলে আদালতে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ইডি। এ বিষয়ে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে তারা। অন্য দিকে, শাহজাহানের জন্য তাঁর কোনও ‘সমবেদনা’ নেই বলে জানিয়েছেন হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানম।
জালে ‘বাঘ’
শাহজাহানকে সন্দেশখালির ‘বাঘ’ বলেই ব্যাখ্যা করছিলেন স্থানীয়দের একাংশ এবং বিরোধীরা। ৫৫ দিন পর অবশেষে সেই ‘বাঘ’ পুলিশের জালে ধরা পড়ল। মিনাখাঁ থেকে বসিরহাট হয়ে বৃহস্পতিবার তাঁকে নিয়ে আসা হয় কলকাতার ভবানী ভবনে। আপাতত আগামী ১০ দিন এটাই তাঁর ঠিকানা।
সিআইডি তদন্ত
পুলিশ শাহজাহানকে ১৪ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে চেয়েছিল। বসিরহাট মহকুমা আদালতের বিচারক তাঁকে ১০ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। শাহজাহানের মামলার তদন্তভার গিয়েছে রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ সিআইডির হাতে। এই সংক্রান্ত সব অভিযোগের তদন্ত করবে সিআইডি।
শাহজাহানের কনভয়ে গাড়ি!
বৃহস্পতিবার সকালে বসিরহাট আদালত থেকে শাহজাহানকে নিয়ে বেরিয়েছিল পুলিশের সাত-আটটি গাড়ির কনভয়। দু’ কিলোমিটার রাস্তা পেরোনোর পর আচমকাই সেই কনভয়ের মাঝে ঢুকে পড়ে অন্য একটি গাড়ি। পুলিশ সেই গাড়িকে সরানোর আগেই শাহজাহানকে নিয়ে ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যায় পুলিশের কনভয়ের তিনটি গাড়ি। শাহজাহানকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়। সংবাদমাধ্যমের গাড়িগুলির চোখের আড়ালে চলে যান শাহজাহান!
গ্রেফতারির পর গোপনীয়তা
শাহজাহান গ্রেফতার হওয়ার শুরু থেকেই চূড়ান্ত গোপনীয়তার পথ নিয়েছে পুলিশ। প্রথমত, গ্রেফতারির পর শাহজাহানকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়নি। ভোরবেলা সরাসরি বসিরহাটের কোর্ট লক আপে নিয়ে যায় পুলিশ। বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়া পর্যন্ত সেখানেই বসিয়ে রাখা হয়েছিল তাঁকে। সেই সঙ্গে গোটা এলাকাটিই ঘিরে রেখেছিল র্যাফ এবং পুলিশবাহিনী। শাহজাহানের শুনানি ১২টা থেকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা আচমকাই দু’ঘণ্টা এগিয়ে আনা হয়। কয়েক মিনিটের শুনানি শেষ হতেই শাহজাহানকে নিয়ে পুলিশের কনভয় রওনা দেয়।
কেন গোপনীয়তা?
শাহজাহানকে ঘিরে জনরোষের আশঙ্কা রয়েছে। তাঁকে সামলাতে বসিরহাট আদালতে যেমন বড় সংখ্যক পুলিশবাহিনী এবং র্যাফ মোতায়েন করা হয়েছিল, ঠিক ততটাই সাবধানতা অবলম্বন করার প্রয়োজন ছিল তাঁকে যেখানে রাখা হবে সেখানেও। সেই কারণেই প্রথম থেকে গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্রের দাবি।
কী বললেন এডিজি
শাহাজাহানকে গ্রেফতারের পর বৃহস্পতিবার সকালে মিনাখাঁ থানায় সাংবাদিক বৈঠক করেন এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার। তিনি জানান, শাহজাহানকে গ্রেফতারে আইনি বাধ্যবাধকতা ছিল পুলিশের। কিন্তু ইডির সেই বাধা ছিল না। তারা কেন গ্রেফতার করেনি, সেই প্রশ্ন তোলেন এডিজি। তিনি জানান, ১৪৭, ১৪৮, ১৪৯-সহ একাধিক ধারায় শাহজাহানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তিনি আর্জি জানান, “এমন কিছু করবেন না, যাতে এলাকায় বিভেদ সৃষ্টি হয়। জনপ্রতিনিধিদের কেউ কেউ পুলিশের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক, উস্কানিমূলক, প্ররোচনামূলক মন্তব্য করছেন। এটা আমাদের কাছে অত্যন্ত পীড়াদায়ক।” পুলিশ শাহজাহানকে গ্রেফতার করতে চাইছে না, এই তথ্যও ঠিক নয় বলে দাবি করেন তিনি।
আদালতে ইডি
১০ দিনের জন্য শাহজাহান রাজ্য পুলিশের হেফাজতে থাকলে রেশন ‘দুর্নীতি’ মামলার যে তদন্ত ইডি করছে, তার অনেক তথ্য এবং নথি ‘নষ্ট’ হতে পারে। সেই আশঙ্কা প্রকাশ করে বৃহস্পতিবার কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে কেন্দ্রীয় ওই তদন্তকারী সংস্থা। প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ইডির আইনজীবী ধীরাজ ত্রিবেদী।
দলের শাস্তি
শাহজাহানকে পুলিশ গ্রেফতার করার পর দল থেকে তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠক করে সে কথা জানান রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু। ছ’বছরের জন্য তাঁকে সাসপেন্ড করে তৃণমূল।
কী বললেন ব্রাত্য?
সাংবাদিক সম্মেলনে ব্রাত্য বলেন, ‘‘দলের কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে তৃণমূল যে পদক্ষেপ করে, এটাই তার প্রমাণ। যদিও তৃণমূলের কাছে এটা নতুন কিছু নয়। তৃণমূল আগেও এ কাজ করেছে। কিন্তু বিজেপি তো আর তৃণমূল নয়! আমরা প্রধানমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ করছি, শুভেন্দু অধিকারী, হিমন্ত বিশ্বশর্মা বা নারায়ণ রাণেকে সাসপেন্ড করে দেখান উনি! মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী, ব্রিজভূষণ বা অজয় মিশ্র টেনির ব্যাপারে কী পদক্ষেপ করা হয়েছে?’’
শাহজাহানের পাশে উদয়ন?
গ্রেফতারির পর শাহজাহানকে সাসপেন্ড করেছে তৃণমূল। তার মাঝেই রাজ্যের মন্ত্রী উদয়ন গুহ দাবি করেছেন, শাহজাহানকে ফাঁসানো হয়েছে! উদয়নের মন্তব্য, ‘‘শাহজাহান শেখকে কায়দা করে ফাঁসানো হয়েছে। ইডির গায়ে হাত উঠেছে তো! এত যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, কই সে সব অভিযোগ তো আগে কখনও শোনা যায়নি।’’ মন্ত্রীর সংযোজন, ‘‘শাহজাহানের বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ তোলা হয়েছে, সেগুলোও কেমন গুলিয়ে যায়! আর পিঠে খাওয়ার শখ যে রাত ১২টায় হয়, এটা আমার জানা ছিল না।’’
৩৪টি ধারায় মামলা
শাহজাহানের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির মোট ৩৪টি ধারায় মামলা করা হয়েছে। তার মধ্যে খুনের চেষ্টা, সরকারি আধিকারিকের কাজে বাধা দেওয়া, সরকারি আধিকারিকের উপর হামলা, ডাকাতি, জোর করে আটকে রাখা, আঘাত করা, প্ররোচনা দেওয়ার মতো অপরাধের ধারা রয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ধারা জামিন অযোগ্য।
আদালতে কী বলল পুলিশ
আদালতে জমা দেওয়া পুলিশের নথিতে শাহজাহানকে এলাকার ‘অত্যন্ত প্রভাবশালী’ ব্যক্তি বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখানে পুলিশ বলেছে যে, শাহজাহানকে জামিন দেওয়া হলে সাক্ষীদের ভয় দেখানোর পাশাপাশি নিজেও গা ঢাকা দিতে পারেন। শুধু ইডি আধিকারিকদের কাজে বাধা দেওয়াই নয়, কর্তব্যরত ইডি আধিকারিকদের যে ভাবে নৃশংস ভাবে নিগ্রহ এবং লুটপাট করা হয়েছে, তারও ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসাবে শাহজাহানের নাম জানিয়েছে পুলিশ। তাদের দাবি, শাহজাহান পুলিশকে আশ্বস্ত করেছেন যে, তিনি লুটের মাল উদ্ধার করতে পুলিশকে সহযোগিতা করবেন। এ ছাড়াও, শাহজাহানকে এখনই জামিনে মুক্তি দিলে সরাসরি তার প্রভাব পড়তে পারে ইতিমধ্যেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ থাকা সন্দেশখালি এবং ন্যাজাট থানা এলাকায়। তাঁর জামিনে মুক্তি এলাকায় হিংসার বাতাবরণ তৈরি করতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে পুলিশের নথিতে।
গ্রেফতার শাহজাহান-সঙ্গী
শাহজাহানের-ঘনিষ্ঠ তথা সন্দেশখালিকাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত আমির গাজিকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার রাতে ভিন্রাজ্য থেকে তাঁকে গ্রেফতার করেছে বসিরহাট থানার পুলিশ। ওড়িশার রৌরকেল্লায় ছিলেন তিনি। তাঁকে বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক তাঁকে পাঁচ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
কী বললেন রাজ্যপাল
শাহজাহানের গ্রেফতারির ঘটনাকে ‘সুড়ঙ্গের শেষে আলো’ বলে বর্ণনা করেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘‘আমি বলেছিলাম সুড়ঙ্গের শেষে আলো থাকবে। এটাই গণতন্ত্র। আমরা অপেক্ষা করেছিলাম। সেই পালা শেষ হয়ে গিয়েছে। এই ঘটনা সকলের কাছে একটি শিক্ষা। এ বার আসুন, আশা করি বাংলায় আইনানুগতার একটি নতুন ভোর ফিরে আসবে। আমি আনন্দিত যে ভাল কিছু ঘটছে।’’
সন্দেশখালিতে উল্লাস
শাহজাহানের গ্রেফতারির খবর পেয়ে উৎসবে মেতে ওঠেন সন্দেশখালির বাসিন্দাদের একাংশ। একে অন্যকে মিষ্টিমুখ করান মহিলারা। লাল আবির ওড়ে আকাশে। অনেক মহিলাকে শঙ্খধ্বনি এবং উলুধ্বনিও দিতে দেখা যায়।
‘সৌজন্যে অভিষেক’!
শাহজাহানের গ্রেফতারির কৃতিত্ব পরোক্ষে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেই দিয়েছে শাসকদল। বৃহস্পতিবার সকালে নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে তৃণমূলের অন্যতম মুখপাত্র তথা রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ লেখেন, “আদালতের বাধা ছিল, পুলিশ কাজ করতে পারেনি।” তার পরেই তিনি লেখেন “অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৌজন্যে আদালত বাধা সরিয়েছে। পুলিশ যা করার করেছে।”
১৪ দিনের ব্যবধানে মমতা
শাহজাহান প্রসঙ্গে ১৪ দিনের ব্যবধানে দু’রকম মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বিধানসভায় বাজেট অধিবেশনের বক্তৃতায় মমতা বলেছিলেন, ‘‘সন্দেশখালিতে শাহজাহানকে ‘টার্গেট’ করে ইডি ঢুকল। সেই নিয়ে গোলমাল করে সংখ্যালঘু এবং আদিবাসীদের মধ্যে ঝামেলা লাগানো হচ্ছে। ওখানে আরএসএসের বাসা রয়েছে। বহিরাগতরা গোলমাল পাকাচ্ছে।’’ আবার বুধবার খাতড়ার সরকারি সভা থেকে মমতা বলেন, ‘‘আমি জ্ঞানত কোনও অন্যায়কে সাপোর্ট (সমর্থন) করি না। অজান্তে কিছু হয়ে থাকলে সেটাকেও সমর্থন করি না।’’ নাম না-করলেও পারিপার্শ্ব, ঘটনাক্রম ইত্যাদি দেখে শাসক শিবিরের অনেকেই বুঝতে পেরেছিলেন, মমতা সন্দেশখালি এবং শাহজাহান নিয়েই বার্তা দিয়েছেন।
কী বললেন বিরোধীরা
শাহজাহানের গ্রেফতারির পর শাসকদলকে কটাক্ষ করেছেন বিরোধীরা। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘তৃণমূলের ছত্রছায়ায় থাকা, জমি লুটেরা শাহজাহানকে মানুষের চাপে গ্রেফতার করতে বাধ্য হয়েছে পুলিশ। অজস্র মামলা থাকলেও এত দিন পুলিশ তাকে স্যালুট করেছে।’’ বিজেপি অবশ্য শাহজাহানের গ্রেফতারিতে তাদের আন্দোলনের ‘জয়’ দেখছে। দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “শাহজাহান গ্রেফতার হয়েছে বিজেপির লাগাতার আন্দোলনের ফলে। সন্দেশখালির মা-বোনেদের লাগাতার আন্দোলনের ফলে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মানতে চাইছিলেন না, এই ধরনের কোনও ঘটনা ঘটেছে। আমরা বলেছিলাম তৃণমূল সরকারকে বাধ্য করব শাহজাহান শেখকে গ্রেফতার করতে।”
‘পিকচার আভি বাকি হ্যায়’
বৃহস্পতিবার সন্দেশখালিতে গিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শাহজাহানের গ্রেফতারির কথা জেনেই তিনি সেখানে যান। বিজেপি যে সন্দেশখালিকে কেন্দ্র করে আন্দোলন চালিয়ে যাবে, তা-ও বুঝিয়ে দেন শুভেন্দু। বলেন, ‘পিকচার আভি বাকি হ্যায়’। রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল আপাতত জেলায় জেলায় ‘শাহজাহান’-এর খোঁজে ব্যস্ত থাকবে। দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের কথায়, ‘‘একটি এলাকার শাহজাহান গ্রেফতার হয়েছেন। কিন্তু রাজ্যের সব জেলাতেই অনেক শাহজাহান রয়েছেন!’’ শুভেন্দু আবার শাহজাহানের গ্রেফতারিকে পুলিশের সঙ্গে ‘মিউচ্যুয়াল অ্যাডজাস্টমেন্ট’ বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশের হেফাজতে রাজকীয় ভাবে থাকবেন শাহজাহান। মোবাইল ফোনে এলাকা কন্ট্রোল করবেন। ফলে শাহজাহানের গ্রেফতারির পরেও বিজেপি যে সন্দেশখালি ‘ইস্যু’কে ছেড়ে দিচ্ছে না, সুকান্ত, শুভেন্দুদের কথা থেকেই তা স্পষ্ট।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy